আইনবিজ্ঞান কি যুক্তি শাস্ত্র? আইনবিজ্ঞান পাঠে সিনথেসিসের প্রয়োজনীয়তা লিখ


প্রশ্ন আইনবিজ্ঞান কি যুক্তি শাস্ত্র? যে সমস্ত আইন বিজ্ঞানী আইন বিজ্ঞান পাঠে সংশ্লেষ (সিনথেসিস)-এর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন, তাদের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন কর। আইনের অনুজ্ঞাসূচক মতবাদে আইনের প্রকৃতি কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে? আইনবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে ভবিষ্যতে একজন পেশাদার আইনজীবি হিসেবে তুমি কিভাবে উপকৃত হতে পার? 

আইনবিজ্ঞান যুক্তিশাস্ত্র কি নাঃ উৎপত্তিগত অর্থে আইন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানকে আইন বিজ্ঞান বলে। কিন্তু ব্যাপক বা স্থুল অর্থে এটা আইনের সমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এ্যালেনের মতে, আইনের মূল নীতিগুলোর বিজ্ঞান সম্মত বিশ্লেষণই হচ্ছে আইনবিজ্ঞান। কিন্তু যুক্তিশাস্ত্র হচ্ছে কোন সিদ্ধান্ত বা উপনিতির সত্যতা বা অসত্যতা প্রদর্শনের প্রচেষ্টা। কোন মতবাদের সত্যতা নিরূপণের প্রচেষ্টা ব্যতিরেকেও অবশ্য যুক্তিযুক্ত ভাবে এর বিশ্লেষণ বা তদন্ত করার প্রয়াস থাকে যুক্তিশাস্ত্রে। কিন্তু আইনবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত বিশ্লেষণ বা অনুসন্ধানের কোন অবকাশ নেই। তাই ইংল্যাণ্ডের প্রধান বিচারপতি কোক মন্তব্য করেছিলেন যে, কোন স্বাভাবিক বা যুক্তিযুক্ততার আলোকে কোন বিচার কার্য সমাধা করা যায় না বরং কৃত্রিম যুক্তি এবং আইন প্রদর্শিত পন্থায় তা সমাধা করতে হয় [(1607), 12 Rep. 63]। এটা এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত যে, কোন মোকদ্দমার জট খুলে তার আইন সম্মত সমাধান করতে যে, অভিনব পন্থা অবলম্বন করতে হয় তার সাথে যুক্তিশাস্ত্রের পন্থাগুলোর কতটুকু সাদৃশ্য রয়েছে সে বিষয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।

ফ্রাঙ্ক, কনসট্যাম, স্টোন প্রমুখ আইনবিজ্ঞানীদের মতে, যুক্তিশাস্ত্রের নিরিখে আইনশাস্ত্র বিশ্লেষণ যথার্থ নয়। আইনে যুক্তিশাস্ত্রের প্রভাব সম্পর্কে প্রধান আপত্তি হচ্ছে এই যে, যুক্তিশাস্ত্রের প্রক্রিয়া হচ্ছে অনমনীয় ও কঠোর কিন্তু আইনের প্রক্রিয়াগুলো যথেষ্ট নমনীয় ও প্রায়োগিক। তাঁদের মতে, আইনের গতিপথ কোন যুক্তিতর্কের উপর নির্ভরশীল নয় বরং মানব জীবনের অভিজ্ঞতা ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তিশীল। তাই মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে আইনের পরিবর্তন হয় কোন যুক্তিতর্কে যার কোন সমাধান পাওয়া যায় না। তাই ক্রীতদাস, সহ-মরণ, ইত্যাদির ন্যায় নিষ্ঠুর অমানবিক প্রথা এক সময়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও কালক্রমে মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে তা বিলুপ্ত হয়েছে। জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধের ন্যায় কোন নির্দিষ্ট সূত্রের উপর ভিত্তি করে আইন প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং সামাজিক মঙ্গল ও শান্তির লক্ষ্যেই আইনের সৃষ্টি।

যদিও যুক্তিশাস্ত্র 'আইনশাস্ত্র হতে স্বতন্ত্র এবং নিজ বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তার গুণে স্বভূবনে ভাস্বর তবুও পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। ব্রিটিশ কমন ‘ল' মূলত অলিখিত যা প্রথা ও রীতিনীতির উপর গড়ে উঠেছে। কেস 'ল' বা মামলার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গড়ে উঠা আইন কমন ‘ল' এর এক অন্যতম উপাদান। সিদ্ধান্তিত মামলাগুলো পরীক্ষা করে এগুলোর নীতিসমূহ জানতে পারা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টান্ত থেকে একটা সাধারণ সূত্রে আনার প্রক্রিয়া কিন্তু যুক্তিশাস্ত্রের মাধ্যমে করা হয়। অমিশ্র বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে উদঘাটন বা আবিষ্কার কিন্তু আইনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রয়োগ বা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। কোন চুক্তির মধ্যে দণ্ডের বিধান থাকলে বলবৎযোগ্য কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারক এ সম্পর্কিত পূর্ব সিদ্ধান্তগুলো অনুসন্ধান করতে থাকেন। পূর্বোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বা তা থেকে ব্যতিক্রম ধর্মী সিদ্ধান্ত নেয়া তার এখতিয়ারভুক্ত, তবে যাই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক না কেন এর পেছনে কি যুক্তি রয়েছে বা কোন্ নীতি বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা অবশ্যই রায়ে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তিতর্কের সাথে আইনের সাদৃশ্য দেখা যায় ৷

তাই দেখা যায় যে, আইন যুক্তিশাস্ত্রের উপর ভিত্তিশীল নয়, তবে এটা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্নও নয়। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তিশাস্ত্রকে বাদ দেয়া যায় না। আবার যুক্তিযুক্ত ও স্বাভাবিক মনে হলেই কোন নীতিকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করা যায় না যতক্ষণ তা আইনের নীতি দ্বারা সমর্থিত না হয়। তাই বলা যায় যে, অন্যান্য শাস্ত্র যেমন ন্যায়নীতি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, ইত্যাদির সংমিশ্ৰণ আইনে যেরূপ রয়েছে যুক্তি শাস্ত্রের অনেক উপাদানও আইন উদার ভাবে গ্রহণ করেছে।

আইনবিজ্ঞান পাঠে সিনথেসিসের প্রয়োজনীয়তাঃ কোন প্রস্তাবনা বা সূত্রের যথার্থতা নিরূপণের জন্য বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি হতে এর বিভিন্ন বিষয় বিচার-বিবেচনা করতে হয়। এ উদ্দেশ্যেই সংশ্লেষ বা সিনথেসিসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সিনথেটিক আইনবিজ্ঞানীদের মতে, আইন বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান এবং পরার্থসম্মত উপযোগবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়। সিনথেটিক আইনবিজ্ঞানের প্রবক্তাগণের মতে, আইনবিজ্ঞান হচ্ছে মৌলিক আইনগত নীতিসমূহের ঐতিহাসিক, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও সমাজতাত্ত্বিক ‘ভিত্তির অধ্যয়ন এবং তৎসহ আইনগত ধারণাসমূহের বিশ্লেষণ। পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ মতবাদের মধ্যে সামঞ্জস্য আনে এই সংশ্লেষ পদ্ধতি। এ মতবাদের প্রবক্তাগণের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসর জেরোম হল, জুলিয়াস স্টোন, লর্ড ডেনিস লয়েড এবং ভারতের ডঃ এম. জে সেথনা অন্যতম। ডীন রস্কো পাউন্ড প্রত্যক্ষভাবে সিনথেটিক জুরিসপ্রুডেন্সের কথা না বললেও তাঁর আচরণের মাধ্যমে প্রকান্তরে তিনি এ মতবাদের সমর্থন করেছেন। হলের মতে, আমরা যদি কোন পদ্ধতির প্রবর্তকের ভাল দিকটা চর্চা করি তাহলে আইনবিজ্ঞানীর চিন্তাধারার উল্লেখযোগ্য সংশ্লেষ আমরা অর্জন করতে সক্ষম হবো। আইনবিজ্ঞানী বা আইন দার্শনিকদের মনোনিবেশ করা উচিৎ সে সকল আইন মতবাদসমূহের উপর যেগুলো ধীরে ধীরে এবং ধৈর্য্যের সাথে বিশেষজ্ঞ কর্তৃক কয়েক শত বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং আইন ও জুরিসপ্রুডেন্সের মধ্যে এক সেতুবন্ধন রচনা করেছে।

ডীন রস্কো পাউন্ড আইনবিজ্ঞানের সকল পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেছেন এবং সকল মতবাদের বর্ণনা দিয়ে একটা নিয়মতান্ত্রিক আকারে জুরিসপ্রুডেন্সের বিভিন্ন বিষয়গুলো আলোচনা করেছেন । আইনের প্রকৃতি এবং আইন অনুযায়ী বিচার সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেছেন। আইনের পরিধি, উৎস ও বিকাশ সম্পর্কেও পর্যালোচনা করেছেন তিনি জুলিয়াস স্টোন বিশ্লেষণাত্মক, তুলনামূলক, দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও সমাজতাত্ত্বিক মতবাদসহ আইনবিজ্ঞানের সকল কিছুই পর্যালোচনা করেছেন। লর্ড ডেনিস লয়েড তার Introduction to Jurisprudence সংশ্লেষের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

ভারতে ডঃ সেথনা সংশ্লেষের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা৷ তার মতে আইনের মূলনীতি ও ধারণাগুলো ব্যাখ্যা করা, এগুলোর ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক ভিত্তি পর্যালোচনা করাই জুরিসপ্রুডেন্সের মূল কাজ। সিভিল ল' সম্পর্কে তিনি বলেন যে, আইনসম্মত কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্রের এজেন্সি সমূহ কর্তৃক প্রণীত আইন, নীতি বা বিধিসমূহ যা জনগণের অধিকার, কর্তব্য ও দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় তা বলবৎ করে তাই হচ্ছে সিভিল ল'। এভাবে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য নিশ্চিত করা হয় ৷ অবহেলা সম্পর্কেও তিনি বিশদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেন। ডঃ সেী বলেন যে, প্রত্যেক বিষয়টি ঐতিহাসিক, দার্শনিক, বিশ্লেষণাত্মক, তুলনামূলক ও সমাজতাত্ত্বিকসহ সকল দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। সম্পত্তির বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন যে, আমাদেরকে সম্পত্তির ধারণা, স্বত্বাধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার, আইনগত ও ইকুইটিগত অধিকার ইত্যাদি বিশ্লেষণ করতে হবে। তুলনামূলক ভাবে এবং সমালোচনাপূর্বক এগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। সব বিষয়গুলো একত্রিত করে সেগুলোর সিনথেটিক আলোচনার উপর তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন।

অনুজ্ঞাসূচক মতবাদঃ সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না করা হলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা অবশ্যম্ভাবী। আইন হচ্ছে এরূপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অন্যতম। আইনের মাধ্যমে একদিকে যেমন মানুষের অধিকার খর্ব করে। অপরদিকে তেমন অধিকার সৃষ্টি করে। তাই যখন ট্রাফিক আইন করে নির্দেশ দেয়া হয় যে, সকল যানবাহন রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলবে তখন যদিও যানবাহন চালক ডান দিক দিয়ে চলতে পারে না কিন্তু সামগ্রিক শৃঙক্ষলা ও শান্তি এতে নিশ্চিত করে। সম্মুখ হতে কেউ ডান দিকে আসলে তার যানবাহনের সাথে সংঘর্ষ হলে সে নির্দোষ প্রমাণিত হবে এবং সামনে ডান দিকে আগত যানবাহনের মালিক দায়ী হবে।

অনুজ্ঞাসূচক মতবাদে আইনের আদর্শসমূহ নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে না বরং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত আইনের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দ্বারা আইনের কার্যকারিতা যথার্থভাবে বলবৎ করে। অস্টিনের মতে, পজিটিভ আইনের ৩টি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমতঃ এটা একটা আদেশ; দ্বিতীয়তঃ এ আদেশ রাজনৈতিক সার্বভৌম কর্তৃক প্রদত্ত; এবং তৃতীয়তঃ বলবৎযোগ্য স্বরূপ শাস্তি। পূর্বে উল্লেখিত ট্রাফিক আইনের ক্ষেত্রে বাম দিকে চালানো হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সংসদ কর্তৃক প্রণীত যা সার্বভৌম রাষ্ট্রের আইনসম্মত অঙ্গ এবং এর লংঘনের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা আছে।

অনুজ্ঞাসূচক এ মতবাদকে অনেকে সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে এটা একটা সরাসরি আদেশ, কোন আইন নয় । কিন্তু আদেশ হলেও এটা স্বেচ্ছাচার বা হঠকারি আদেশ নয় ৷ সার্বভৌম রাষ্ট্রের একটা অঙ্গ সংগঠন সংসদ কর্তৃক অনেক বিচার বিশ্লেষণের পর এ আইন পাস হয়ে থাকে । সংসদের সদস্যদের অধিকাংশই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। কাজেই এ আইন জনগণের জন্যই প্রকারান্তরে জনগণ দ্বারাই প্রণীত হয়ে থাকে । কাজেই অনুজ্ঞা মতবাদে আইনের প্রকৃতি পর্যাপ্ত ভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে বলা যায়।

পেশাদার আইনজীবিদের জন্য আইনবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তাঃ আইনবিজ্ঞানের কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায় না কিন্তু আইন প্রয়োগকালে এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আইনবিজ্ঞানের প্রয়োজন হয়। তাই আইনবিজ্ঞান পাঠের প্রত্যক্ষ প্রয়োগ না হলেও এর বাস্তব মূল্য অপরিসীম। এগুলি মূলতঃ নিম্নরূপ-

প্রথমতঃ আইনের মৌলিক ধারণাসমূহ বিশ্লেষণ করে আইনবিজ্ঞান। তাই অধ্যাপক হল্যান্ড আইনবিজ্ঞানকে 'আইন শিক্ষার ব্যাকরণ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আইনবিজ্ঞান পাঠ করলে আইনের মূল নীতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই অবৈধ কাৰ্য, আইনগত ক্ষতি, অভিপ্রায়, শাস্তি ইত্যাদি সম্পর্কে আইনবিজ্ঞান যেরূপ বিশ্লেষণ করে সেগুলি আয়ত্ব করলে একজন আইনের ছাত্র কোন আইনগত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে চিত্তাকর্ষক যুক্তি প্রদর্শনের কলা কৌশল আয়ত্ব করতে পারে। কাজেই একজন সুদক্ষ আইনজীবি বা আইনবিদ হতে হলে আইনবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজন।

দ্বিতীয়তঃ সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য আইন গৃহীত হয় বা প্রণীত হয়। স্যামন্ড বলেন, “দেশের আইন কাঠোমোর উপর প্রয়োজনীয় আলোকপাত করাই হলো আইনবিজ্ঞান পাঠের মূখ্য উদ্দেশ্য।” একটি দেশের আইন সভা বা আইন প্রণেতাগণ আইনবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলির উপর ভিত্তি করে দেশের জন্য বিজ্ঞান সম্মত আইন প্রণয়নে সচেষ্ট হন। কাজেই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনবিজ্ঞানের ভূমিকাই যথেষ্ট। নতুন কোন আইন প্রণীত হলে এর কার্যকারিতা কিরূপ হবে এবং ইহা কিভাবে ব্যবহৃত হতে পারে সে সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হলে আইনবিজ্ঞান যথার্থভাবে জানতে হবে। 

তৃতীয়তঃ আইনবিজ্ঞান পাঠ করে এক ব্যক্তি সচেতন নাগরিক হতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তির কিছু সামাজিক দায়িত্ব ও অধিকার আছে। একজনের অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে অন্যের অধিকার যেনো লংঘিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। আইন বিজ্ঞান এরূপ প্রয়োজনীয় জ্ঞান দেয়।

চতুর্থতঃ বিচার প্রশাসন আইনবিজ্ঞানের এক অন্যতম বিষয় বিধায় বিচার কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আইনবিজ্ঞান অধ্যয়নের প্রয়োজন। শাস্তির উদ্দেশ কি এবং বিভিন্ন প্রকার শাস্তির প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে হলে আইনবিজ্ঞান পাঠ করা প্রয়োজন। একজন ভাল বিচারক হতে হলে তাকে অবশ্যই একজন ভাল আইন বিজ্ঞানী হতে হবে।

পঞ্চমতঃ এই শাস্ত্র অধ্যয়নের দ্বারা মানুষের মন আইনগত চিন্তাধারার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়। তাই আইনে গবেষণার ক্ষেত্রে আইনবিজ্ঞান যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এজন্য আইনশাস্ত্র গবেষকদের জন্য আইন বিজ্ঞান পাঠ করা অত্যাবশ্যকীয়।

ষষ্ঠতঃ আইনবিজ্ঞান যেহেতু আইনের ব্যাকরণ, চক্ষু ও অভিধান স্বরূপ। আইনে যথার্থ জ্ঞানলাভ করতে হলে প্রথমে আইনবিজ্ঞানে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন।

পরিশেষেঃ ইহা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আইনবিজ্ঞান শুধু যথার্থ আইনবিদ, বিচারক, আইন গবেষক এবং সচেতন নাগরিক হতে সাহায্য করে তাই নয় এই শাস্ত্ৰ পাঠে লব্ধ জ্ঞান সমগ্র আইনগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক