লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্ৰশাসনের মধ্যে সম্পর্ক, সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যসমূহ লিখ


প্রশ্নঃ 
লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্ৰশাসনের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর। 
অথবা, লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্ৰশাসনের মধ্যে সাদৃশ্যসমূহ লিখ। 
অথবা, লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্ৰশাসনের মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ লিখ। 

ভূমিকাঃ লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার সম্পর্কের প্রশ্নে দু'টি পৃথক মতবাদ রয়েছে। মতবাদ দু'টি প্রশাসনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নির্দেশ করে। মতবাদ দু'টি নিম্নরূপঃ

প্রথম মতবাদ (First Concept): লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার সম্পর্কের প্রথম মতবাদ অনুযায়ী লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন এক ও অভিন্ন। প্রশাসন সম্পর্কিত এ মতবাদের প্রবক্তারা হলেন লুথার আরউইক (Luther Urwick), মেরী পার্কার ফলেট (Mary Parker Follett), হেনরি ফেয়ল (Henry Fayol) প্রমুখ। তাদের মতে, সরকারি সংগঠনের ক্ষেত্রেই হোক আর বেসরকারি সংগঠনের ক্ষেত্রেই হোক, সকল প্রশাসনই এক। হেনরি ফেয়ল (Henry Fayol) বলেন, "We are no longer confronted with several administrative sciences but with one which can be applied equally well to public and to private affairs." অর্থাৎ আমরা এখন আর কতকগুলো প্রশাসনিক বিজ্ঞান দেখতে পাই না; বরং আমাদের একটি প্রশাসনিক বিজ্ঞানই রয়েছে যা সরকারি এবং বেসরকারি বিষয়াদির ক্ষেত্রে সম-যথোপযুক্তরূপেই প্রযোজ্য। [Marshall E. Dimock and Others, Public Administration, p. 12.]

লুথার আরউইক (Luther Urwick)-ও অনুরূপ মত ব্যক্ত করে বলেন, "The attempts to sub-divide the study of management or administration in accordance with the purpose of particular forms of undertaking seem to many authorities misdirected." অর্থাৎ বিশেষ ধরনের সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসন শাস্ত্রকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টাকে অনেক প্রামাণিক লেখকই ভ্রান্ত প্রয়াস হিসেবে গণ্য করেছেন।[Quoted in Dr. M. P. Sharma, Op. cit, pp. 41-42.] 

বস্তুত লোক প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে যে নিবিড় সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় তার ভিত্তিতেই এ মতবাদ বা দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় মতবাদ (Second Concept): লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপর মতবাদ অনুযায়ী এ দু প্রশাসন ব্যবস্থার মধ্যে প্রভূত পরিমাণ পার্থক্য বিদ্যমান। এ মতবাদের প্রবক্তাদের মধ্যে পল অ্যাপলবি (Paul Appleby), হারবার্ট সাইমন (Herbert A. Simon) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। সাইমন (Herbert A. Simon) মনে করেন যে, “সাধারণ মানুষের কল্পনাতেই লোক প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য তীব্রতরভাবে প্রকাশ পায়। সাধারণ মানুষ ধারণা করে যে, লোক প্রশাসন রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক এবং দীর্ঘসূত্রি আর বেসরকারি প্রশাসন অ-রাজনৈতিক, অবাধ এবং ব্যবসায়িক মনোভাবপূর্ণ।” [Quoted in Dr. M. P. Sharma, op. cit, pp. 41-42.] 

অবশ্য এ পার্থক্য বাস্তবতার সাথে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এ সকল দিক দিয়ে সরকারি প্রশাসন এবং লোক প্রশাসনের মধ্যে শ্রেণীগত নয় বরং মাত্রাগত পার্থক্যই বিদ্যমান। অবশ্য এমনকি যদি সাধারণ মানুষের ধারণা ভ্রান্ত হয়েও থাকে, তথাপি আমরা লোক প্রশাসন বা সরকারি প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার পার্থক্যকে এড়িয়ে যেতে পারি না।

বস্তুত কোন কোন দিক দিয়ে লোক প্রশাসন বেসরকারি প্রশাসন হতে পৃথক। লোক প্রশাসনের কতকগুলো স্কুল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমনঃ একরূপতা, দায়িত্বশীলতা, কর্মদক্ষতা ইত্যাদি। পল এইচ. অ্যাপলেবি (Paul H. Appleby) বলেন, “সরকারি প্রশাসন ইহার গণ-প্রকৃতির কারণে— যেভাবে একে জনসাধারণের সমালোচনা ও বিক্ষোভ সহ্য করতে হয় সে দিক দিয়ে- অন্যান্য সকল প্রশাসনিক কাজ হতে এতই ভিন্ন থাকে যা বাইরের ব্যক্তিগণ কিছু মাত্র উপলব্ধি করেন না। কোন প্রশাসক সরকারি কাজে যোগদানের সাথে সাথেই এবং তারপর বারবার সংবাদপত্র ও জনগণের দ্বারা সমালোচিত হয়, যারা তার জীবন, ব্যক্তিত্ব ও আচরণের ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়। জনগণ প্রায়ই প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিস্তারিত সম্পর্কে এরূপ উৎসাহ নেন, অথচ বেসরকারি ব্যবসার বিস্তারিত প্রশাসনিক বিষয় সম্পর্কে সংগঠনের বাইরে কখনও কেউ উৎসাহ দেখাবে না।”[Simon and Others, op. cit, p. 10.] 

পল এইচ. অ্যাপলেবি (Paul H. Appleby)-র মতে, তিনটি দিক দিয়ে লোক প্রশাসন বেসরকারি প্রশাসন থেকে পৃথক। যথাঃ পরিধির ব্যাপ্তি, প্রভাব ও বিবেচ্য বিষয়ের ব্যাপকতা, জনগণের নিকট দায়ী থাকার বিধান এবং রাজনৈতিক প্রকৃতি।

উপরোক্ত দু'টি মতবাদের ভিত্তিতে নিচে লোক বা সরকারি প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করা হলোঃ

(ক) লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে সাদৃশ্যসমূহ ( Similarities Between Public Administration and Private Administration): লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়। বিশেষত উভয় প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের উপর লক্ষ্য রেখে এ সকল সাদৃশ্য নির্ণয় করা হয়েছে। সাদৃশ্যগুলো নিম্নরূপঃ

প্রথমত, লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন সাধারণভাবে একই প্রকার কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।

দ্বিতীয়ত, উভয় প্রশাসন ব্যবস্থাই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কতকগুলো নীতিমালা ও পদ্ধতি অবলম্বন করে।

তৃতীয়ত, বৃহদায়তন বাণিজ্য সংস্থা এবং বেসরকারি প্রশাসনের কার্যাবলি কমবেশি একইভাবে পরিচালিত হয়।

চতুর্থত, যে কোন সরকারি ও বেসরকারি বৃহদায়তন সংস্থা সুষ্ঠু প্রশাসনের জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, সংযোজন এবং নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক।

পঞ্চমত, সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনার অনেক পদ্ধতি লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন উভয় ক্ষেত্রে একই ধরনের। যেমনঃ নোটিং, ফাইল প্ৰথা৷

ষষ্ঠত, সরকারি সংস্থা থেকে অনেক বেসরকারি ও অবাঞ্চিত প্রকৃতির কাজ করে থাকে। তবে সেগুলো লোক প্রশাসনের আলোচ্য বিষয়বস্তুর আওতাভুক্ত নয়। পক্ষান্তরে সরকারি উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছাসেবী কল্যাব্রতী সংস্থা জনগণের কল্যাণমূলক অনেক কর্মতৎপরতা সম্পাদন করে। সেগুলোকে আমরা লোক প্রশাসন হিসেবে গণ্য করি না।

সপ্তমত, ফিফনার (Pfiffner) বলেন, পাবলিক কর্পোরেশনগুলো বস্তুতপক্ষে বাণিজ্যিক কারবারি প্রতিষ্ঠান এবং সনাতনী সরকারি বিভাগের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়েছে। এ থেকে লোক প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপলব্ধি করা যায়।

অষ্টমত, এমন অনেক কলাকৌশল দক্ষতা ও কর্মপদ্ধতি রয়েছে যা লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন : হিসাবরক্ষণ, পরিসংখ্যান, অফিস ব্যবস্থাপনা, অফিস কার্যবিধি, ক্রয় ও বিক্রয়, মজুদ এবং ইত্যাকার নানাবিধ কার্যক্রম লোক প্রশাসনে ও বেসরকারি প্রশাসনে অভিন্ন।

নবমত, সাম্প্রতিককালে শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উদ্যোগ ও অংশগ্রহণের ফলে বেসরকারি প্রশাসনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে লোক প্রশাসনের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে প্রভূত পরিমাণে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীগণকে একই প্রশাসনিক কলেজ বা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

দশমত, গণতান্ত্রিক ক্ষমতার উপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ আরোপণের নীতি লোক প্রশাসনের ন্যায় বেসরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্রেও প্রচলিত রয়েছে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে বিভিন্ন সাদৃশ্য বিরাজমান। বস্তুত বিশ্বে গণতান্ত্রিক ও কল্যাণব্রতী রাষ্ট্রের ধারণা যতই বিস্তার লাভ করছে, লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার সাদৃশ্যও ততই বেড়ে চলেছে। সরকারি বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার বৈসাদৃশ্য ক্ষীণতর হওয়াকে লক্ষ্য করে ডব্লিউ. জে. এম. ম্যাকেঞ্জি (W. J. M. Mackenzie) বলেন, ".... the distinction between public administration and private administration is now quite secondary." অর্থাৎ সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার পার্থক্য বর্তমানে সম্পূর্ণভাবেই গৌণ হয়ে পড়েছে। [Paul H. Appleby Big Democracy, p. 7.]

(খ) লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ (Dissimilarities between Public Administration and Private Administration): GE প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে উপরোক্ত বিভিন্ন প্রকার সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও এদের সম্পূর্ণভাবে এক ও অভিন্ন বলে মেনে নেয়া যায় না। কেননা উভয়ের প্রশাসনিক প্যাটার্ন একই রূপ নয় । বস্তুত লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্রে যে পারস্পরিক বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্য বিদ্যমান, তা বহুগুণে উভয়ের সাদৃশ্যের মাত্রা অতিক্রম করে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যায় । হারভে শ্যারমান (Harvey Sherman) বলেছেন, "The line between public and private administration is so blurred that it is possible to tell, where government leaves off and privates business begin." [W. J. M. Mackenzie, "The Study of Public Administration, in the united Stated". Public Administration Vol. XXIX, 1951, p. 136, Quoted in a Dictionary of the Social Sciences, p. 558.] 


নিচে লোক প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হলোঃ

১। সেবার অভিপ্রায় ও মুনাফা অর্জন (Service Motive and Profit Motive): লোক প্রশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা লোভের অনুপস্থিতি। জনসাধারণকে সেবা করার অভিপ্রায়েই লোক প্রশাসন পরিচালিত হয়। অথচ বেসরকারি প্রশাসনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন। অর্থাৎ বেসরকারি প্রশাসন মুনাফা লাভ করাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং জনসাধারণকে সেবা করার নীতিকে গৌণ করে দেখে। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, কোন বেসরকারি সংগঠনের প্রশাসক অলাভজনক কোন কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। পক্ষান্তরে সরকারি প্রশাসন এমন অনেক কার্য সম্পাদন করে থাকে যেগুলো ব্যবসায়িক দিক দিয়ে লাভজনক তো নয়ই বরং ব্যয়বহুল। যেমনঃ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা প্রভৃতি। বস্তুত সরকারি বা লোক প্রশাসনের মূল লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা লাভ করা নয়, বরং সর্বসাধারণের কল্যাণ সাধন করা৷

২। আর্থিক ক্ষতি ও আর্থিক লাভ (Financial Loss and Financial Benefit): রাষ্ট্র যে সকল কার্য সম্পাদন করে সেগুলো বাজার-দর (Market price) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। সরকারি প্রশাসনে কোন একক প্রকল্প গ্রহণ এবং এর বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি সরকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীনও হয় তথাপি সরকার উক্ত প্রকল্প স্থগিত রাখতে বা বন্ধ করে দিতে পারে না। জনস্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকারকে আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে নিতে হয়। কিন্তু বেসরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্রে তা হয় না। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে বেসরকারি প্রশাসন উক্ত প্রকল্প বন্ধ করে দিবে। উক্ত প্রকল্পের ফলে জনগণ উপকৃত হবে কি না তা বেসরকারি প্রশাসনের লক্ষ্য করবার বিষয় নয়। বেসরকারি প্রশাসনের নিকট আর্থিক লাভই বড় কথা৷

৩। সেবা ও খরচ (Service and Cost): লোক প্রশাসনের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সেবা প্রদানের জন্য আবশ্যকীয় অর্থই শুধু করারোপের মাধ্যমে আদায় করা হয়। প্রদত্ত সেবা এবং জনসাধারণের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের মধ্যে একটি নিবিড় আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। জনগণের কল্যাণের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় ততটা অর্থই জনগণের কাছ থেকে করারোপের মাধ্যমে উঠানো হয়। কোন সরকারের বাজেটের দিক তাকালেই দেখা যাবে এটা সাধারণত ঘাটতি ব্যয়। অর্থাৎ তাতে আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি। বেসরকারি প্রশাসনে আয় প্রায়শই ব্যয় অপেক্ষা বেশি। কারণ তা না হলে মুনাফা হয় না। 

৪। রাজনৈতিক নির্দেশনা ( Political Direction): লোক প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার অপর এক প্রধান পার্থক্য হলো এই যে, লোক প্রশাসন যেমন রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। কিন্তু বেসরকারি প্রশাসন তেমন রাজনৈতিক নির্দেশের অধীনে থেকে কাজ করে না। তবে চরম জরুরি অবস্থায় বেসরকারি প্রশাসনের উপর রাষ্ট্রীয় নির্দেশ প্রযোজ্য হতে পারে। বেসরকারি প্রশাসন যে সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে, সেগুলো এরই নিজস্ব লক্ষ্য এবং সেগুলো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল নয়, বা এর দ্বারা নির্ধারিত হয় না। পক্ষান্তরে, লোক প্রশাসনে কার্যরত একজন কর্মকর্তা অবশ্যই রাষ্ট্রের নির্বাহীকর্তার নিকট হতে প্রাপ্ত নির্দেশ পালন করবে এবং এই ব্যাপারে তার কোন স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই।

৫। কর্ম পরিসর (Area of Activity): লোক প্রশাসন ব্যবস্থার কর্ম পরিসর অত্যন্ত ব্যাপক। পক্ষান্তরে বেসরকারি প্রশাসনের কর্ম পরিসর অত্যন্ত সীমিত। রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি বৃদ্ধির সাথে সাথে লোক প্রশাসনের কার্যাবলিও যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে রাষ্ট্র আর পুলিশী রাষ্ট্র নয়, রাষ্ট্র এখন মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণকামী প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি জীবনের এমন কোন দিক নেই যা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে না। ফলে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ কল্যাণকামী প্রতিষ্ঠান বলে পরিগণিত হয়েছে।

৬। কার্যাবলির প্রকৃতি (Nature of Functions): লোক প্রশাসন বেসরকারি প্রশাসনের চেয়ে ব্যাপকতর কার্যাবলি পালন করে থাকে। দেশের নাগরিকগণের জীবন ও সম্পত্তির অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত জরুরি কাজগুলো লোক প্রশাসনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যেমনঃ দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা, দেশের অভ্যন্তরে শান্তি শৃঙ্খলা অক্ষুণ্ণ রাখা, নাগরিকদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ প্রভৃতি। অপরদিকে বেসরকারি প্রশাসন অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকে। যেমনঃ বস্ত্রায়ন, চিনি, কাগজ সরবরাহ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প পরিকল্পনা প্রভৃতি। লোক প্রশাসন অনেক সময় বিভিন্ন কার্যক্রম বা উপযোগিতামূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ভোগ করে থাকে। যেমনঃ রেলপথ সার্ভিস, ডাক ও তার সার্ভিস, বিদ্যুৎ সরবরাহ সার্ভিস, সেনাবাহিনী প্রতিপালন, বৈদেশিক বাণিজ্য প্রভৃতি। কিন্তু কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন সংগঠনের পক্ষে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং কার্যক্রম সম্পন্ন করা অসম্ভব।

৭। জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতা (Public Accountibility): লোক প্রশাসনকে জনগণের নিকট দায়িত্বশীল থাকতে হয়। সরকারি কর্মচারীগণ তাদের কার্যাবলির জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি হতে বাধ্য থাকেন। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায়, বিশেষ করে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় জনগণের কাছে সরকারি প্রশাসকদের দায়ী থাকার নীতি বিস্তারিত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুসরণ করা হয়। লোক প্রশাসনের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের মতামত ও ইচ্ছা অনুসারে সরকারি কর্মকর্তাগণ কাজ করে থাকেন। তাদের কাজের মধ্যে জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে থাকে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার কারণেই সরকারি প্রশাসনকে তাঁদের কার্যাবলির বিস্তারিত রেকর্ডপত্র ও হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণ করতে হয়।

কিন্তু বেসরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্রে প্রশাসকদের এরূপভাবে জনগণের কাছে দায়িত্বশীল থেকে জবাবদিহি করতে হয় না। বেসরকারি প্রশাসনকে কোন কোন ক্ষেত্রে জনমতের প্রান্ত ছুঁয়ে যেতে হয় বটে, তবে লোক প্রশাসন যে অর্থ জনগণের কাছে দায়ী বেসরকারি প্রশাসন সে অর্থে দায়ী থাকে না। অতএব বলা যায় যে, লোক প্রশাসন জনগণের কাছে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী, পক্ষান্তরে বেসরকারি প্রশাসন জনগণের কাছে পরোক্ষভাবে দায়ী। করসন ও হেরিস (Corson and Harris) বলেছেন, "The public administration carries on his work in a glass bowl'. His action are exposed to public review and Acriticism at all times. His mistakes tend to be widely published and his achievements after pass unnoticed, he has both a problem and in obligation. [Harvey Sherman, It all depends : A Pragmatic Approach to Organization, p. 25.] 

৮। সামঞ্জস্যতা (Uniformity) : সরকারি তথা লোক প্রশাসন সর্বদা অভিন্ন ও সামঞ্জস্যপূর্ণ রীতিনীতি ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে। এতে কর্মচারীদের একটি সুনির্দিষ্ট কর্মনীতি থাকে এবং তারা সর্বদা সেই কর্মনীতিতে অটল থেকে যাবতীয় কার্য সম্পন্ন করে থাকে। তারা কারও প্রতি আনুকূল্য বা কারও প্রতি বিরূপ ভাব প্রদর্শন করতে পারে না। কিন্তু বেসরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা অভিন্ন ও সামঞ্জস্যপূর্ণ রীতিনীতি ও কর্মপদ্ধতির প্রতি সবিশেষ যত্নবান নয়। বেসরকারি প্রশাসনে বিভিন্ন বিশেষ প্রয়োজন ও উদ্দেশ্যে প্রায়ই বিভিন্ন জনসাধারণের সাথে বিভিন্নরূপে আচরণ করে থাকেন, অথচ তাতে গণবিক্ষোভ বা প্রতিবাদের সৃষ্টি হয় না। রিচার্ড এ. ওয়ার্নার (Richard A. Warner) বলেন, "Business need not worry overmuch about uniformity in treatment. It can cater for various special needs and purpose charging often 'what the traffic will bear' without raising the storm of public protest which would immediately arise if in government one law were devised for the benefit of the rich and another for the poor. " [Corson and Harries, Public Administration in Modern Society, P. 13.]

৯। জনসংযোগ (Public Relation): জনসংযোগের নীতি ও ধারা লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনভেদে বিভিন্ন। লোক প্রশাসন তার কার্যাবলি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত ও সন্তুষ্ট রাখার নীতি অনুসরণ করে। আর বেসরকারি প্রশাসন সর্বদাই ক্রেতা ও ভোগকারীগণকে তাদের উৎপাদিত ও উদ্ভাবিত পণ্যসামগ্রীর প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা গণযোগাযোগের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে । লোক প্রশাসনের ক্ষেত্রে জনসংযোগ বেসরকারি প্রশাসনের মত ব্যাপক নয়। লোক প্রশাসনের চেয়ে বেসরকারি প্রশাসনেই জনসংযোগের প্রয়োজনীয়তা অধিক পরিমাণে অনুভূত হয়।

১০। নিরপেক্ষতা (Impartiality): সরকারি আমলাতন্ত্র বেসরকারি আমলাতন্ত্র হতে সম্পূর্ণ পৃথক। সরকারি আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা (Impartiality), নির্দলীয় কর্মতৎপরতা (Neutrality) ও নামবিহীনতা (Anonymity) বিদ্যমান থাকে। কিন্তু বেসরকারি প্রশাসন ব্যবস্থায় এগুলো পরিলক্ষিত হয় না।

১১। আইনগত নিয়ন্ত্রণ (Legal Control): লোক প্রশাসনের প্রকৃতি আইনগত (Legal)। এটি সব সময় নির্ধারিত আইনানুযায়ী কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। লোক প্রশাসন সর্বদাই আইন মেনে চলে এবং আইন বহির্ভূত যেভাবে আইন দ্বারা বর্ণিত থাকে, বেসরকারি প্রশাসকদের তেমন থাকে না। স্বীয় কার্যাবলি আইনানুযায়ী সম্পাদিত না হলে তাকে আদালতে জবাবদিহি করতে হয়। ফিফনার ও প্রেস্থাস (Pfiffner and Presthus) তাই বলেছেন, "Public policy enunciated in law provides the framework within which public administration works.... everything the bureaucrat does must be authorized by law. This passion for accountability results in a system of cheeks and balances that gives public administration a distinctive character." [Richard A. Warner, the Principles of Public Administration, p. 133.] 

১২। কর্মদক্ষতা (Efficiency): অনেকের মতে, লোক প্রশাসন অপেক্ষা বেসরকারি প্রশাসন অধিকতর দক্ষ ও কার্যক্ষম। লোক প্রশাসনের কাজের উৎকর্ষতা বেসরকারি প্রশাসনের তুলনায় নিম্নমানসম্পন্ন। তাদের মতে, বেসরকারি প্রশাসন ‘ব্যবসায়ী ব্যক্তির প্রশাসন' বা সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন' প্রশাসন। এ ধারণা পোষণ করার যৌক্তিকতাও রয়েছে। বেসরকারি প্রশাসনে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কর্মচারীদের মজুরির অসম হার প্রবর্তন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অধিকতর মজুরি প্রদান করা হয়। ফলে বেসরকারি প্রশাসনের কর্মদক্ষতা রাজনীতির উৎকর্ষ সাধিত হয়। কিন্তু লোক প্রশাসন দীর্ঘসূত্রিতা, লালফিতার দৌরাত্ম্য, অপব্যয়, দুর্নীতিপ্রবণ ও অদক্ষতার দোষে দুষ্ট। ব্যক্তি মালিকানাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ অধিক মুনাফা অর্জন ও সর্বক্ষেত্রে জনগণকে আকর্ষণের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষতা বিধানে আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যাপৃত হয়। কিন্তু সরকারি প্রশাসনে যারা কার্যরত রয়েছেন তাদের পেছনে এরূপ কোন অনুপ্রেরণা কাজ করে না।

তবে একথাও সত্য যে, বেসরকারি প্রশাসন সর্বদাই সুদক্ষ ও কর্মতৎপর হয় না। বেসরকারি প্রশাসনের দক্ষতার মান যে সর্বদাই এবং অপরিহার্যভাবে সরকারি প্রশাসন অপেক্ষা উচ্চ মানসম্পন্ন তা নয়। তবে সরকারি প্রশাসকগণ তাদের প্রশাসনকে দক্ষ ও ফলপ্রসূ করে তুলতে এবং জনসমর্থন লাভ করতে চাইলে সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতায় প্রশাসনকে উন্নত করার ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করতে পারেন।

১৩। অর্থ নিয়ন্ত্রণ (Finance Control): লোক প্রশাসনে অর্থসংস্থান ব্যবস্থা বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ লোক প্রশাসনে অর্থ তহবিলে দেশের নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণ থাকে। দেশের আইনসভা কর্তৃক অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থ বরাদ্দ আইন পাস করে আইনসভা শাসন বিভাগকে অর্থব্যয়ের কর্তৃত্ব দান করে। শাসন বিভাগ তার ইচ্ছামত অর্থ-বরাদ্দ ও ব্যয় করতে পারে না। কিন্তু বেসরকারি প্রশাসন অর্থনৈতিক বিষয়ে এরূপভাবে বাইরের কোন শাখা বা সংগঠন বা ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসকই অর্থ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী।

১৪। একচেটিয়া ও স্বনামবিহীনতা (Monopoly and Anonymity): সরকারি প্রশাসনে এমন অনেক কাজ আছে যা একচেটিয়াভাবে কোন সংগঠন দ্বারা সম্পাদিত হয়। সেখানে কোন রূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রতিযোগিতার অবকাশ থাকে না। যেমনঃ রেলপথ ব্যবস্থা বা ডাকব্যবস্থা পরিচালন। সরকারি প্রশাসকগণ তাদের চাকরির দীর্ঘ সময় কালের পুরোটাই জনচক্ষুর অন্তরালে থেকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদের সাথে জনসম্পৃক্ততা না থাকায় তারা সকলের কাছে অজ্ঞাত ও অপরিচিত থেকে যান। ফলে তাদের কৃত কোন কর্মকাণ্ডের সুফল বা কুফলের জন্য তাদের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় না।

১৫। পরিধির ব্যাপকতা (Broadness of Scope): লোক প্রশাসনের কার্যাদির পরিধি বেসরকারি প্রশাসনের কার্যাদির পরিধির চেয়ে ব্যাপকতর। বস্তুত, লোক প্রশাসকগণের কার্যাবলি বেসরকারি প্রশাসকগণের কার্যাবলির চেয়ে অধিকতর শ্রমসাধ্য ও কষ্টবহুল। লোক প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ফেলিক্স এ নিগ্রো (Felix A. Nigro)-এর ভাষায়, the basic service which is performed for the public, such as police and fire protection, public works, education, recreation, sanitation, social security, agricultural research, national defense and others. It is for this reason that the field of public administration is so broad, because each of these services arises out of different needs which press themselves upon individuals in modern security." অর্থাৎ জনগণের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষণ, অগ্নি- নির্বাপণ, পূর্ত কাজ সম্পাদন, শিক্ষাবিধান, অবকাশের বন্দোবস্তকরণ, জনস্বাস্থ্যবিধান, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, কৃষি-গবেষণার ব্যবস্থাকরণ, জাতীয় প্রতিরক্ষা বিধান ইত্যাদি অন্যান্য মৌলিক কার্যাদি সাধন করা। ঠিক এ কারণেই সরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক, কারণ আধুনিক সমাজে নাগরিকগণের নিকট জরুরি হয়ে দেখা দেয় এমন সকল বিভিন্ন প্রয়োজন মিটানোর জন্যই এ সকল কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। [J. M. Pfiffner and R. V. Presthus, op. Cit. C. 4.]

১৬। সামাজিক মর্যাদা (Social Status): একজন সরকারি প্রশাসক সম্ভবত একজন বেসরকারি প্রশাসকের চেয়ে অধিকতর সামাজিক মর্যাদা ভোগ করেন। এর কারণ হলো এই যে, সরকারি চাকরির মাধ্যমে জনসাধারণকে সেবা করার অধিকতর সুযোগ লাভ করা যায়। বস্তুত জনসাধারণকে সেবা করাই লোক প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হওয়ায় লোক প্রশাসনের ক্ষেত্রে এমন সকল ব্যক্তির আবশ্যক হয়। যারা জনস্বার্থ সংরক্ষণ বা সাধন করতে সমর্থ ও আগ্রহী।

১৭। জন-মনোভাব (Public Attitude): সরকারি এবং বেসরকারি প্রশাসন সম্পর্কে জনসাধারণ বিভিন্নরূপ মনোভাব গ্রহণ করেন। সাইমন (Simon)-এর মতে, জনগণ বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে সরকারি প্রশাসনের বিরোধিতা করাকেই অধিকতর অন্যায় বা মারাত্মক বলে মনে করেন, যদিও তারা সরকারকে অধিকতর অদক্ষ এবং সম্ভবত অধিকতর দুর্নীতিপরায়ণ বলেও মনে করতে পারেন।

উপসংহারঃ উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, লোক প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্র ও পরিবেশ আলাদা। তবে লোক প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে যতখানি পার্থক্য রয়েছে বলে মনে হয়, বাস্তবে এদের মধ্যে তার চেয়ে কম পার্থক্যই রয়েছে। বস্তুত, লোক প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রশাসন ভিন্নতর ক্ষেত্রে কাজ করে। ডুয়েট ওয়াল্ডো (Dwight Waldo) যথার্থই বলেছেন, "The generalization which distinguish public administration from private administration, like special care for equality of treatment legal authorization of and responsibility for action, public justification or justification of decision, financial probity and meticulousness, and so forth are of very limited applicability. In fact, public and private administration are the two species of the same genus. But they have special values and techniques of their own, which give to each their distinctive character." অর্থাৎ সম্পর্ক ও আচরণে বৈষম্যহীনতা, আইনের কর্তৃত্বাধীনে উদ্যোগ গ্রহণ, কাজের দায়িত্ব গ্রহণ, কাজের ব্যাপারে জনগণের কাছে জবাবদিহি করা, সিদ্ধান্তমালার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা, আর্থিক ব্যবস্থা ও সচ্ছলতা এবং খুঁটিয়ে কাজ করার মত যে সকল সাধারণীকৃত সূত্রমালা গণপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে তার প্রয়োগ খুবই সীমিত বা সীমাবদ্ধ। প্রকৃত প্রস্তাবে, গণপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন একই প্রশাসন ব্যবস্থার দু'টি ভিন্ন দিক। তবে তাদের স্ব স্ব বিশেষ মূল্যবোধ ও কৌশল রয়েছে। এ মূল্যবোধ ও কৌশলই তাদের বিভিন্ন চরিত্রেও বৈশিষ্ট্যে রূপায়িত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক