প্রশাসনিক কেন্দ্রীকরণের সুবিধা ও অসুবিধা কি?


প্রশ্নঃ প্রশাসনিক কেন্দ্রীকরণের সুবিধা ও অসুবিধা কি? আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ সুষ্ঠু প্রশাসনিক সংস্থার প্রতিষ্ঠা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ক্ষমতার অবস্থান এবং হস্তান্তর দ্বারা বহুলাংশে প্রভাবিত হয়। প্রশাসনিক ক্ষমতা এককেন্দ্রিক বা বিকেন্দ্রিক উভয়ই হতে পারে। এ উভয়কেন্দ্রিক ক্ষমতা দ্বারা প্রশাসন দক্ষভাবে পরিচালিত হয়। তাই বলা যায়, প্রশাসনের কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ এতদুভয়ই বহু প্রচলিত কথা। 

প্রশাসনিক কেন্দ্রীকরণের সুবিধা ও অসুবিধা (Advantages and Disadvantages of Centralization): প্রশাসনের কেন্দ্রীকরণে সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই রয়েছে যা সর্বজন স্বীকৃত। নিচে প্রশাসন কেন্দ্রীকরণের উভয় দিক নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

(ক) কেন্দ্রীকরণের সুবিধাসমূহ ( Advantages of Centralization): প্রশাসনিক কেন্দ্রীকরণের সুবিধাসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

১। কার্য সম্পাদনের একরূপতাঃ কেন্দ্রের হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকার ফলে প্রতিষ্ঠানের সর্বত্র কার্য সম্পাদনে ঐক্য পরিলক্ষিত হয়। কেননা সে ক্ষেত্রে সকল বিভাগকে একই নির্দেশ মেনে চলতে হয় এবং একই কর্তৃপক্ষের তদারক ও তত্ত্বাবধানে কাজ করতে হয়, ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় না।

২। সংকটকালে দ্রুত সিদ্ধান্তঃ দেশের জরুরি অবস্থা বা সংকটকালে এটা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কোন বিভাগ, অন্য শাখা বা সংগঠনের সাথে পরামর্শ করার দরকার হয় না। সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কারও উপর নির্ভর করতে হলে অনেক বিলম্ব ঘটতে পারে।

৩। ব্যক্তি নেতৃত্বের সুবিধাঃ সংগঠনের জন্য ব্যক্তি নেতৃত্বের প্রয়োজন। একদল সুদক্ষ নেতার অধীনে কাজ যত ভালভাবে সম্পাদিত হওয়া সম্ভব তা আর কোন মাধ্যমে সম্ভব নয়। অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা অর্পিত হলে ক্ষমতার হয় অপচয় হবে, নতুবা এর অপব্যবহার ঘটে। কিন্তু কেন্দ্রীকরণের ফলে প্রতিষ্ঠান যোগ্য নেতার সুযোগ লাভ করে। শীর্ষ নির্বাহীদের অসাধারণ সামর্থ্যকে প্রয়োগের কারণে তত্ত্বাবধান কাজও যথাযথভাবে সম্ভব হয় এবং কাজেও অভিন্নতা আনা যায়।

৪। সংযোজন ও সংহতিঃ কেন্দ্রীকরণের ফলে সংস্থার বিভিন্ন বিভাগ ও উপরিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সংহতি বিধান অধিকতর সহজ হয়।

৫। ব্যক্তি নেতৃত্বের বিকাশঃ এটা ব্যক্তিগত নেতৃত্ব বিকাশেরও সুযোগ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ কেন্দ্রীকরণ ব্যক্তি নেতৃত্বের বিকাশ সাধন করে।

(খ) কেন্দ্রীকরণের অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Centralization): প্রশাসনের কেন্দ্রীয়করণের অসুবিধাসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

১। স্থানীয় চাহিদা উপেক্ষাঃ স্থানীয় চাহিদাকে উপেক্ষা করে কেন্দ্রীকরণ সংগঠনকে জটিল করে তোলে। স্থানীয় ব্যাপারে স্থানীয় নির্বাহীগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকারী না হলে জনগণকে তথাকার অনেক বেগ পেতে হয়। কিন্তু কেন্দ্রীকরণ স্থানীয় ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের হাতেই ন্যস্ত রাখে।

২। সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্বঃ প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত থাকলে দূরবর্তী শাখাসমূহের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হওয়া স্বাভাবিক। কেন্দ্রকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েই তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অগ্রসর হতে হয়। কাজেই এ পদ্ধতি কার্য সম্পাদনে বিলম্ব ঘটিয়ে থাকে যা অনেক সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে এবং আকস্মিক কোন সমস্যার জন্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয় বা অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

৩। স্বেচ্ছাচারিতাঃ সংস্থা, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীকরণের ফলে ব্যক্তিবিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষ স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শন করে থাকে। এতে অধীনস্থ কর্মচারীদের মনোবল এবং কাজের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায়, সংগঠনে বিদ্বেষ ভাব বিরাজ করে এবং কাজের প্রতি অধস্তন বা উদাসীন হয়ে পড়ে।

৪। দুর্বল নেতৃত্বঃ কেন্দ্রীকরণের ফলে কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহকের উপর কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে তাদের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের অনেক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া সম্ভব হয় না। এর পরিণতিস্বরূপ নানারূপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে যায় বা একসময় ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। এ ছাড়া কেন্দ্রে অযোগ্য নেতৃত্বের দরুন অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি শিথিল হয়ে পড়ে এবং দক্ষতা সঠিকভাবে অর্জন করা সম্ভব হয় না।

উপসংহারঃ প্রশাসনের ইতিহাসের সূচনালগ্নে শুধু কেন্দ্ৰীয় শাসনই প্রচলিত ছিল। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে বৃহৎ রাষ্ট্রের ধারণার পাশাপাশি এর প্রশাসন যন্ত্রও ব্যাপকতা লাভ করে আর তখনই দেখা দেয় বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা। তাছাড়া সুষ্ঠু ও মজবুত শাসনের স্বার্থে তা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠে। এমনকি শুধু রাষ্ট্রীয় প্রশাসনেই নয় পরবর্তীকালে বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা ও বৃহৎ যৌথ কারবারসমূহে প্রশাসন ও তার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। আর বর্তমানে প্রশাসন ও তার কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ লোক প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের অন্যতম৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক