পারিভাষিক শব্দ বলতে কী বুঝ? পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর


প্রশ্নঃ পারিভাষিক শব্দ বলতে কী বুঝ? পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ পৃথিবীর সব ভাষায়ই অপূর্ণতা রয়েছে। কোনো ভাষাই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষা কোনো না কোনোভাবে অন্যভাষা থেকে উপাদান গ্রহণ করে সমৃদ্ধ হয়। বাংলা ভাষা একটি গতিশীল ও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে নানান ভাষার শব্দ গ্রহণের মাধ্যমে এর শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। অন্যভাষা থেকে আগত শব্দাবলির ভাবানুবাদমূলক প্রতিশব্দই পরিভাষা। নব আবিষ্কৃত জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়াবলির শব্দ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি সাধনে পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা সীমাহীন।

পারিভাষিক শব্দের সংজ্ঞাঃ 
১. ভাষা শব্দটির পূর্বে 'পরি' উপসর্গযোগে ‘পরিভাষা' শব্দটি গঠিত। এর আক্ষরিক অর্থ বিশেষ ভাষা। অর্থাৎ পারিভাষিক শব্দের অর্থ হলো— কোনো ভাষার মধ্যে বিশেষ অর্থে ব্যবহারযোগ্য শব্দ।

২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, “বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক প্রতিশব্দকে পারিভাষিক শব্দ বলে।” (বাংলা ভাষার পরিচয়)

৩. রাজশেখর বসু বলেন, “অভিধানে পরিভাষা অর্থ সংক্ষেপার্থ শব্দ। অর্থাৎ যে শব্দের দ্বারা সংক্ষেপে কোনো বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায়, তা পরিভাষা।”

৪. ড. হায়াৎ মাহমুদ বলেন, “মূল শব্দের মৌলিক অর্থ ও ভাবের সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে এক ভাষার শব্দকে অন্য ভাষায় রূপান্তর করে যে রূপ দান করা হয়, তাকেই পরিভাষা বলে। যেমন— Editor (সম্পাদক), File (নথি), Report (প্রতিবেদন) ইত্যাদি।”

পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তাঃ 

যে কোনো ভাষার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পরিভাষার ভূমিকা অপরিসীম। ভিন্ন ভাষার জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানাবিধ বিষয়াবলিকে সহজ ও বোধগম্যরূপে নিজ ভাষায় রূপান্তরিত করে নব জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়া সম্ভব পারিভাষিক শব্দের মাধ্যমেই। নিম্নে পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো-

১. জ্ঞান-বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি যথাযথ অনুবাদ করতে হলে অবশ্যই পরিভাষা ব্যবহার করতে হবে। কেননা উল্লিখিত বিষয়ে সামগ্রিক ব্যাপ্তি বুঝানোর জন্য কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাষায় প্রয়োজনীয় শব্দ নাও থাকতে পারে।

২. পরিভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাপর ভাষার শব্দভাণ্ডারের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। 

৩. অনুবাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যথাযথ শব্দের দুষ্প্রাপ্যতা। সুতরাং এ সমস্যা সমাধানে পরিভাষাই হচ্ছে একমাত্র সহায়ক উপাদান।

৪. পরিভাষার মাধ্যমে ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।

৫. পরিভাষার ব্যবহারে ভাষার গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ভাষার সৌন্দর্য ও শ্রুতিমধুরতা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

উপসংহারঃ নব আবিষ্কৃত জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে পরিচিতি লাভ, ভাষার গতিশীলতা আনয়ন এবং শব্দভাণ্ডারকে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত করতে পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজন অত্যধিক। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক