অথবা, নগদান বই কত প্রকার ও কি কি?
ভূমিকাঃ হিসাবের যে বইতে নগদ প্রাপ্তি ও নগদ প্রদান (এখানে নগদ বলতে নগদ ও ব্যাংক উভয়কে বুঝায়) সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে নগদান বই বলে। এ হিসাবের বইতে কোনো ধারে লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয় না। এ হিসাব বই এর ডেবিট পাশে প্রাপ্তি ও ক্রেডিট পাশে প্রদানসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়কাল শেষে এ বই দ্বারা নগদ ও ব্যাংকের জের পাওয়া যায়। নগদান বইতে কেবল নগদ সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয় বলে এটি একটি বিশেষ জাবেদা। নগদান বই জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ের কাজ করে বিধায় একে জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ই বলা হয়ে থাকে।
নগদান বইয়ের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Cash Book): সাধারণত তিন প্রকারের নগদান বই দেখা যায়। তবে যৌথ মূলধনী কারবারে নগদান বহি সংরক্ষণের পাশাপাশি ছোট ছোট খরচসমূহ আলাদা বহিতে লিপিবদ্ধ করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সম্প্রতি নগদান বইকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
১. এক ঘরা নগদান বই (Single column cash book)
২. দুই ঘরা নগদান বই (Double column cash book)
৩. তিন ঘরা নগদান বই (Triple column cash book)
৪. খুচরা নগদান বই (Petty cash book)
১. এক ঘরা নগদান বইঃ যে নগদান বইতে ডেবিট ও ক্রেডিট উভয় পাশে একটি মাত্র টাকার ঘর থাকে তাকে একঘরা নগদান বই বলে। সাধারণত যেসব প্রতিষ্ঠান শুধু নগদে লেনদেন করে থাকে তারা একঘরা নগদান বই ব্যবহার করে থাকে। এ বইয়ের ডেবিট দিকে নগদ প্রাপ্তি ও ক্রেডিট দিকে নগদ প্রদান লিপিবদ্ধ করা হয়।
উদাহরণঃ নিচের লেনদেনগুলো একঘরা নগদান বইতে লিপিবদ্ধ কর।
সমাধানঃ
২. দুই ঘরা নগদান বইঃ যে নগদান বহির ডেবিট ও ক্রেডিট উভয়দিকে দুটো করে টাকার ঘর থাকে যার একটি নগদ ও অন্যটি ব্যাংক, তাকে দুই ঘরা নগদান বহি বলে। এধরনের নগদান বহিতে নগদ ও ব্যাংকের হিসাব এক সাথে আলাদ কলামে রাখা হয় এবং একই সাথে নগদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স এর পরিমাণ জানা যায়। দুই ঘরা নগদান বইতে দুটি হিসাব জড়িত থাকে। যার একটি নগদান হিসাব ও অন্যটি ব্যাংক হিসাব।
দুঘরা নগদান বইয়ের নমুনাঃ
বিপরীত দাখিলা (Contra Entry): দুঘরা নগদান বই এর মাধ্যমে একই সাথে দুটি হিসাব সংরক্ষিত হয়। এর একটি নগদান হিসাব এবং অপরটি ব্যাংক হিসাব। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে মাঝে-মধ্যে এমন কিছু লেনদেন সংঘটিত হয় যা একই সাথে দুটি হিসাবকে প্রভাবিত করে। যেমনঃ অফিসের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে নগদ ২,০০০ টাকা উত্তোলন করা হলো কিংবা ব্যাংকে জমা প্রদান করা হলো ৫,০০০ টাকা। এ লেনদেনগুলো দ্বারা একই সাথে নগদ ও ব্যাংকের টাকা একই সাথে হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটায়। যে লেনদেনের দ্বারা নগদান বইয়ের ডেবিট পাশে নগদ ও ক্রেডিট পাশে ব্যাংক কিংবা ডেবিট পাশে ব্যাংক ও ক্রেডিট পাশে নগদানকে প্রভাবিত করে তাকে কন্ট্রা-এন্ট্রি বা বিপরীত দাখিলা বলে।
উল্টো দাখিলা (Reverse Entry): যেসব লেনদেন দ্বারা ডেবিট পাশে নগদ একই সাথে ক্রেডিট পাশে নগদ কিংবা ডেবিট পাশে ব্যাংক ও ক্রেডিট পাশে ব্যাংক হিসাবকে প্রভাবিত করে তাকে সেগুলোকে উল্টো দাখিলা বলে। যেমনঃ করিমের নিকট থেকে ৫,০০০ টাকা নগদ পেয়ে কামালকে প্রদান করা হলো। এক্ষেত্রে ডেবিট পাশে নগদ কলামে অন্যদিকে ক্রেডিট পাশে নগদ কলামে দেখাতে হয়।
৩. তিনঘরা নগদান বইঃ যে নগদান বহির ডেবিট ও ক্রেডিট উভয়দিকে তিনটি করে টাকার ঘর থাকে, তাকে তিন ঘরা নগদান বহি বলে। এরূপ নগদান বহিতে নগদ, ব্যাংক ও বাট্টা লেখার জন্য উভয়দিকে তিনটি করে টাকার ঘর থাকে। তিন ঘরা নগদান বইতে তিনটি টাকার ঘর থাকলেও চারটি হিসাব জড়িত থাকে। নগদ, ব্যাংক, বাট্টা প্রাপ্তি ও বাট্টা প্রদান। নগদ প্রাপ্তি, ব্যাংকের মাধ্যমে প্রাপ্তি ও বাট্টা প্রদান নগদান বইরে ডেবিট পাশে বসে। অন্যদিকে নগদ প্রদান, ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান ও বাট্টা প্রাপ্তি নগদান বইয়ের ক্রেডিট পাশে বসে।
তিন ঘরা নগদান বইয়ের নমুনাঃ
৪. খুচরা নগদান বইঃ অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে প্রচুর সংখ্যক নগদ লেনদেন সংঘটিত হয়। এদের মধ্যে কিছু নগদ লেনদেন থাকে যা বড় অঙ্কের এবং কিছু লেনদেন থাকে খুব ছোট অঙ্কের। তাই বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছোট অঙ্কের নগদ লেনদেনগুলো সম্পাদন ও হিসাবভুক্ত করার জন্য প্রধান ক্যাশিয়ারের পাশাপাশি একজন খুচরা ক্যাশিয়ার নিয়োগ করা হয়। তিনি মাসের শুরুতে প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট থেকে অগ্রিম কিছু টাকা গ্রহণ করেন এবং তা থেকে সারা মাস খুচরা খরচগুলো নির্বাহ করে থাকেন। মাসের শেষে খরচের একটি হিসাব প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট উপস্থাপন করেন। এ হিসাবটিই হলো মূলত খুচরা নগদান বই। এতে খুচরা খরচগুলো সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা ও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। অন্যদিকে প্রধান ক্যাশিয়ারের কাজের ঝামেলা অনেকাংশে হ্রাস পায়।
খুচরা নগদান বইয়ের নমুনাঃ
0 মন্তব্যসমূহ