সাধারণজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর


প্রশ্নঃ সাধারণজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর। 

সাধারণজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞের মধ্যে সম্পর্ক (Relation Between Generalist and Specialist): সাধারণজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ-এ দুই শ্রেণীর সম্পর্ক লোক প্রশাসনে একটি সমস্যা হিসেবে গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বস্তুত এ সমস্যা প্রশাসনিক কাজের দ্রুত বিশেষায়ণের ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে উদ্ভব হয়েছে। অ্যাপলেবি (Appleby)-র মতে, “সাধারণজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে পার্থক্য মৌলিক নয়, আপেক্ষিক।” ঊর্ধ্বতন প্রশাসকরাই সাধারণজ্ঞের ভূমিকা পালন করেন। নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা অগ্রণী। ফিফনার (Pfiffner)-এর মতে, “সাধারণজ্ঞের ভূমিকা অনেকাংশে রাজনৈতিক আর বিশেষজ্ঞের ভূমিকা কারিগরি বা কলাকৌশলসংক্রান্ত।”

পৃথিবীর সর্বত্রই প্রশাসনিক পদসোপানের ঊর্ধ্বতন পদগুলোর অধিকাংশ সাধারণজ্ঞগণণের দখলে রয়েছে। সাধারণজ্ঞগণ বিশেষজ্ঞগণকে প্রশাসনিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। বিশেষজ্ঞগণ দেশের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন্দ্রে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ খুব কমই লাভ করেন। বিশেষজ্ঞের আগমনকে সাধারণজ্ঞ তেমন সুনজরে দেখেন না। কারণ বিশেষজ্ঞদের জ্ঞানকে প্রশাসনিক মতামতের প্রাধান্যের ক্ষেত্রে সাধারণজ্ঞগণ বাধা বা প্রতিবন্ধক বলে মনে করেন। বিশেষ জ্ঞান ও যোগ্যতার অধিকারী বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বও কোন প্রশ্ন উত্থাপন করতে দ্বিধাবোধ করেন। এ সকল বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত অভিমত ও সমর্থনের ভিত্তিতে আধুনিক অগ্রসরমান সরকারগুলোর শক্তি ও অস্তিত্ব বহুলাংশে নির্ভরশীল।

সাধারণজ্ঞের যুক্তিসমূহ (Arguments of Generalist): সাধারণজ্ঞগণ বিশেষজ্ঞদের প্রতি বিভিন্ন কারণে বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। এ ক্ষেত্রে তারা কতকগুলো যুক্তির অবতারণা করেন। যুক্তিগুলো নিম্নরূপঃ 

প্রথমত, সাধারণজ্ঞগণ ধারণা পোষণ করেন যে, বিশেষজ্ঞগণ নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর উপর দক্ষতা বা বিশেষ জ্ঞান অর্জনের ফলে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন হয়ে পড়েন। যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন, সে বিষয়ের বাইরে অন্য কোন বিষয় সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই থাকে না এবং নিজের বিষয়ের প্রতিই তারা অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপঃ বৈজ্ঞানিক প্রকৌশলী, চিকিৎসক তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে যত উচ্চপদেই সমাসীন থাকুন না কেন, পেশাগত মানসিকতাকে ক্ষণিকের জন্যও তারা বিসর্জন দিতে পারেন না।

দ্বিতীয়ত, কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ কোন পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়, সে দিকটির কথা প্রথমে চিন্তা করেন। কিন্তু কি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে সে বিষয় সম্পর্কে তার চিন্তা খুব কম থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা কোন চিন্তাই করেন না। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্র বিশাল ও ব্যাপক। সেখানে কোন বিশেষ বিষয়ে উৎকর্ষতা তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। কারণ উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণ শুধুমাত্র কলাকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যাভিত্তিক নয়। এ সিদ্ধান্তের সাথে সমগ্র দেশের সমগ্র জনগণের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক বিষয় নিবিড়ভাবে জড়িত থাকে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে একজন সাধারণজ্ঞ রাজনীতিক তার বহুমুখী অভিজ্ঞতাকে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হিসেবে কার্যকর করে তুলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষেত্রে কতকগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য দৃষ্টিগোচর হয়। যেমনঃ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে অথবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে কোন উচ্চপদসম্পন্ন ডাক্তারদেরকেই পদায়ন করতে দেখা যায়। প্রকৃত অর্থে বিশেষ পেশাভিত্তিক এ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ যে প্রশাসক হিসেবেও যোগ্য ও সফল হবেন এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যে কোন পেশা থেকেই উচ্চমানের প্রশাসক বাছাই এবং নিয়োগ করা যায়। এর ফলে সংগঠনসমূহের প্রশাসনিক উৎকর্ষতা বাড়বেই।

তৃতীয়ত, বিশেষ কোন বিষয়ে দক্ষতা ও জ্ঞান লাভের ফলে ঐ বিশেষ বিষয়ের ব্যাপারেই বিশেষজ্ঞগণ সাধারণত অন্ধ হয়ে পড়েন। পেশাগত কারণে বিশেষজ্ঞতা অর্জনের ফলে তার মনে ঐ বিশেষ বিষয়টি সম্পর্কে একটি অনমনীয় মনোভাব সৃষ্টি হয়। তিনি মনে করতে থাকেন যে, তিনিই কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন, ভাল বুঝেন। এ সম্পর্কে অন্য কোন শ্রেয়তর সংশোধিত কার্যপন্থা বেছে নিতে প্রচণ্ড অনীহা প্রকাশ করেন । তিনি শুধু পেশাগত কারণে পরিসংখ্যান সংক্রান্ত তথ্যসমূহকে প্রাধান্য দেন এবং এরূপ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মানবিক উপাদানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন। এ প্রসঙ্গে এটা উল্লেখযোগ্য যে প্রশাসন রাজনীতির একটি অংশ এবং পক্ষান্তরে বৃহত্তর সমাজের একটি দিক।

চতুর্থত, পেশাগত কারণে বিশেষজ্ঞ এক ধরনের খুঁতখুতে স্বভাব লাভ করে থাকেন। ফলে সমন্বয় দক্ষতা তাঁদের কর্ম প্রচেষ্টায় স্বচ্ছভাবে প্রতিভাত হয় না। সমন্বয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সমন্বয়ের অবস্থান প্রশাসনের কেন্দ্রস্থলে। এর উদ্দেশ্য হলো বিশেষ ধরনের বিষয়বস্তু সামান্যায়ন করা যাতে করে এদেরকে কার্য ও পরিকল্পনা এবং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় রূপ দেয়া যায়। প্রশাসনিক জটিলতা ও বিশেষীকরণ বৃদ্ধির সাথে সাথে সমন্বয় বর্ধিত হারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। সমন্বয় সকল কর্ম পরিসরকে একটি একক সুশৃঙ্খল নিয়ন্ত্রণের অধীনে একই শ্রেণীতে পরিচালিত করছে। অতিরিক্ত সমন্বয়ের প্রচেষ্টাকে পরিহার করাই এরূপ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য।

পঞ্চমত, একজন বিশেষজ্ঞ কোন একটি অংশ বা ঘটনাকে সামগ্রিক ঘটনার একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন না বরং ঘটনাকে একটি বিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে বিশ্লেষণ করেন। কেননা পেশাগত মনোভাব থেকেই তার মধ্যে একটি স্বতঃস্ফূর্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে। অথচ প্রশাসনের ক্ষেত্রে কোন কার্যই বিচ্ছিন্ন নয়। প্রতিটি কার্যকে একটি বিশেষ সমস্যা হিসেবে ধরলেও বাস্তব দৃষ্টিতে প্রতিটি সমস্যাই ব্যাপক ও গভীর সমস্যাজালের মধ্যে আবদ্ধ। কোন নীতিকে বাস্তবায়ন করতে হলে ছোটখাট সমস্যার সাথে বড় সমস্যার কি অন্তর্নিহিত সম্পর্ক-তা জানতে হবে। একটি প্রধান সরকারি নীতি প্রণয়নে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদান কোটি তা খুঁজে বের করা সহজসাধ্য নয়। প্রশাসনে বিভিন্ন গোষ্ঠীগত স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। এ কারণেই একজন বিশেষজ্ঞ তার মতামতের প্রাধান্য দাবি করতে পারেন না।

ষষ্ঠত, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সরকারি নীতি প্রণয়ন যুক্তিভিত্তিক ঘটনা বা তথ্যের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু উপাত্ত বা তথ্যই সিদ্ধান্ত প্রণয়নের একমাত্র উপাদান নয়। কোন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য শুধু বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না বরং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অথচ বিশেষজ্ঞ নন এরূপ প্রশাসকের সমালোচনামূলক মতেরও প্রয়োজন হয়। এরাই (বিশেষজ্ঞ নন এরূপ ব্যক্তি বা সাধারণজ্ঞ) অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণের জন্য জনসাধারণের প্রত্যাশা, প্রতিক্রিয়া এবং চেতনা পুরোপুরিভাবেই অনুভব করেন। যখন কোন বিশেষজ্ঞ একটি সংস্থার নীতিনির্ধারণ ও কার্যগত সম্পর্ক বিষয়ক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন, তখন তিনি মাঝে মধ্যেই সুবণ্টন ব্যবস্থার দায়িত্ব পালনে অবহেলা দেখান।

সপ্তমত, অ্যাপলেবি (Appleby) বলেছেন, “বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে সকল আমেরিকান হাসপাতাল ডাক্তার দ্বারাই পরিচালিত হত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে পরিচালনা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আজ ডাক্তারি ডিগ্রি নেই এমন বিপুল সংখ্যক পরিচালক রয়েছেন যাঁদের পরিচালনায় বহুমুখী উন্নতি সাধিত হয়েছে। ডাক্তার নন এমন বহু প্রশাসক জাতীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগে উচ্চপদে সমাসীন রয়েছেন। এমনিভাবে প্রকৌশলী প্রশাসক হবেন, বিংশ শতাব্দীর দশকে এটা ছিল একটা প্রিয় ধারণা। আজকাল শহর পুনর্গঠনমূলক বিভিন্ন সংস্থায় যেখানে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে সেখানে প্রশাসকগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকৌশলী নন। যে সকল কাজে প্রকৌশল, প্রযুক্তিবিদ্যার প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেখানে প্রকৌশলী প্রশাসকই উত্তম এ কথা যাঁরা বলেন তাঁরা শুধু নিজেদের অজ্ঞতাই প্রমাণ করেন। যেহেতু কাজটির মধ্যে কিছু কারিগরি বিশিষ্টতা রয়েছে সেহেতু প্রশাসককে একটি মাত্র সঠিক পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে, এমন মনে করার কোন কারণ নেই। কর্মসূচি যাই থাকুক, সেটা কার্যকরী করার জন্য কোন একটি মাত্র প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা অপেক্ষা বহুমুখী অভিজ্ঞতারই প্রয়োজন বেশি।” স্পষ্টতই এটা প্রমাণিত হয় যে, বহুমুখী কর্মসূচিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার বিশেষজ্ঞের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন পরিচালিত হতে দেয়া উচিত নয়৷

অষ্টমত, প্রশ্নটি ভাবের আদান-প্রদানগত সমস্যার দিক থেকেও বিচার করা দরকার। কোন বিশেষজ্ঞ নিজস্ব বিভাগ বা বিষয়ে যতবেশি বিশেষজ্ঞ নিজস্ব বিভাগ বা বিষয় পরিচালনার ক্ষেত্রে তার স্থান হবে ততবেশি নিচে, যদিও তাঁর অতুলনীয় কৃতিত্ব ক্রমশই তাকে খ্যাতিমান করে তুলবে। উপরোক্ত বিশেষজ্ঞ তাঁর পেশাদার সহকর্মীদের থেকে এতটাই দূরে চলে যান যে তার কথা তারা বুঝতে পারেন না। অ্যাপলেবি (Appleby)-র মতে, “কোন বিশেষজ্ঞ কর্তৃক বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাধারণ নীতিনির্ধারণে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সাথে তাবের আদান-প্রদানের চেষ্টা না করাই বাঞ্ছনীয়। বরং বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত বিভাগের উপর দিকে এমন সব লোক থাকা দরকার যারা বিশেষজ্ঞ অপেক্ষা সাধারণভাবে নিজেদের বক্তব্য পেশ এবং দায়িত্ব পালনে অধিকতর দক্ষ হবেন। মুশকিল হলো বিশেষজ্ঞরা এ অবস্থাটা মেনে নিতে চান না।

উপরোক্ত যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণজ্ঞরা বিশেষজ্ঞদেরকে অনুপযুক্ত নীতিনির্ধারক হিসেবে প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের যুক্তি ( Arguments of Specialist): বিশেষজ্ঞরাও যুক্তির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত যুক্তি খণ্ডন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। নিচে বিশেষজ্ঞের বক্তব্য উপস্থাপন করা হলোঃ 

প্রথমত, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে এমন কোন তথ্য বা উপাত্ত নেই যা দ্বারা প্রমাণ করা যায় যে, সকল বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তিদের প্রশাসনিক দক্ষতার অভাব রয়েছে। এটাও অযৌক্তিক যে একজন সাধারণজ্ঞের সাধারণ ধরনের শিক্ষাগতযোগ্যতা একজন বিশেষজ্ঞের বিশেষ ক্ষেত্র সম্পর্কিত যোগ্যতা থেকে অধিকতর ভাল। বরং কোন একটি জ্ঞান বা দক্ষতা যার যত বেশি থাকবে সে ব্যাপারে তার ভিত্তিমূল তত বেশি দৃঢ় হবে। উক্ত বিষয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নেও তিনি ততটা সফল হবেন। এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা প্রকৃতিগত দিক থেকে শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞই বিশ্লেষণ করতে পারেন। যেমনঃ সৌরজগতে রকেট নিক্ষেপের কাজ সর্বোচ্চভাবেই একজন বিশেষজ্ঞের এখতিয়ারভুক্ত। কার্যগত দিক থেকে তার মর্যাদা বা আসন অতি উচ্চে। তার সুপারিশটাই সঠিক বলে গ্রহণ করা হবে।

দ্বিতীয়ত, বিশেষজ্ঞদের উপর অনেক কিছুই নির্ভরশীল। নীতি প্রণয়ন, পরিচালনা এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসকরা যে কলাকৌশলগত ও বিজ্ঞান বিষয়ে তথ্য এবং পরিসংখ্যান ব্যবহার করেন তার জন্য তাঁদেরকে বিশেষজ্ঞের উপরই নির্ভর করতে হয়। এসব তথ্য প্রয়োগের ফলে কি ফল হতে পারে এবং জনগণের উপর কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, তা জানার জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞ তাঁর অনুসন্ধান কার্য বা গবেষণার মাধ্যমে এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জানতে পারেন। বিশেষজ্ঞের সাহায্য ও সমর্থন না পেলে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আধুনিক সমাজের জটিল সমস্যার গভীরে প্রবেশ করা এবং সেসব বিষয়কে সুনিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব। বিশেষজ্ঞের পক্ষে তা সম্ভব কারণ তিনি একটি বিশেষ দিকে তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেন এবং তার কাছেই ধরা পড়ে এ বিষয়ের সজীবতা।

তৃতীয়ত, বিশেষত উন্নত দেশে একজন বিশেষজ্ঞ প্রভূত সম্মানের অধিকারী হন। তিনিই নির্দিষ্ট কোন জ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বেসর্বা। এ বিশেষ জ্ঞানের ক্ষেত্রে তার কোন পরিপূরক বা সমকক্ষ থাকে না।

চতুর্থত, কোন বৃহদাকার জটিল সংস্থার বিশেষজ্ঞরা কলাকৌশলগত সংগঠনের উদ্দেশ্য ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি পূর্ণ সজাগ থাকেন এবং পেশাগত দিক থেকে এর উন্নয়নের জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।

পঞ্চমত, এমন কোন সর্বজনীন প্রমাণাদি নেই যে, বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের পেশাগত ও কর্মপরিধির কারণে সীমাবদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রেই এটা স্পষ্টত প্রতিভাত যে, বিশেষজ্ঞ একজন সাধারণজ্ঞের চেয়েও অনেক বেশি কল্পনাপ্রবণ এবং অধিকতর সমাজচেতনাসম্পন্ন। এটা বলাও যুক্তিসঙ্গত নয় যে বিশেষজ্ঞ হলেন যন্ত্রস্বরূপ এবং তাদের মধ্যে মানবিক উপাদানের স্পর্শ নেই। বিশেষজ্ঞরা তাদের সৃজনশীল ক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে মানবকল্যাণেই নিয়োজিত করেন। যুগ যুগ ধরে বিশেষজ্ঞরা মানবজাতির অগ্রগতি সাধনের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে নিয়োজিত করেছেন। একজন ব্রিটিশ লেখক বলেন যে, “আমি এটি কিছুতেই বিশ্বাস করি না যে একজন বিশেষজ্ঞের মধ্যে মানবতাবোধ নেই কেননা বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও মানবতাবোধ এ দু'টি শব্দ পরস্পরবিরোধী নয়। ”

ষষ্ঠত, একজন বিশেষজ্ঞ তার সংগঠনে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের সাথে অতি সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। এরূপ সংগঠনে একতা ও সমজাতীয় মনোভাব সৃষ্টি করা তার পক্ষেই সহজ। তিনি কারিগরিসংক্রান্ত সমস্যার সাথে অন্তরঙ্গভাবে পরিচিত বলে সমস্যা অতি সহজেই নির্ণয় করতে পারেন এবং এ বিভাগের কর্মচারীর কর্মোদ্যোগ বৃদ্ধি করার জন্য তিনি উৎসাহ প্রদান করেন। 

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা শেষে দেখা যাচ্ছে, সাধারণজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ উভয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার পক্ষে ও বিপক্ষে বহু জোরালো যুক্তি রয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক