প্রশ্নঃ বিবাহের বিভিন্ন ধরন আলোচনা কর।
অথবা, উদাহরণসহ বিবাহের বিভিন্ন রূপ আলোচনা কর।
অথবা, বিবাহের বিভিন্ন প্রকরণ বা ধরন বা শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ বিবাহ পরিবারের অন্যতম উপাদান। বিবাহকে বাদ দিয়ে পরিবারকে কল্পনা করা যায় না। কারণ বিবাহের মাধ্যমেই একটি পরিবার জন্মলাভ করে। তাই পরিবার ও বিবাহ একটি অপরটির সম্পূরক। বিবাহ হচ্ছে এমন একটি কার্যপ্রণালি যার মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। মানুষ সামাজিক জীব। সে একা কখনো বাস করতে পারে না। তাই সঙ্গীর প্রয়োজন দেখা দেয়। আর এই সঙ্গীর সঙ্গেই সে মৃত্যু পর্যন্ত একত্র বসবাস করে।
বিবাহের বিভিন্ন রূপ বা ধরন ও বিভিন্ন সমাজে এবং অনেক সময় একই সমাজে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বি লোকদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কিত রীতি-নীতি এবং আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। নিম্নে বিবাহের বিভিন্ন রূপ তুলে ধরা হলো-
(১) এক বিবাহঃ এই বিবাহের যখন একজনের সাথে এককালে মাত্র একজনের বিবাহ সংঘটিত হয়, তখন তাকে একবিবাহ বা Monogamy বলে।
(২) বহুবিবাহঃ এই বিবাহের যখন কোনো পুরুষ বা স্ত্রী লোক এককালে একাধিক ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক জীবনযাপন করে, তখন তাকে Polygamy বা বহুগামিতা বলে।
নিম্নে বহুবিবাহ আলোচনা করা হলোঃ
(ক) বহুপতি বিবাহঃ এই বিবাহের যখন কোনো স্ত্রীলোক একইকালে বহু পতি গ্রহণ করে, তখন তাকে Polyandry বা বহু ভর্তৃকত্ব বলে। বহু ভকত্বের প্রচলন পৃথিবীতে খুবই কম। তিব্বতের কোনো কোনো অংশে এবং হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য ভূমিতে এর প্রচলন আছে।
(খ) বহুপত্নী বিবাহঃ যখন একজন পুরুষ একই সঙ্গে বহু পত্নী গ্রহণ করে, তখন তাকে বহুপত্নীকত্ব বলে। বহুপত্নীকত্বের প্রচলন অনেক বেশি। আফ্রিকা অঞ্চল ও মুসলমানদের মধ্যে এমন কি উচ্চ হিন্দুদের মধ্যেও বহুপত্নীকত্বের প্রচলন কম-বেশি দেখা যায়।
(গ) দলগত বিবাহঃ যখন একাধিক পুরুষের একাধিক স্ত্রীলোকের সাথে একইকালে বিবাহ হয়, তখন সেই বিবাহকে দলগত বিবাহ বলা হয়। নিউগিনি ও হাওয়াই দ্বীপের কয়েকটি উপজাতির মধ্যে এরূপ ববাহের প্রচলন আছে।
(৩) গোষ্ঠিসাপেক্ষ বিবাহঃ যখন একই গোষ্ঠী থেকে বিবাহের পাত্র-পাত্রী উভয়েরই নির্বাচন সঙ্গত বিধি বলে গণ্য হয়, তখন তাকে গোষ্ঠিসাপেক্ষ বিবাহ বলা হয়। যেমনঃ ভারতবর্ষের হিন্দুদের মধ্যে সবর্ণ বিবাহ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
(৪) গোষ্ঠী বহির্ভূত বিবাহঃ যখন দুটি ভিন্ন গোষ্ঠী হতে বিবাহের পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করা হয় তখন তাকে গোষ্ঠী বহির্ভূত বিবাহ বলে।
(৫) অনুলোম বিবাহঃ যখন উচ্চ বংশজাত পাত্রের সাথে অপেক্ষাকৃত নিম্নশ্রেণির কন্যার বিবাহ হয়, সেই বিবাহকে অনুলোম বিবাহ বলে।
(৬) প্রতিলোম বিবাহঃ যখন নিম্ন বংশজাত পাত্রের সাথে অপেক্ষাকৃত উচ্চশ্রেণির কন্যার বিবাহ হয়, তখন এ প্রকারের বিবাহকে প্রতিলোম বিবাহ বলে। প্রাচীন ভারতবর্ষে প্রতিলোম বিবাহ নিন্দিত হতো।
(৭) সমবিবাহঃ পাত্র ও পাত্রীর মধ্যে যখন বয়স, শিক্ষা, রুচি, আর্থিক অবস্থা, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ে সমতার ভিত্তিতে বিবাহ সংঘটিত হয় তখন, সেই বিবাহকে সমবিবাহ বলে।
(৮) অসম বিবাহঃ পাত্র-পাত্রীর মধ্যে যখন বয়স, শিক্ষা, আর্থিক অবস্থা, মর্যাদা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমতার ভিত্তিতে বিবাহ হয়, তখন সেই বিবাহকে অসম বিবাহ বলে।
(৯) রোমান্টিক বিবাহঃ পাত্র বা পাত্রী যখন নিজেদের নির্বাচিত ব্যক্তিকে বিবাহ করে, তখন সেই বিবাহকে রোমান্টিক বিবাহ বা স্বনির্বাচিত বিবাহ বলা হয়।
(১০) সংযোজিত বিবাহঃ যখন অভিভাবকবৃন্দ, আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধব পাত্র-পাত্রী মনোনয়ন করে বিরাহের ব্যবস্থা করে তখন সেই বিবাহ পদ্ধতিকে সংযোজিত বিবাহ বলা হয়।
(১১) সমান্তরাল কাজিন বিবাহঃ চাচাতো ও খালাতো ভাই-বোনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিবাহকে সমান্তরাল কাজিন বিবাহ বলে।
(১২) অসমান্তরাল কাজিন বিবাহঃ মামাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহকে অসমান্তরাল কাজিন বিবাহ বলে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজের ক্রমবিবর্তনে আধুনিক সমাজে একবিবাহ পদ্ধতিই সর্বাধিক জনপ্রিয় ও স্বীকৃত। বিভিন্ন বিবাহ পদ্ধতি সমাজের প্রয়োজনেই সৃষ্টি হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে সমাজের রূপটিই ফুটে ওঠে।
0 মন্তব্যসমূহ