প্রশ্নঃ দীর্ঘকাল নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক আদালত সংস্থাটি এত দুর্বল কেন অথবা আন্তর্জাতিক আদালতের দুর্বলতা কি? আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকের যোগ্যতা কি? এই বিচারকগণ কি তাদের দায়িত্ব পালনে স্বাধীন?
ভূমিকাঃ জাতিসংঘের অন্যতম একটি অঙ্গ হলো আন্তর্জাতিক আদালত। এটি জাতিসংঘের প্রধান বিচারবিভাগীয় অঙ্গ। কিছু রাষ্ট্র ব্যতীত পৃথিবীর প্রায় সকল রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আইনগত বিষয়ে কোন বিরোধ দেখা দিলে এই সংস্থা তার বিচার করে।
দীর্ঘকাল নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখা সত্ত্বেও এই সংস্থাটি এত দুর্বল কেন অথবা আন্তর্জাতিক আদালতের দুর্বলতা কিঃ নিম্নে আন্তর্জাতিক আদালতের দুর্বলতাসমূহ আলোচনা করা হলো:
আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট কোন বাহিনী নেই। এই আদালতের রায় কার্যকর করার জন্য কোন ক্ষমতাও প্রদান করা হয়নি। যারফলে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অর্থহীন হয়ে পড়ে।
এছাড়া নির্দিষ্ট ধরনের মামলা বিচারের জন্য এই আদালতে আনা হয়। বর্তমানে এই আদালতে মামলার সংখ্যা যেমন কমেছে তেমনি এর গুরুত্বও কমে গেছে। এমনকি কোন কোন বছর একটির বেশি মামলা এই আদালতে দায়ের করা হয় না৷
আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার সকল রাষ্ট্র স্বীকার করলেও তা মেনে চলার কোন গ্যারান্টি নেই। যার ফলে অনেক রাষ্ট্র এখাকে কোন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পেশ করে না। এই আদালতের কার্যকর ক্ষমতা কম থাকায় এটি অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে । ট অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকের যোগ্যতা : আন্তর্জাতিক আদালতের সংবিধির ২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকের যোগ্যতা উল্লেখ করা হলো-
আন্তর্জাতিক আদালতে সর্বমোট ১৫ জন সদস্য নিয়ে বিচার বিভাগ গঠিত হবে।
যে সকল ব্যক্তি নিজ দেশে সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্য বা আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে স্বীকৃত যোগ্যতা সম্পন্ন এবং উচ্চ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী সেই এবং সকল ব্যক্তি নিয়ে এই আদালত গঠিত হবে।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তির আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক হওয়ার জন্য তিনটি যোগ্যতা থাকা জরুরি।
(১) উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে,
(২) নিজ দেশে সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে,
(৩) আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে স্বীকৃত যোগ্যতা সম্পন্ন আইন বিশেষজ্ঞ হতে হবে।
একই সময়ে একই রাষ্ট্র থেকে একাধিক ব্যক্তি নিয়োগ পাবেন না। বিচারকদের মেয়াদ হবে ৯ বছর। তবে তারা পূনঃ নির্বাচিত হতে পারবেন।
প্রথম নির্বাচনে যে সকল ব্যক্তি বিচারক হিসেবে নির্বাচিত হবেন তাদের ৫ জনের মেয়াদ হবে ৩ বছর এবং আরো ৫ জনের মেয়াদ হবে ৬ বছর।
বিচারকগণ নিজেদের মধ্য থেকে সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত করবেন। যাদের মেয়াদ হবে ৩ বছর।
কোন বিচারক ইস্তফা দিতে চাইলে সভাপতি বরাবর আবেদন করতে হবে ১৫ বিচারকের মধ্যে ৯ জন দ্বারা কোরাম হবে।
এই আদালত এক বা একাধিক চেম্বার গঠন করতে পারবেন। যার সদস্য হবে ৩ বা ততোধিক।
এই বিচারকগণ কি তাদের দায়িত্ব পালনে স্বাধীনঃ যে সকল ব্যক্তি নিজ দেশে সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্য বা আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে স্বীকৃত যোগ্যতা সম্পন্ন এবং উচ্চ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী সেই সকল ব্যক্তি নিয়ে এই আদালত গঠিত হবে।
আন্তর্জাতিক আদালতের সংবিধির ২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী-
প্রত্যেক বিচারককে তার দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে প্রকাশ্য আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে হয় যে, তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন বিবেক বুদ্ধি দিয়ে তিনি কাজ করবেন। সুতরাং বলা যায় আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকগণ তাদের দায়িত্ব পালনে স্বাধীন।
উপসংহারঃ আন্তর্জাতিক আদালত জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এই আদালতের উপদেশ কারো জন্য বাধ্যতামূলক না হলেও এর বিচারের রায় বাধ্যকর। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
0 মন্তব্যসমূহ