রচনা লিখঃ ইসলামে নারীর মর্যাদা


রচনা লিখঃ ইসলামে নারীর মর্যাদা
অথবা, ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার 

উপস্থাপনাঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন-

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।

মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এ মানবজাতিকে নারী পুরুষ দুটি সত্তায় সৃষ্টি করা হয়েছে। মূলত নারী পুরুষকে একে অন্যের সহযোগী হিসেবে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, 'তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাকস্বরূপ।'

ইসলামে নারীর মর্যাদাঃ

কন্যা হিসেবেঃ ইসলাম পুত্রের তুলনায় কন্যাকে কোনো অংশে খাটো করে দেখেনি। মহানবী (স) বলেছেন, “যাকে কন্যা সন্তান দেয়া হলো আর সে তাদের সাথে সদাচরণ করল, তার মেয়েরা পিতার বা সে ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির পাথেয় হবে।” এ হাদীসের মাধ্যমে ইসলামে নারীর মর্যাদা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

স্ত্রী হিসেবেঃ স্ত্রী হিসেবেও ইসলাম নারীকে যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করেছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে— “তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ কর।” রাসূল (স) বলেছেন, “নারীর ওপর যেমনি পুরুষের অধিকার রয়েছে, তেমনি নারীরও পুরুষের ওপর অধিকার রয়েছে।”

মাতা হিসেবেঃ মাতা হিসেবে ইসলাম নারীকে সর্বশ্রেষ্ঠ' সম্মান প্রদান করেছে। জনৈক সাহাবী কর্তৃক সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে রাসূল (স) প্রথম তিন বার বলেছিলেন মায়ের কথা। চতুর্থ বার বলেছেন পিতার কথা৷ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ইসলাম মাতাকে পিতা অপেক্ষা তিন গুণ বেশি মর্যাদা প্রদান করেছে। রাসূল (স) বলেছেন, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।

নিরাপত্তা বিধানঃ ইসলামপূর্ব জাহেলিয়া যুগে নারীদের কোনো সামাজিক মর্যাদা এবং নিরাপত্তা ছিল না। ইসলাম এসে তাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে, জীবন হরণ করা তো দূরের কথা, তাদের শরীরে সামান্যতম আঘাত করতেও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, তুমি স্ত্রীর মুখমণ্ডলের উপর আঘাত করো না। তাকে অশ্লীল গালিগালাজ করো না এবং ঘরে ব্যতীত অন্য কোথাও তাকে পৃথক করে রেখো না।

বাইরে গমনঃ ইসলাম নারীদেরকে গৃহে অবস্থান করতে বলেছে সত্য, তবে প্রয়োজনে পর্দা করে সংযত হয়ে বাইরে যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছে। সুতরাং পর্দাহীন ও খুব সেজেগুজে বাইরে যাওয়া উচিত নয়। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, আর তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান করবে। পূর্বের জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদের সাজিয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করবে না।

যুদ্ধে অংশগ্রহণঃ প্রয়োজনের তাগিদে ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীগণ ধর্মযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতে পারবে। যেমন- উহুদের যুদ্ধে বহু মুসলমান নারী যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সেবাযত্ন করেছেন।

সম্পত্তির অধিকারঃ ইসলামপূর্ব যুগে নারীদেরকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো, কিন্তু ইসলামী শরীয়তে নারীদের যথাযোগ্য মর্যাদাসহ তাদের পৈতৃক ও স্বামীর সম্পত্তিতে অংশ নির্ধারিত হয়েছে।

শিক্ষার অধিকারঃ ইসলাম নারীকে শিক্ষার অধিকার দিয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের জন্যও বিদ্যা শিক্ষা ফরয করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স) বলেছেন, মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরয।

চাকরির অধিকারঃ ইসলাম নারীকে অর্থনৈতিক প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে উপার্জন কর্মে নিয়োজিত হওয়ার অধিকারও প্রদান করেছে।

সংসারের তত্ত্বাবধানঃ ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ নারী পরস্পরের প্রতিযোগী নয়; বরং সহযোগী। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স) বলেছেন, স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী। (বুখারী ও মুসলিম)

মোহরানা প্রদানঃ জাহেলিয়া যুগে বিবাহের ব্যাপারে কোনো স্থায়ী বিধান না থাকায় নারীদের জীবন ছিল অনিশ্চিত। পরবর্তীতে ইসলাম পুরুষ কর্তৃক নারীকে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করার প্রথা প্রচলন করে তাদের মর্যাদাকে উন্নত করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করবে। যদি তারা সন্তুষ্ট চিত্তে মোহরের কিয়দংশ ছেড়ে দেয় তাহলে তোমরা তা সানন্দে ভোগ করতে পারবে।

উপসংহারঃ ইসলাম নারীকে বিভিন্নভাবে উন্নত মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছে। কিন্তু আজকে প্রগতিশীল অপশক্তি নারী মুক্তির নামে নারীকে আবার প্রাক ইসলাম যুগের সেই অমর্যাদাকর জীবনে ফিরিয়ে নেয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিধিবিধান মতো চললেই নারী তার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা ও সম্মান ফিরে পাবে এবং শান্তিজনক সমাজ বিনির্মাণ হবে৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক