সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পর্ক আলোচনা কর


প্রশ্নঃ সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মধ্যে সম্পর্ক কীরূপ? আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ সমাজজীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ড যে সকল নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের সমষ্টিকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে। যে সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারণা যত বেশি উন্নত, সে সমাজ ও রাষ্ট্র তত বেশি উন্নত ও প্রগতিশীল। সুশাসনের সাথে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নীতিগতভাবে স্বীকার করা হয় যে, সকল মানুষ সমান। পৌরনীতি ও সুশাসনে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা এবং সকলকে সমানভাবে আত্মবিকাশের সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করাকে সাম্য বলে। 

সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধঃ সুশাসন যেমন গণতন্ত্রের প্রাণ, তেমনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও সুশাসনের প্রাণ। উভয়ের সম্পর্কের গভীরতা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

১. জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব আরোপঃ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। যে সরকার ব্যবস্থায় বা প্রশাসনে জবাবদিহিতার নীতি কার্যকর হয় এবং যে সরকার ও প্রশাসন যত বেশি স্বচ্ছ সেখানে তত বেশি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. দায়িত্বশীলতার নীতি কার্যকর হয়ঃ দায়িত্বশীলতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রাণ। গণতান্ত্রিক সরকার দায়িত্বশীল বলেই সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

৩. পরমতসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়ঃ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্যতম উপাদান হলো পরমতসহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পরমতসহিষ্ণু হতে সাহায্য করে বলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।

৪. পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করেঃ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জনগণের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করে। সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।

৫. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ঃ আইনের শাসন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্যতম উপাদান। আইনের শাসন না থাকলে একটি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়।

৬. মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করেঃ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এর ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবেশ তৈরি হয়।

৭. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষাঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সফলতার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। অপরদিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ব্যতীত সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথাও চিন্তা করা যায় না।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, সুশাসনের সাথে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পর্ক এজন্য খুবই নিবিড়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতন্ত্র সফল বা অর্থবহ হয়ে ওঠে না। তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো বিকশিত হয় না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক