প্রশ্নঃ নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যা মানুষের ন্যায়-অন্যায়, ভাল মন্দ, নিয়ে আলোচনা করে মানুষের ভাল, মন্দ, ন্যায় ও অন্যায় নিরূপণের ক্ষেত্রে নীতি বিদ্যায়ও কতকগুলো ধারণাকে স্বীকার্য সত্য হিসাবে ধরা হয়। এর মধ্যে ইচ্ছার স্বাধীনতা অন্যতম। স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদ অন্যতম।
নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদের পার্থক্যঃ নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদের পার্থক্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
প্রথমতঃ নিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে আমাদের ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই। অপর দিকে অনিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে মানুষের সম্পূর্ণ ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ নিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে আমাদের কামনা বাসনা স্বাদ, ইচ্ছা সবই বাইরের শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে আমাদের কামনা, বাসনা, ইচ্ছা, সংকল্প সবই মন দ্বারা স্বাধীন ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
তৃতীয়তঃ নিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে জগতের প্রত্যেক ঘটনার কারণ রয়েছে। কারণ ছাড়া কোনো কিছু ঘটে না। সুতরাং মানবিক ঘটনা হিসাবে ইচ্ছারও একটি কারণ থাকতে পারে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রণবাদীরা বলেন, প্রত্যেক ঘটনার পিছনের এক বা একাধিক কারণ থাকলেও এর অর্থ এই নয় যে মানসিক ঘটনাবলি কোনো কারণের দ্বারা সংঘটিত হয়।
চতুর্থতঃ নিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে মন হলো মস্তিষ্কের একটি উপজাত ব্যাপার, তাই মনের কোনো নিজস্ব শক্তি নেই। সুতরাং মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকতে পারে না।
পঞ্চমতঃ নিয়ন্ত্রণবাদীদের মতে ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই যদি জগতের সবকিছু পরিচালিত হয়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রণবাদীরা বলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই যদি আমরা চালিত হই তাহলে মানুষের কৃতকর্মের ফলাফলের জন্য মানুষকে দায়ী করা হবে কেন।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে নীতিবিদ্যায় ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কিত মতবাদ হিসাবে নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদের শুরুত্ব অপরিসীম। নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদ স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পরস্পর দুটি ভিন্ন মতবাদ হলেও এদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত করা যায়। এ মতবাদ দুটিকে পৃথক করেছে ও স্বতন্ত্রতা প্রদান করেছে।
0 মন্তব্যসমূহ