প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির ত্রুটি বা অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর


প্রশ্নঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির ত্রুটি বা অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর। 

অথবা, প্ৰত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির কুফল আলোচনা কর।

অথবা, প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির নেতিবাচক দিক আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন পদ্ধতির গুরুত্ব অত্যধিক। আর এ নির্বাচন পদ্ধতি প্রত্যক্ষ হবে না পরোক্ষ হবে তা নিয়ে দীর্ঘতর আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। নির্বাচনে ভোটদান পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণত দু'টি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যথা : প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও পরোক্ষ নির্বাচন।

ত্রুটি বা অসুবিধাসমূহঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সুবিধা বা গুণের কথা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। কিন্তু এটিও দোষ বা ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। নিয়ে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের অসুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলোঃ

১. ব্যয়বহুলঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচনে খরচ হয় অধিক। বহুসংখ্যক জনগণের কাছে প্রার্থীকে যোগাযোগ করতে হয়। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়। আর এ খরচের অনেকটাই অপব্যয় ছাড়া কিছু নয়।

২. দলীয় কোন্দলঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়। ফলে রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায় এবং দলের মধ্যে অশুভ উত্তেজনা বিরাজমান থাকে। এ উত্তেজনা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। এ পদ্ধতিতে একে অপরের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্লোগান ও প্রচার চালায়। ফলে দলীয় কোন্দল আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

৩. রাজনৈতিক দলের প্রভাবঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের উপর রাজনৈতিক দলের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। নির্বাচনের সময় কার্যপ্রক্রিয়া আরো বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক দলের প্রচার এবং প্রচারণায় সাধারণ ভোটারগণ তাদের স্বীয় চিন্তাভাবনা হারিয়ে ফেলে এবং দলের প্রভাবে ভোট প্রদান করতে বাধ্য হয়।

৪. প্রতারণার সম্ভাবনাঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রতারণার সম্ভাবনা থাকে। নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর মিথ্যা আশ্বাস জনসাধারণ সরল মনে বিশ্বাস করে ক্ষেত্র বিশেষ অযোগ্য লোকদেরকে নির্বাচিত করে প্রতারিত হয়।

৫. নৈতিক অধঃপতনঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পারস্পরিক কুৎসা রটনা ও অন্যান্য অনৈতিক পন্থা অবলম্বনে দ্বিধাবোধ করে না। নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য যে কোন উপায় অবলম্বন করতে তারা প্রস্তুত। এর ফলে প্রশাসনের নৈতিক অধঃপতন দেখা দেয়।

৬. সুচতুর ব্যক্তির নেতৃত্বঃ জনসাধারণকে নিজেদের অনুকূলে আনয়নের জন্য সুচতুর এবং চটুল বক্তাগণ উত্তেজনাকর বক্তব্য পেশ করেন। সাধারণ ও অশিক্ষিত ভোটার অনলবর্ষী বক্তাদের বক্তব্য ভুলে গিয়ে তাদেরই ভোট দেয়। ফলে সুচতুর ব্যক্তির নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

৭. অযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচনে অনেক সময় অযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। কেননা ভোটদাতাদের অধিকাংশ অশিক্ষিত ও রাজনীতিতে অজ্ঞ হলে যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই অযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হলে অযোগ্য ব্যক্তির দুর্বল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

৮. সৎ ও গুণী ব্যক্তি এড়িয়ে চলেনঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার জটিলতা ও বিড়ম্বনার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সৎ ও প্রকৃত জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা এড়িয়ে চলেন। কারণ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের উত্তেজনা ও দলীয় প্রচারণার তিক্ততা সৎ, যোগ্য ও ভদ্র ব্যক্তিরা পছন্দ করেন না। তাই তারা প্রত্যক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বরং তারা এড়িয়ে চলেন।

৯. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাঃ প্রত্যক্ষ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যার ফলে নির্বাচিত ও অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সর্বদা কলহ লেগে থাকে । এতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়।

উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রত্যক্ষ নির্বাচনের অনেক অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি একটি জনপ্রিয় নির্বাচন পদ্ধতি। এ নির্বাচন পদ্ধতি অনেক সহজ সরল বলে জনসাধারণ ভোটদানে উৎসাহিত হয়। ফলে জনগণ যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়। তাই প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি বর্তমানে কাম্য নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক