রচনা লিখঃ ইসলাম ও মানবতাবোধ


রচনা লিখঃ ইসলাম ও মানবতাবোধ

উপস্থাপনাঃ Islam is the complete code of life. মানবজীবনের জন্য ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানব জীবনের এমন কোনো দিক নেই যার আলোচনা ইসলামে নেই। কবি বলেন-

ইসলাম সে তো পরশ মানিক
তারে যে পেয়েছে খুঁজি,
পরশে তার সোনা হল যারা, 
আমরা তাদেরই বুঝি।

ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদী শিক্ষা হলো, নৈতিক চরিত্র সংশোধন করে মানুষের মাঝে মানবতাবোধ সৃষ্টি করা। মৌলিক মানবীয় গুণাবলি বিকাশে ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জীবন চলার সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে ইসলাম। ইসলাম মানুষের অধিকার, দায়িত্ব কর্তব্য, নৈতিকতা ইত্যাদি নিশ্চিত করে।

ইসলামে সততাঃ ইসলামে সততা ও সত্যবাদিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সর্বদা সত্য কথা বলা, সৎ পথে চলার প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করেছে। মিথ্যা কথা বলা এবং অসৎ পথে চলার ফলস্বরূপ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (স) পৃথিবীর ইতিহাসে যে সততার উপমা পেশ করেছেন, তা একেবারেই বিরল। তার তুলনা তিনি নিজেই। তাই আইয়ামে জাহেলিয়াতেও তাকে আরববাসী ‘আল আমীন’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল।

অঙ্গীকার বা ওয়াদা রক্ষা করাঃ ইসলামে মানবতাবোধের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, অঙ্গীকার রক্ষা করা। মানব সমাজের মাঝে পারস্পরিক শৃঙ্খলা যাতে রক্ষা হয় সেজন্য অঙ্গীকারের ব্যাপারে কঠোর বিধান রেখেছে। ওয়াদা রক্ষা করার মাধ্যমে মানুষ পারস্পরিক আস্থা স্থাপনের মধ্য দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে পারে।

ইসলামে সাম্যনীতিঃ ইসলামেই সাম্যবাদের উপস্থাপনা ও বাস্তবায়ন বিদ্যমান। ইসলাম হাবশী গোলাম ও কুরাইশদের আলাদাভাবে দেখেনি; বরং বর্ণবৈষম্য বিলোপ করে মানবতাবোধের পরিচয় দিয়েছে ইসলাম।

সদাচার ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠাঃ ইসলামী সমাজব্যবস্থা বংশ, বর্ণ এবং ভৌগোলিক জাতীয়তার পরিবর্তে ইনসাফভিত্তিক আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। সমঅধিকারের ভিত্তিতে কোনো প্রকার বর্ণ-বৈষম্য ছাড়াই শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে ইসলামই অগ্রগণ্য। তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন-

ইসলামে নাই আশরাফ আতরাফ
এই ভেদ জ্ঞান নিষ্ঠুর হাতে কর মিসমার সাফ।

সত্যকে স্বাগত মিথ্যাকে পদানতঃ সত্য ও ন্যায়কে স্বাগত জানানো আর মিথ্যা অন্যায়কে পদানত করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ইসলামেই রয়েছে। সত্য কথা বলতে, সৎ হয়ে চলতে ইসলাম উৎসাহিত করেছে। কারণ সৎ জীবনযাপন করলে আপনা-আপনিই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

ন্যায়ের বিকাশ ও অন্যায়ের বিনাশঃ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলামী সমাজব্যবস্থা নিছক পুলিশের দায়িত্বই পালন করে না, শুধু আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও সীমান্ত রক্ষা তার কাজ নয়; বরং একটি আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র, সামাজিক সুবিচার, ন্যায়ের বিকাশ ও অন্যায়ের বিনাশ সাধনও করে থাকে । কারণ ন্যায়ের বিকাশ ও অন্যায়ের বিনাশ সাধন করতে না পারলে মানব সমাজে শান্তি নিশ্চিত হয় না।

ক্ষমা ও দুয়া প্রদর্শনঃ ইসলামী মানবতাবোধের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া, বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন এবং অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমা করা। যেমন- রাসূল (স)-এর ওপর একজন তায়েফবাসী বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করে তাকে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল, তখন তিনি তাদেরকে অভিশাপ দেননি; বরং বলেছিলেন, “প্রভু! এদের জ্ঞান দাও, এদের ক্ষমা কর।” এটা মানবতাবোধের এক বিরল দৃষ্টান্ত।

ইসলামে বিনয় ও নম্রতাঃ মানবতাবোধের ভূষণ বলা যায় বিনয় ও নম্রতাকে। বিনয় ও নম্রতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া মানবতাবোধের বিকাশ ঘটে না। ব্যক্তিত্ব প্রকাশেরও অন্যতম দিক হলো বিনয় এবং নম্রতা। আর বিনয়ের অর্থ হলো- আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের তুলনায় নিজেকে ছোট তুচ্ছ জ্ঞান করা। সকল প্রকার গর্ব অহংকার থেকে মুক্ত থেকে তদস্থলে বিনয় নম্রতা প্রদর্শন করার জন্য ইসলাম উৎসাহিত করেছে।

পরস্পর আমানতদারিঃ ইসলামী মানবতাবোধের একটি বিশেষ গুণ আমানতদারি। যিনি তাওহীদের আমানতদার হবেন তিনি অবশ্যই ইসলামের সকল মানবতাবোধের প্রতি যত্নশীল হবেন। এছাড়া অন্য মুসলিমের জানমালের হেফাযত, অন্য ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন ইত্যাদি আমানতদারিও রক্ষা করতে হবে।

ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপনঃ ইসলামই ঘোষণা করেছে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সহোদর ভাইয়ের মাঝে যেমন অনুপম সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বিরাজ করে অনুরূপভাবে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনও সুদৃঢ়। পৃথিবীতে এমন বিরল ধারা অন্য কোনো জাতির মাঝে লক্ষ্য করা যায় না। তুচ্ছ পার্থিব স্বার্থে তাদের মধ্যে কোনোরূপ হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ-বিবাদ নেই। এ সম্পর্কে ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

অন্যের বিপদে সাহায্য করাঃ আজকের বিশ্বের সর্বত্র দেখা যায় অসহায়, নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের আহাজারি। ইসলামী মানবতাবোধের দাবি হলো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তার সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহারঃ ইসলাম মানবতাবোধের বিকাশ সাধন করে। ইসলাম এমন এক জীবনবিধান যেখানে মানবতাবোধের সকল দিক গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। ইসলাম সাম্যের ধর্ম। এ সাম্যের ভিত্তিতে ইসলাম পৃথিবীর বুকে মানবতাবোধের সমাজ গড়তে সক্ষম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক