সৈয়দ সুলতান-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও


প্রশ্নঃ সৈয়দ সুলতান-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ বাংলার প্রাচীনতম কবিদের মধ্যে সৈয়দ সুলতান অন্যতম। তিনি চট্টগ্রামের চক্রশালার অধিবাসী। ড. এনামুল হক তার জীবনকাল ১৫০০ থেকে ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দ নির্দেশ করেছেন।

সৈয়দ সুলতানের রচিত গ্রন্থঃ ১. নবীবংশ, ২. শব-ই-মিরাজ, ৩. রসুলবিজয়, ৪. ওফাৎ- ই-রসুল, ৫. জয়কুম রাজার লড়াই, ৬. ইবলিসনামা, ৭. জ্ঞান চৌতিশা, ৮. জ্ঞানপ্রদীপ, ৯. মারফতী গান, ১০. পদাবলী।

তার কাব্যের বিষয়বস্তু থেকে ধারণা করা যায় যে, ইসলাম ধর্মকাহিনী প্রচারের উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেছিলেন।

সৈয়দ সুলতানের শ্রেষ্ঠ ও বৃহত্তম কাব্য নবীবংশ। নবীবংশ আসলে নবীকাহিনী । নবীবংশ নামে কবি নবী পরম্পরা নির্দেশ করেছেন। আরবি-ফারসি নবীকাহিনীই ছিল কবির কাব্যিক আদর্শ। তবে তিনি বাংলাদেশের পটভূমিকায় এদের জীবনচিত্র একেছেন। সৈয়দ সুলতানই প্রথম ব্যক্তি যিনি সাহস করে নবী-রসুলের ইতিবৃত্ত এবং ইসলামের মর্মকথা বাঙলা ভাষায় রচনা করতে শুরু করলেন। নবীবংশের দ্বিতীয় খণ্ড হচ্ছে রসুল মুহম্মদচরিত। এ খণ্ডে আছে তিনটি পর্ব— উন্মেষ পর্ব, মেরাজ পর্ব ও ওফাৎ পর্ব। তার বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বে দৈশিক প্রভাব প্রকট। তিনি বৈদান্তিক অদ্বৈত তত্ত্ব অঙ্গীকার করেছেন সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনায়।

তার কাব্য রচনার সাফল্য সম্পর্কে ড. মুহম্মদ এনামুল হক মন্তব্য করেছেন, “কবি সৈয়দ সুলতান যে বিষয় লইয়া নবীবংশ রচনা করিয়াছেন তাহা মোটামুটি কবিত্ব প্রদর্শনের পরিপন্থী। ইহা ধর্মীয় কাহিনী, সুতরাং কবির পক্ষে কল্পনার বিলাস ও কবিত্ব দেখাইবার সুযোগ কোথায়? এতদসত্ত্বেও ভাবের ঔদার্যে, কল্পনার বিলাসে, সৌন্দর্যবোধের চমৎকারিত্বে তাহার ভাষা কাব্যখানির সর্বত্র যেরূপ স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ গতিতে নানা ছন্দে ঝঙ্কৃত হইয়া উৎসারিত হইয়াছে, তাহার তুলনা মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে একরূপ বিরল।”

তার শব-ই-মিরাজ কাব্যটি আকারে সুবিশাল। হযরতের মিরাজের ঘটনা এতে বর্ণিত হয়েছে। তার রসুলবিজয় কাব্যটিও আকারে বড়। এতে হযরতের ধর্ম প্রচার ও যুদ্ধবিগ্রহের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তিনি চৌদ্দটি পদাবলীর পদও লিখেছেন।

মুসলিমদের ঐতিহ্য তুলে ধরায় মধ্যযুগীয় কবিদের মধ্যে সৈয়দ সুলতান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক