রচনা লিখঃ শান্তির ধর্ম ইসলাম


রচনা লিখঃ শান্তির ধর্ম ইসলাম

উপস্থাপনাঃ "Islam is the complete code of life." মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই যা ইসলামে নেই। মানবজাতির সার্বিক কল্যাণের জন্যই ইসলামের অবতারণা। সাগরের যেমন উদারতা, পাহাড়ের যে ঔদার্য, বৃক্ষের যে বিশালতা— ইসলাম মানবতার জন্য ঠিক তেমনি। তাইতো কবি নজরুলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে-

“ইসলাম সে তো পরশ মানিক
তারে যে পেয়েছে খুঁজি 
পরশে তার সোনা হল
যারা আমরা তাদেরই বুঝি।”

ইসলামের পরিচয়ঃ 'ইসলাম' আরবি শব্দ। এটি ‘সলম' ধাতু থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর আভিধানিক অর্থ হলো আত্মসমর্পণ করা, মেনে নেয়া, আনুগত্য করা। আর পরিভাষায় ইসলাম হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বের প্রতি তার নাম ও গুণাবলি অনুযায়ী মৌখিক স্বীকৃতি দেয়া ও অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শরীয়তের আদেশ নিষেধসমূহ মেনে চলা।

পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাঃ বিশ্ববাসীর জন্য ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের এমন কোনো দিক ও বিভাগ নেই যেখানে ইসলামের দৃপ্ত ও সমাধানপূর্ণ পদচারণা নেই। তাই আল কুরআনে বলা হয়েছে, “ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত জীবনবিধান।” মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক তথা সকল দিকেই ইসলাম এক অতুলনীয় আদর্শ উপস্থাপন করেছে।

ইসলামে শোষণমুক্ত অর্থনীতিঃ মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো অর্থনীতি। ইসলাম ইনসাফভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধনী দরিদ্রের মাঝে সহাবস্থানের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তাই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন অধ্যাপক ইসলামী অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন- The Muslim economic system seems to have a great merit the western world should study it. Perhaps to adopt it in a whole or a part.

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামঃ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে ইসলাম সকলের জন্য মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি দিয়েছে। রাসূলে আকরাম (স)-এর বিদায় হজ্জের ভাষণই তার সুন্দর দলীল। অথচ আজ বিশ্বের প্রায় সর্বত্র মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। যেমন বসনিয়ায় নির্বিচারে গণহত্যা, ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামীদের ওপর নির্যাতন, আলজেরিয়ায় ইসলামের পক্ষে জনতার বিপুল রায় সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। মূলত ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত না থাকার কারণেই বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

ইসলাম ও সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসাঃ মহান আল্লাহর প্রতি প্রেম ও আনুগত্য থাকলেই সমগ্র সৃষ্টিকে ভালোবাসা যায় । ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- To love man is to love God, মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য সাধনার্থে সৃষ্টিকে ভালোবাসা ও তার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। এতেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে শান্তি ও কল্যাণের শাসন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন-

"চারদিকে সম্মুখ ছাড়ি কোথায় খুঁজিছ ঈশ্বর
জীবে প্রেম করে যেইজন
সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।"

ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকারঃ ইসলামের দৃষ্টিতে পাশাপাশি বসবাসকারী চল্লিশ বাড়ি পর্যন্ত জনগোষ্ঠীর সকলেই প্রতিবেশী। ইসলামী সমাজে একজন প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর আমানতস্বরূপ। বিপদাপদে সাহায্য করবে, অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা- শুশ্রূষা করবে, তার উপস্থিতি-অনুপস্থিতিতে কল্যাণ কামনা করবে- এটাই অপর ভাইয়ের আমনত। যদি একজন প্রতিবেশী এসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তাহলে সমাজ জীবনে অশান্তি থাকতে পারে না।

ইসলামে শান্তির ধারণাঃ ইসলাম অর্থ শান্তি- এটি একটি মৌলিক ও ব্যাপকভিত্তিক ধারণা। দ্বীন ইসলামের প্রকৃতির সাথে শান্তির ধারণা গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ভাই মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী রাসূলগণের মাধ্যমে পথহারা, শান্তিহারা মানবজাতিকে ইসলামের শান্তির ছায়াতলে আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসলাম মানেই শান্তিঃ ইসলাম হলো অনুপম শান্তি ও প্রেমের ধর্ম। ইসলাম অন্যকে ভালোবাসতে শেখায় এবং মানবপ্রীতি, সমাজপ্রীতি, স্বদেশপ্রীতি ও বিশ্বপ্রীতিতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে সমাজ থেকে সকল অশান্তি, অবজ্ঞা, ঘৃণা, হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানি দূরীভূত হয়।

অধিকারহারা মানুষের কল্যাণে ইসলামঃ ইসলাম মানুষকে উত্তমরূপে বাঁচার অধিকার দিয়েছে। মহানবী (স) যখন এ পৃথিবীর বুকে আগমন করেন তখন সাধারণ মানুষ ছিল নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও অধিকারহারা। এমনি এক সংকটময় মুহূর্তে মহানবী (স) মানুষের দুঃখ লাঘব ও বঞ্চিতদের অধিকার সংরক্ষণে উপস্থাপন করলেন ন্যায়নীতির এক আদর্শ ধর্ম ইসলাম।

বড়দের সম্মান ছোটদের স্নেহঃ ইসলাম বড়দের প্রতি সম্মান দেখাতে বলেছে। আর ছোটদের প্রতি স্নেহ করতে বলেছে। মহানবী (স) বলেছেন, যে বড়কে সম্মান এবং ছোটদের আদর-স্নেহ করে না সে আমার উম্মত নয়।

বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইসলামঃ ইসলাম বলেছে, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে— মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। এছাড়া ইসলাম সাম্যের নীতিতে বিশ্বাসী। ধনী, গরিব, রাজা, প্রজা, উঁচু নিচুর ভেদাভেদ ধূলিসাৎ করে ইসলামই সর্বপ্রথম মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধের ধারণা দিয়েছে। তাই ইসলামের এই ভ্রাতৃত্ববোধ লক্ষ্য করে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছে-

"ইসলামে নাই আশরাফ আতরাফ
এই ভেদজ্ঞান নিষ্ঠুর হাতে
কর মিসমার সাফ।"

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামঃ ইসলামই নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছে। ইসলাম বলেছে, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে সমাজে নারীর কোনো সম্মান ছিল না। নারী পণ্যের মতো বিক্রয় হতো, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করা হতো। আর সে সমাজেই রাসূল (স) সর্বপ্রথম নারীকে উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা ও যথাযথ অধিকার প্রদান করেছেন।

সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ইসলামঃ ইসলাম সাম্য ও ন্যায়ের ধর্ম। পরিপূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলাম সমাজে কল্যাণকর শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে বিচার অথবা আপসরফা কর তখন ন্যায়ের সাথে কর।”

উপসংহারঃ ইসলাম মানুষের সার্বিক কল্যাণের ধর্ম। মানব কল্যাণের যতগুলো বাস্তব দিক আছে সবগুলোই ইসলামে উপস্থিত। তাই সেই কল্যাণ ও সাফল্যের প্রত্যাশা ব্যক্ত করতেই মন থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসে-

"এই ধরাতে আসবে সুদিন বাজবে ধরা নব সাজে
এই ধরাতে কায়েম হবে ফের খোদার বিধান এ সমাজে 
ঘুচবে সেদিন দুঃখ বেদনা
আসবে শান্তির জোয়ার।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক