উৎপত্তি অনুযায়ী বাংলাভাষার শব্দসমূহ কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার শব্দের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও


প্রশ্নঃ শব্দ কাকে বলে? উৎপত্তি বা উৎস অনুসারে বাংলা ভাষার পদসমূহকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ আলোচনা কর৷

অথবা, উৎপত্তি অনুযায়ী বাংলাভাষার শব্দসমূহ কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার শব্দের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।

উপস্থাপনাঃ মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য কথা বলে। এক বা একাধিক বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত হয় অর্থপূর্ণ একেকটি শব্দ। শব্দই হলো প্রতিটি ভাষার মৌলিক সম্পদ। নিম্নে শব্দ সম্পর্কিত আলোচনা প্রদত্ত হলো-

শব্দের সংজ্ঞাঃ মানুষের মুখনিঃসৃত এক বা একাধিক বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিই হলো শব্দ। যেমন- মা, ইহা, আমরা ইত্যাদি।

উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগঃ উৎস বা উৎপত্তিগত দিক বিচারে বাংলা শব্দগুলো পাঁচভাগে বিভক্ত। যেমন- ১. তৎসম শব্দ, ২.অর্ধতৎসম শব্দ, ৩. তদ্ভব শব্দ; ৪. দেশি শব্দ, ৫. বিদেশি শব্দ। নিম্নে প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞা উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-

১. তৎসম শব্দঃ তৎসম অর্থ তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান। যেসব সংস্কৃত শব্দ অপরিবর্তিত অবস্থায় বাংলা ভাষায় ব্যবহার হয়ে আসছে ঐ শব্দগুলোকে তৎসম শব্দ বলে। যেমন- সমুদ্র, চন্দ্ৰ, কৃষ্ণ ইত্যাদি। 

২. অর্ধতৎসম শব্দঃ যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে বিকৃত অবস্থায় বাংলা ভাষায় ব্যবহার হচ্ছে, তাদেরকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন- গৃহিণী থেকে গিন্নী, জ্যোৎস্না > জোছনা, প্রণাম > পেন্নাম ইত্যাদি।

তদ্ভব শব্দঃ যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত অবস্থায় বাংলা ভাষায় ব্যবহার হচ্ছে, ঐ শব্দগুলোকে তদ্ভব শব্দ বলে। যেমন- (সং) হস্ত > (প্রাঃ) হন্থ > (তদ্ভব) হাত; (সং) চন্দ্ৰ > (প্রাঃ) চন্দ > (তদ্ভব) চাঁদ (সং) পন্থা > (প্রাঃ) পন্থ (তদ্ভব) পথ ইত্যাদি।

২. দেশি শব্দঃ যেসব শব্দ এ দেশের আদিম অধিবাসী অনার্যদের ভাষা থেকে বাংলায় স্থান পেয়েছে সেগুলোকে দেশি শব্দ বলে। যেমন- ঢেঁকি, খোকা, ঢিল, চুলা ইত্যাদি।

৫. বিদেশি শব্দঃ যেসব শব্দ বিদেশি ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে সেগুলোকে বিদেশি শব্দ বলে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক কারণে বহু বিদেশি শব্দ এদেশে এসেছে। এতে বহু বিদেশি শব্দ বাংলায় মিশে গেছে যেমন- ইংরেজি, পর্তুগীজ, ফারসি, উর্দূ, আরবি ও চীনাসহ বিভিন্ন ভাষার বহু শব্দ এখন বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে। যেমন- নামায, অযু, চেয়ার, অফিস, দারোগা, আইন, আদালত, চা, আনারস ইত্যাদি।

উপসংহারঃ বস্তুত বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম একটি শব্দসমৃদ্ধ ভাষা। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার মিলন সরোবরের ভূমিকা পালন করে এ ভাষার শব্দ ভাণ্ডার সুশোভিত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক