রচনা লিখঃ ঈদুল ফিতর


রচনা লিখঃ ঈদুল ফিতর

উপস্থাপনাঃ মুসলমানদের ঈদ বা খুশির ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে ঈদুল ফিতর অন্যতম। ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে ঈদুল ফিতর অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়ে থাকে। কবির ভাষায়-

জীবনে যাদের হররোজ রোযা
ক্ষুধায় আসেনি নিদ
মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে আজ ঈদ।

নিম্নে ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্যসহ এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা উপস্থাপন করা হলো। 

ঈদুল ফিতরঃ মুসলমানরা দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর শুচিস্নাত হৃদয়ে ঈদুল ফিতর পালন করে থাকে। একমাস ধরে সিয়াম সাধনায় উত্তীর্ণ হয়ে এ আনন্দ যেন স্বতঃস্ফূর্ত ধারায় প্রবাহিত হয়।

‘ফিতর’ শব্দটি ‘ফিতরা' শব্দ থেকে এসেছে। গরিব দুঃখীকে খুশিতে শামিল করার ব্যবস্থাই ফিতরা । ঈদুল ফিতর অর্থ রোযা ভাঙার খুশি। রোযাদার মুসলমান নর-নারীকে ঈদের আনন্দে শরীক করার জন্য ইসলাম নির্ধারিত ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর সে অনাবিল আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটে আলোচ্য কবিতার মতো করে -

ঈদের আনন্দে মন নেচে ওঠে 
পথে পথে আজ হাঁকিব বন্ধু
ঈদ মোবারক। আসসালাম।

উদযাপনঃ
ক. এ দিনে ফজর নামায শেষে গোসল করে নতুন জামা কাপড় পরে মিষ্টান্ন দ্রব্য মুখে দিয়ে সবাই আনন্দের সাথে ঈদগাহে গমন করে। এরপর সবাই একত্রে নামায আদায় করে।

খ. সম্পদশালীরা যাকাত ও ফিতরা আদায় করে। সর্বত্র আনন্দ উচ্ছ্বাসের সাথে ঈদ উদযাপিত হয়। কবির ভাষায়-

সারাটি ধরা মাঝে বাঁশরি বাজিয়াছে, জেগেছে প্ৰাণে নব ছন্দ,
উতলা সমীরণে আনিছে ক্ষণে ক্ষণে বহিয়া নন্দন-গন্ধ।

ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টিঃ নামায শেষে ধনী-গরিব, ছোট বড় নির্বিশেষে সবাই একে অপরের সাথে বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করে। এতে প্রমাণিত হয় মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই। একে অন্যের অতি আপনজন। মানবতাবোধের এমন নযীর মুসলমানদের ছাড়া অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দেখা যায় না। তাই জনৈক ইংরেজ দার্শনিক মুসলমানদের এ ভ্রাতৃত্ব বন্ধন দেখে বলেছেন-

"No distance breaks the tie of Blood
Brothers and brothers are evermore."

ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ ঈদুল ফিতর মুসলমানদের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অনাবিল আনন্দের উৎসব। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের আগমন ঘটে। রোযার মাধ্যমে যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা লাভ হয়, তাই পূর্ণতা সাধনে যেন আমাদের মাঝে নেমে আসে ঈদুল ফিতর। আনন্দঘন এ ঈদ আমাদের মাঝে এনে দেয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এ ঈদ মূলত আমাদের মাঝে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের কল্যাণবার্তা নিয়ে আসে। এ উৎসব শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে মুসলমানদের কাছে বিবেচিত নয়; বরং এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য জাতীয় জীবন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সবাই একই ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে এক শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার স্পৃহা লাভ করে। তাইতো কবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন—

জগৎ জোড়া ভ্রাতৃত্ব বিশ্ব জোড়া ভাব
দেশে বিদেশে থাকবে নাকো সম্প্রীতির অভাব।

ঈদুল ফিতরের মহান শিক্ষাঃ শান্তির অনুপম বার্তাবাহী ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে এনে দেয় এক সুদৃঢ় ঐক্য। এ দিনে ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা, উঁচু-নীচু সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই প্রভুর উদ্দেশ্যে অবনত হয়। ফলে পরস্পরের মাঝে ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় হয়।

ঈদুল ফিতর এক অসীম প্রেরণাঃ ঈদুল ফিতর মুসলমানদের মাঝে অসীম প্রেরণা সৃষ্টি করে। এ দিনে প্রতিটি মুসলিম সত্তা নব উৎসাহ উদ্দীপনায় জেগে ওঠে। নবী করীম (স)-এর যুগের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ দিন মানুষ সকল ভেদাভেদ ভুলে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিল।

ইসলামের প্রসারঃ ইসলাম একটি সার্বজনীন ধর্ম। এ সার্বজনীনতার মূলে রয়েছে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী কৃষ্টি। ঈদুল ফিতর এর অন্যতম। বিধর্মীদের মনোরঞ্জনে এ ঈদ সুদূরপ্রসারী কল্যাণকামী ভূমিকা পালন করে। সুষ্ঠু নিয়মতান্ত্রিকতা, সুনির্ধারিত কার্যকলাপ, ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই ইসলামের বিজয় সম্ভব হয়েছে।

ঈদের তাৎপর্যঃ মুসলমানরা দিনে রাতে পাঁচ বার মসজিদে অথবা স্বগৃহে নামায আদায় করেন। আর ঈদ উপলক্ষে বছরে দু'বার ব্যাপকভাবে মিলিত হয়ে মুসলিম উম্মাহ এক অসীম প্রেরণা লাভ করে। ইসলাম ভ্রাতৃত্বের যে শিক্ষা দিয়েছে, ঈদের দিনে তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে।

ঈদের মূল বাণী ও আহ্বানঃ ঈদের মূল বাণী হলো সাম্য, ন্যায়, ত্যাগ ও কুরবানি। আমরা ঈদের দিন যেভাবে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করি, সেরূপ যদি সারা বছর করি, তাহলে সত্য সুন্দরের অনাবিল হাসিতে ভরে উঠবে গোটা বিশ্ব সমাজ।

উপসংহারঃ ইসলাম সকল মানুষকে ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়। ঈদের দিনে আমরা সে আদর্শের চর্চা করে থাকি কিন্তু এ আদর্শের কথা ভুলে কেবল আনন্দ কলরবে মত্ত হলে ঈদের উদ্দেশ্য ও শিক্ষা ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাই গানের ভাষায় বলা যায়-

ঈদের খুশি অপূর্ণ রয়ে যাবে ততদিন
খোদার হুকুমত হবে না কায়েম, 
কায়েম হবে না যতদিন৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক