১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে ভারতীয় হস্তক্ষেপ মূল্যায়ন কর। কখন কোন দেশে জাতিসংঘ শক্তি ব্যবহার করতে পারে?


প্রশ্নঃ হস্তক্ষেপ কাকে বলে? ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে ভারতীয় হস্তক্ষেপ মূল্যায়ন কর। 
কোন অবস্থায় কোন দেশে জাতিসংঘ শক্তি ব্যবহার করতে পারে?

ভূমিকাঃ সকলেই চায় তার নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে। এক রাষ্ট্র যদি অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে অনধিকার চর্চা করে তাহলে তা হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়। হস্তক্ষেপ সাধারণত অবৈধ বলে গণ্য হলেও কখনো কখনো তা বৈধ বলে প্রতিয়মান হয়।

হস্তক্ষেপ (Intervention) কাকে বলেঃ হস্তক্ষেপ এর অন্যতম একটি উপাদান হলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হুমকি প্রদান করা। এক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য কোন রাষ্ট্রকে তার অভ্যন্তরীন বিষয়ে অনধিকার চর্চা করাকে হস্তক্ষেপ বলে।

অধ্যাপক ওপেনহাম এর মতে, কোন বিষয় পরিবর্তন করার জন্য বা স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের কার্যকলাপে প্রভুত্বমূলক মধ্যস্থতা করলে তাকে হস্তক্ষেপ বলে। অধ্যাপক হল এর মতে, কোন রাষ্ট্রের কোন আচরণকে তখনই হস্তক্ষেপ বলা যায়, যখন সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের উপর বাধ্যতামূলকভাবে শক্তি প্রয়োগ করে তা কার্যকর করা হয়।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে ভারতীয় হস্তক্ষেপ মূল্যায়নঃ হস্তক্ষেপ সাধারণ অবৈধ বলে গণ্য হয়। তবে সর্বক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ অবৈধ বলে গণ্য হয় না । যদি কখনো কোন রাষ্ট্র মানবতা বিরোধী অপরাধ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করা আইনের দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য। কোন জাতি, ধর্ম বা বেসামরিক জন্যগণকে হত্যা বা নির্মূল করার উদ্দেশ্যে অপরাধ সংঘটিত করা হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে৷

১৯৭১ সালের তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের উপর যে' অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি কাজ চালিয়েছিল তা ছিল মানবতার বিরোধী অপরাধ।

সুতরাং বলা যায় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় হস্তক্ষেপ সমর্থন করা যায়৷

কোন অবস্থায় কোন দেশে জাতিসংঘ শক্তি ব্যবহার করতে পারেঃ যে অবস্থায় কোন দেশে জাতিসংঘ শক্তি ব্যবহার করতে পারে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ 

জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী বিনা কারণে জাতিসংঘ কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

কিন্তু অনুচ্ছেদ ৩৯-৫১ অনুযায়ী শান্তিভঙ্গ বা শান্তির প্রতি হুমকি বা আগ্রাসনমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

যদি কখনো কোন রাষ্ট্র মানবতা বিরোধী অপরাধ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করা আইনের দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য। কোন জাতি, ধর্ম বা বেসামরিক জন্যগণকে হত্যা বা নির্মূল করার উদ্দেশ্যে অপরাধ সংঘটিত করা হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে। সুতরাং বলা যায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বা আন্তর্জাতিক আইন লংঘনের প্রতিকারের জন্য বা শান্তির প্রতি হুমকি রোধ করার জন্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করতে পারে।

একে অন্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করাই হলো নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ একটি ব্যতিক্রম মতবাদ- আলোচনাঃ

এক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে অন্য রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এমন কি জাতিসংঘও বিনা কারণে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু এই ঘটনা বিশ্বকে বার বার দেখতে হয়। অর্থাৎ এক রাষ্ট্র তার প্রভাব বিস্তারের জন্য বা অন্য কারণে অন্য রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ করে। এই হস্তক্ষেপ কখনো কখনো সমর্থনযোগ্য হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ বলে গণ্য হয়। আন্তর্জাতিক নীতি হলো সকল রাষ্ট্র নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। নিম্নে হস্তক্ষেপ সহজ সাধ্য হওয়ার কারণ উল্লেখ করা হলোঃ

(১) জাতি, ধর্ম, ভাষার বিরোধের জন্য হস্তক্ষেপ : একই দেশে বিভিন্ন ধরনের অর্থাৎ বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন ভাষার লোক থাকতে পারে। এই ভিন্নতা অনেক সময় হস্তক্ষেপের আশংকা সৃষ্টি করে। এই সকল ক্ষেত্রে সাধারণ গৃহযুদ্ধ বেধে যায়। আর সেই সুযোগে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের আশংকা থাকে।

(২) মতাদর্শগত বিরোধের জন্য হস্তক্ষেপ : অযাচিত হস্তক্ষেপের অন্যতম একটি কারণ মতাদর্শগত বিরোধ। মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে ল্যাটিন আমেরিকার সবগুলি দেশেই যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে সামরিক হস্তক্ষেপ করে।

(৩) সামরিক সহায়তার মাধ্যমে হস্তক্ষেপ : বর্তমান বিশ্বে সামরিক শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলা যায় সামরিক শক্তির বলেই পৃথিবী নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সামরিক শক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে প্রভাব বিস্তার করছে।

(৪) অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে হস্তক্ষেপ : যে রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে যত শক্তিশালী সেই দেশের প্রভাব বা ক্ষমতা ততো বেশি প্রসারিত। এই অর্থ অনেক সময় অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণ হয়। বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব বিস্তার করছে।

উপসংহারঃ আন্তর্জাতিক আইনে হস্তক্ষেপ একটি বিশেষ ঘটনা। সাধারণত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অন্য রাষ্ট্রে অনধিকার চর্চা করা হয়। অযাচিত হস্তক্ষেপ কারো কাম্য নয়। তবে কখনো কখনো এই হস্তক্ষেপ অনিবর্য হয়ে পড়ে। আর সেক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ অবৈধ বলে গণ্য হয় না। বরং উক্ত হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন সমর্থিত বলে গণ্য হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক