অথবা, তুলনামূলক রাজনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে তুলনামূলক রাজনীতি। তুলনামূলক রাজনীতির পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত হওয়ায় তা রাজনৈতিক ব্যবস্থার গতিধারা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গতানুগতিক নীতি অনুসরণ না করে তুলনামূলক রাজনীতি রাষ্টবিজ্ঞানের দীর্ঘদিনের অবহেলিত বিষয়সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তাই তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
তুলনামূলক রাজনীতি পাঠের গুরুত্বঃ নিম্নে তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা করা হলঃ
১. বাস্তব সত্য অনুসন্ধানঃ তুলনামূলক রাজনীতি মানুষের রাজনৈতিক জীবন এবং তার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য উপাদানের বাস্তবভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে বাস্তব অবস্থাকে তুলে ধরতে সক্ষম। কাজেই বাস্তব সত্য অনুসন্ধানে তুলনামূলক রাজনীতি খুবই কার্যকর।
২. উন্নত জীবন নিশ্চিতকরণঃ প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হল তার নাগরিকদের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করার চেষ্টা করা। রাজনীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হচ্ছে তা জানা যায় এবং তদনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
৩. বিশ্বরাজনীতির সম্যক ধারণা প্রদানঃ তুলনামূলক রাজনীতি উন্নত, অনুন্নত, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য প্রভৃতি সকল অঞ্চলের রাজনীতির তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে। আর সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনীতির এ তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বরাজনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাই।
৪. রাজনীতিকে গতিশীল ও পরিপুষ্টকরণঃ আচরণবাদী আন্দোলনের প্রভাবে তুলনামূলক রাজনীতি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এ পদ্ধতি প্রাপ্ত তথ্যকে শ্রেণীবিন্যস্ত, যাচাই বাছাই এবং বিশ্লেষণ করে নতুন তত্ত্ব নির্মাণ করে থাকে। এভাবে এটা রাজনীতিকে সর্বদা গতিশীল ও পরিপুষ্ট করছে।
৫. সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ রাজনীতি বিশ্লেষণে তুলনামূলক রাজনীতিকে নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও অর্থনীতিসহ অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের সাহায্য নিতে হয়। আর এর ফলে সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বিভিন্ন উপাদান রাজনীতি বিশ্লেষণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়৷
৬. বিভিন্ন পরিবর্তনকে উপলব্ধিঃ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক জীবনে অপেক্ষাকৃত দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। এ পরিবর্তনকে সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে হলে উক্ত সমাজের সামাজিক স্তর, এলিট প্রভৃতি উপাদানসমূহের উপর গুরুত্ব প্রদান করা বাঞ্ছনীয়, যা তুলনামূলক রাজনীতি করে থাকে। একটি সমাজে পরিবর্তন ও উন্নয়নের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করতে তুলনামূলক রাজনীতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৭. রাজনীতির ভবিষ্যদ্বাণী প্রদানঃ রাজনীতির তুলনমূলক পদ্ধতির অনুশীলনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা যায়। এছাড়া বর্তমান অভিজ্ঞতার আলোকে রাজননৈতিক প্রবণতা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করাও সম্ভব হয়ে উঠে।
৮. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির পরিচয়ঃ তুলনামূলক রাজনীতিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কলাকৌশল প্রয়োগ করা হয়। তাই এই পদ্ধতি অধ্যয়নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাথে পরিচয় ঘটে। আর বর্তমানের আধুনিক যুগের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ অতি জরুরি, যা তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়ন থেকে জানা যায়৷
উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধকালীন বিশ্বরাজনীতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে তুলনামূলক রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ছিল, সে প্রবণতা বর্তমান সময়েও লক্ষণীয়। কিন্তু কতিপয় ক্ষেত্রে সামান্য সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। এটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এক নতুন ও বিস্তৃত দিগন্ত উন্মোচিত করেছে, যা হাজার হাজার বছর যাবৎ অবহেলিত ও অনাবিষ্কৃত ছিল, তুলনামূলক রাজনীতি এর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে এবং রাজনীতির অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহ অধ্যয়ন করে রাজনীতিকে একদিকে গতানুগতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করেছে এবং অন্যদিকে বাস্তব সত্য উদ্ঘাটন করেছে।
0 মন্তব্যসমূহ