রচনা লিখঃ রোযার তাৎপর্য


রচনা লিখঃ রোযার তাৎপর্য 
অথবা, সিয়াম সাধনা

উপস্থাপনাঃ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ- কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত-এর মধ্যে রোযা অন্যতম। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে প্রতিবছর আমাদের মাঝে আসে সিয়াম সাধনার মাস রমযান, যে মাসে আল্লাহ তায়ালা রোযা রাখা ফরয করেছেন। এ রোযার তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক। নিম্নে রোযার আভিধানিক ও পারিভাষিক পরিচয়সহ এর উদ্দেশ্য, তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন করা হলো।

রোযার আভিধানিক সংজ্ঞাঃ রোযা ফারসি শব্দ। আরবিতে এর প্রতিশব্দ ‘সাওম'। যার বহুবচন হচ্ছে সিয়াম। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, আত্মসংযম, কঠোর সাধনা করা ইত্যাদি।

রোযার পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়- সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তিসহ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার নামই রোযা।

রোযার উদ্দেশ্যঃ রোযার বিভিন্ন প্রকার উদ্দেশ্য রয়েছে। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

ক. তাকওয়া অর্জনঃ ইসলাম ধর্মে রোযার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-

يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون -

খ. ছয়টি রিপুকে দমনঃ রোযা মানুষের ছয়টি রিপুকে দমন করে। পূর্ণ একমাস প্রশিক্ষণ নিয়ে মুসলমানগণ পরবর্তী ১১ মাস চলার পাথেয় সঞ্চয় করে রোযার মাধ্যমে।

গ. ধৈর্যশীল হওয়াঃ রোযা মানুষকে ধৈর্যশীল ও সংযমী হতে শিক্ষা দেয়। 

ঘ. ত্যাগের মহিমাঃ রোযা মানুষকে ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে। 

রোযার তাৎপর্য ও গুরুত্বঃ রোযার তাৎপর্য অনেক। যেমন-

ক. ফরযে আইনঃ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোযা তৃতীয়। মহান আল্লাহ শুধু আমাদের ওপরই রোযার বিধান দেননি; বরং আমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিও রোযা ফরয করা হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, “রোযা তোমাদের ওপর ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর।” তাই রোযা পালন করা প্রত্যেকের ওপর ফরযে আইন।

খ. রোযা একমাত্র আল্লাহর জন্যঃ রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে, “রোযা আমার জন্য; আর আমিই তার প্রতিদান দেব।” অর্থাৎ রোযা আদায় করতে কোনো লৌকিকতা বা লোক দেখানো উদ্দেশ্য থাকে না, একমাত্র আল্লাহর ভালোবাসাতেই বান্দা রোযা রাখে। তাই আল্লাহ নিজেই রোযার প্রতিদান দেবেন।

গ. রোযা ঢালস্বরূপঃ যে ব্যক্তি রোযা রাখে, সে যাবতীয় অন্যায়, অনাচার ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। নিজেকে সে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি কুরিপু থেকে রক্ষা করে। তাই হাদীসে এসেছে, রোযা (আত্মরক্ষার) ঢালস্বরূপ।

ঘ. খোদাভীতি সৃষ্টিঃ রোযা আদায়ের মাধ্যমে মানব হৃদয়ে আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে, আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় বান্দা এসব থেকে বিরত থেকে রোযা পালন করে। আল্লাহকে ভয় করার নামই তাকওয়া বা খোদাভীতি। আর রোযার মাধ্যমে যে খোদাভীতি অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল, যেন তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পার।”

ঙ. গুনাহ মাফের মাধ্যমঃ রোযা আদায় করলে আল্লাহ তাঁর বান্দার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। রাসূল (স) ঘোষণা করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সাথে রোযা পালন করে, সে পূর্বে কৃত সকল গুনাহ মাফ করে নিল।”

চ. সমাজ গঠনে রোখাঃ রোযা এমন এক ইবাদত, যা পালন করার মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠন করা যায়। মানুষ যখন কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা, বিদ্বেষ, মিথ্যা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, গীবত, ঝগড়া-ফাসাদ, অশ্লীলতার চর্চা, অনাচার, ব্যভিচার ইত্যাদি অসৎ স্বভাব থেকে মুক্ত থাকে, তখন সমাজে সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধি বিরাজমান থাকে। গঠিত হয় আদর্শ সমাজ।

ছ. সাম্য ও সহানুভূতি সৃষ্টিতে রোযাঃ রোযাদার যখন উপোস করে তখন সে ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কষ্ট সম্পর্কে অবহিত হয়। ফলে ভিক্ষুক, এতিম, অসহায় উপবাসী ও অভাবীদের প্রতি রোযাদারের মনে সহানুভূতির সৃষ্টি হয়। তাই সাম্য ও সহানুভূতি সৃষ্টিতে রোযা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জ. আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণঃ রোযা পালনের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এতে সে আত্মসংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সময়ানুবর্তিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতার গুণ অর্জন করে।

ঝ. আল্লাহ প্রেমের শিক্ষাঃ রোযা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার প্রেম ও ভালোবাসারই নিদর্শন। এটা কোনো লোক দেখানো ইবাদত নয়। তাই মহান আল্লাহ বলেন “রোযা আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দেব।” রাসূল (স) ইরশাদ করেন, “রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মৃগনাভীর চেয়েও প্রিয়।”

ঞ. চরিত্র গঠনের হাতিয়ারঃ রোযা উত্তম চরিত্র গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রোযাদার ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায় ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়। ফলে সে ভালো চরিত্রবান হয়ে ওঠে।

উপসংহারঃ ইসলামে রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। কারণ রোযা শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে রাখা হয়। এতে লোক দেখানোর কোনো সুযোগ থাকে না। রোযা মানুষের মধ্য হতে পাপ পঙ্কিলতা দূর করে খাঁটি মুমিন হিসেবে জীবন গঠন করার অনুপম শিক্ষা দিয়ে থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক