গণভোট কাকে বলে?


প্রশ্নঃ গণভোট কী?
অথবা, গণভোট বলতে কী বুঝ?
অথবা, গণভোট কাকে বলে?

ভূমিকাঃ
আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা হলো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। আর আধুনিক গণতন্ত্র মানেই পরোক্ষ গণতন্ত্র। তবে পরোক্ষ গণতন্ত্রেও প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম উপাদান হলো গণভোট বা Referendum। নিম্নে গণভোট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলোঃ

গণভোট (Referendum) এর সংজ্ঞাঃ গণভোট বলতে আইন প্রণয়ন কিংবা সংবিধানের সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণের মতামত গ্রহণ করাকে বুঝায়। যেমন, সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে কোন অংশ পরিবর্তন কিংবা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট অবশ্যই গ্রহণ করতে হয়। সুইডেন, ইতালি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশেও গণভোট প্রচলিত আছে। বাংলাদেশেও গণভোটের বিধান আছে। আমাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে, সংবিধানের কোন মৌলিক ধারা সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পেশ করলে সাতদিনের মধ্যে উক্ত প্রস্তাব গণভোটে দিবেন। 

অর্থাৎ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নিতে প্রত্যক্ষ ভোট আয়োজনের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের কাছ থেকে পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে গণভোট বা Referendum বলে। 

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৩ বার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২ বার অনুষ্ঠিত হয় প্রশাসনিক গণভোট এবং ১ বার অনুষ্ঠিত হয় সাংবিধানিক গণভোট।

প্রথম প্রশাসনিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ৩০ই মে ১৯৭৭ সালে। উক্ত গণভোটে প্রশ্ন ছিলো, "আপনি কি রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমানের প্রতি এবং তার দ্বারা গৃহীত নীতি ও কার্যক্রমের প্রতি আস্থাশীল? 

বাংলাদেশে ২য় প্রশাসনিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ১লা মার্চ ১৯৮৫ সালে। তখন প্রশ্ন ছিলো, "আপনি কি রাষ্ট্রপতি এরশাদের গৃহীত নীতি সমর্থন করেন এবং আপনি কি চান, জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্ব পর্যন্ত তিনি তার প্রশাসন পরিচালনা করবেন?" 

৩য় ও একমাত্র সাংবিধানিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে। তখন প্রশ্ন ছিলো, "রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১২তম সংশোধনী প্রস্তাবে সম্মতি দিবেন কিনা?" এই গণভোট বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। কারণ এই গণভোটে "হ্যাঁ" ভোট জিতে যাওয়ায় আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রবেশ করি। নাহলে এখনো রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্রই থাকতে হতো।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পরোক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ পদ্ধতি হিসেবে গণভোট একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে শাসনতন্ত্র পরিবর্তনে সাধারণ জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক