“আইনের মতবাদগুলির পূর্ণ পরিসরে দখলাধিকারের চেয়ে অধিকতর কঠিন মতবাদ আর নাই” (স্যামণ্ড)- ব্যাখ্যা দাও


প্রশ্নঃ “আইনের মতবাদগুলির পূর্ণ পরিসরে দখলাধিকারের চেয়ে অধিকতর কঠিন মতবাদ আর নাই”-স্যামণ্ড। এই উক্তিটির ব্যাখ্যা দাও।

উত্তরঃ আইনের বিভিন্ন মতবাদগুলি নিঃসন্দেহে বেশ দুর্বোধ্য ও কঠিন। কেননা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ, দায় ও অধিকার, সম্পত্তি ও মানুষের মধ্যে সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জটিলতা নিরসন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আচরণের নিয়মাবলী ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি হয়। নিঃসন্দেহে এগুলি সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। এগুলির মধ্যে দখলাধিকারের মতবাদটি সুদূর অতীতে রোমান যুগ হতে বর্তমান যুগেও নানারকম প্রশ্নের ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং এজন্যেই প্রখ্যাত আইনবিজ্ঞানী জন স্যামণ্ড মন্তব্য করেছেন যে, দখলাদিকারের চেয়ে অধিকতর কঠিন মতবাদ আর নাই৷

দখল সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট ও সকলের গ্রহণযোগ্য কোন সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত প্রদান করা সম্ভবপর হয় নাই। সাধারণ অর্থে ইহা সম্পত্তির উপর একটি নিয়ন্ত্রণাধিকার যার ভিত্তিতে দখলকার উক্ত সম্পত্তি ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারে এবং অন্যকেও ব্যবহার করা হতে বিরত রাখতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ইহা দখলীকৃত বস্তুর সহিত দখলকারের একটা সম্পর্ক স্থাপন করে যা আইনের দৃষ্টিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই দখল বাস্তবে (Possession in fact) হতে পারে বা আইনে (Possession-in-law) হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই যে দুটো উপাদান অপরিহার্য তা হলো দখলকারের অভিপ্রায় এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা।

দখল হচ্ছে মালিকানা স্বত্বের চূড়ান্ত উপলব্ধি ৷ মালিকানা তখনই চূড়ান্ত রূপ লাভ করে যখন বাস্তব দখল সম্পূর্ণ হয়। তাই দখল হচ্ছে একটা প্রমাণ সাপেক্ষ তথ্য যাকে আইন উপেক্ষা করতে পারে না। ইহা আইন ও তথ্যের মাঝামাঝি অবস্থান করলেও তথ্যের সহিত ইহা বেশী সম্পৃক্ত। তাই তথ্য ও আইনের মধ্যে এই মতবাদটি . যথেষ্ট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। দখল অর্জন করা এবং দখল নাস করার মধ্যেই আইন সম্পর্কিত ফলাফল নির্ভর করে।

কেউ কেউ বলেন যে, দখল হলো কৃত্রিম অবস্থাকে আইনের দিক দিয়ে সংরক্ষণ করা। দখলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার উদ্দেশ্য ঐ অবস্থা বজায় রাখা। যখন দখলের অবসান ঘটে তখন উহা সংরক্ষণেরও প্রয়োজন থাকে না ৷  দখলের কতকগুলি আইনগত তাৎপর্য রয়েছে। এগুলি নিম্নরূপঃ

প্রথমতঃ দখল হলো মালিকানার সাক্ষ্য। কোন বস্তুর দখলকারীকে ঐ বস্তুর মালিক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং বস্তুর উপর অন্যান্য দাবীদারদের স্বত্ব প্রমাণ করতে বাধ্য করে।

দ্বিতীয়তঃ দীর্ঘদিনের দখল অপরের সম্পত্তির উপরও যথেষ্ট পরিমাণে স্বত্ববান করে। দখল হস্তান্তরও মালিকানা হস্তান্তরের অন্যতম পদ্ধতি।

তৃতীয়তঃ একটি মালিকবিহীন বস্তুর উপর প্রথম দখল স্বত্বের অধিকার সৃষ্টি করে। মালিকবিহীন বলতে যে বস্তুর বা সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব কারো দ্বারা অর্জিত হয় নাই তা বুঝায়।

চতুর্থতঃ একজন অবৈধ দখলকারী কেবলমাত্র প্রকৃত মালিক ব্যতীত সমগ্র বিশ্বের বিরুদ্ধেই উৎকৃষ্ট মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

পঞ্চমতঃ একজন অবৈধ দখলকারীকে প্রকৃত মালিকও জোরপূর্বক শান্তি ভঙ্গ করে দখলচ্যুত করতে পারে না। তাকে দখলচ্যুত করতে হলে আইনের আশ্রয় নিতে হয় এবং প্রকৃত মালিককে তার স্বত্বের প্রমাণ দেখাতে হয়।

এ সকল কারণে দখলের বিষয়টি সুকঠিন ও জটিল। তাই স্যামণ্ডের এরূপ উক্তি যথার্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক