প্রশ্নঃ প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ আইনের বিভিন্ন নীতি উল্লেখ কর অথবা কোন কোন শর্তে একটি রাষ্ট্র আশ্রয়দাতা রাষ্ট্রের নিকট থেকে একজন পলাতক আসামীকে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি করতে পারে? কখন একটি রাষ্ট্র বা দেশ প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করতে পারে?
ভূমিকাঃ প্রত্যেক মানুষের আইনের আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একজন মানুষ দেশের বাইরেও আইনের আশ্রয় লাভ করতে পারে। নিজ দেশে যদি কেউ নিজেকে নিরাপদহীন মনে করে তাহনে তিনি অন্য দেশে প্রবেশ করার বা বসবাস করার অধিকার লাভ করতে পারেন।
প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ আইনের বিভিন্ন নীতি অথবা কোন কোন শর্তে একটি রাষ্ট্র আশ্রয়দাতা রাষ্ট্রের নিকট থেকে একজন পলাতক আসামীকে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি করতে পারেঃ
যে সকল কারণে একটি রাষ্ট্র আশ্রয়দাতা রাষ্ট্রের নিকট থেকে একজন পলাতক আসামীকে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি করতে পারে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
(১) সন্ধি-চুক্তি থাকতে হবে : যে রাষ্ট্র কোন পলাতক আসামীকে ফেরত চাইবে এবং যে রাষ্ট্রের নিকট চাওয়া হয় এই উভয় দেশের মধ্যে বহিঃসমার্পণ বা প্রত্যার্পণ আইনের সন্ধি-চুক্তি থাকতে হবে।
(২) মারাত্মক অপরাধ হতে হবে : যে অপরাধের কারণে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হয় সেই অপরাধটি মারাত্মক অপরাধ হতে হবে।
(৩) তামাদি না হওয়া : যে অপরাধের কারণে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হয় সেই অপরাধটি তামাদি আইন দ্বারা অব্যহতিপ্রাপ্ত হলে তাকে ফেরত চাওয়া যাবে না।
(৪) ধর্মীয় অপরাধ না হওয়া : কোন ব্যক্তিকে ধর্মীয় কোন অপরাধের কারণে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত দেয়া যাবে না।
(৫) সামরিক অপরাধ না হওয়া : কোন ব্যক্তিকে সামরিক কোন অপরাধের কারণে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত দেয়া যাবে না।
(৬) রাজনৈতিক অপরাধ না হওয়া : কোন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক কোন অপরাধের কারণে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত দেয়া যাবে না।
(৭) অন্য অপরাধের বিচার না করা : প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত দেয়া হলে তাকে সংশ্লিষ্ট অপরাধ ছাড়া পূর্বে সংঘটিত অন্য কোন অপরাধোর বিচার করা যাবে না।
(৮) প্রাথমিকভাবে আমলযোগ্য অপরাধ (প্রাইমা ফেসী কেইস) হতে হবে : যে অপরাধের কারণে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হয় সেই অপরাধটি প্রাথমিকভাবে আমলযোগ্য অপরাধ হতে হবে।
(৯) সমার্পণ যোগ্য ব্যক্তি হতে হবে : যে ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনের ফেরত চাওয়া হয় সেই ব্যক্তিকে সমার্পণ যোগ্য হতে হবে।
(১০) সংশ্লিষ্ট অপরাধটি উভয় দেশে দণ্ডনীয় হতে হবে : যে অপরাধের কারণে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হয় সেই অপরাধটি উভয় দেশে দণ্ডনীয় অপরাধ হতে হবে।
যখন একটি রাষ্ট্র বা দেশ প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করতে পারেঃ যে সকল কারণে একটি রাষ্ট্র বা দেশ প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করতে পারে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
(১) সন্ধি-চুক্তি না থাকলে : যে সকল দেশের সাথে বহিঃসমার্পণ বা প্রত্যার্পণ বিষয়ে সন্ধি- চুক্তি নেই সেই সকল দেশ উক্ত দাবি প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।
(২) মারাত্মক অপরাধ হতে হবে : যে অপরাধের কারণে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হয় সেই অপরাধ যদি মারাত্মক অপরাধ না হয় তহলে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করা যায়।
(৩) তামাদি না হওয়া : যে অপরাধের কারণে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হয় সেই অপরাধটি যদি তামাদি আইন দ্বারা বারিত হয় তহলে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করা যায়।
(৪) ধর্মীয় অপরাধ হলে : কোন ব্যক্তিকে ধর্মীয় কোন অপরাধের কারণে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হলে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করা যায়।
(৫) সামরিক অপরাধ হলে : কোন ব্যক্তিকে সামরিক কোন অপরাধের কারণে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হলে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করা যায়।
(৬) রাজনৈতিক অপরাধ হলে : কোন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক কোন অপরাধের কারণে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হলে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করা যায়।
(৭) প্রাথমিকভাবে আমলযোগ্য অপরাধ (প্রাইমা ফেসী কেইস) না হলে : যে অপরাধের কারণে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হয় সেই অপরাধটি প্রাথমিকভাবে আমলযোগ্য অপরাধ না হলে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করা যায়।
(৮) সমার্পণ যোগ্য ব্যক্তি না হলে : যে ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনের ফেরত চাওয়া হয় সেই ব্যক্তিকে সমার্পণ যোগ্য না হয় তাহলে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করা যায়।
(৯) সংশ্লিষ্ট অপরাধটি উভয় দেশে দণ্ডনীয় না হলে : যে অপরাধের কারণে কোন ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণ আইনে ফেরত চাওয়া হয় সেই অপরাধটি যদি উভয় দেশে দণ্ডনীয় অপরাধ না হয় তাহলে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ দাবি প্রত্যাখান করা যায়।
উপসংহারঃ প্রত্যেক মানুষেরই অধিকার আছে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার। কোন ব্যক্তি যদি প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে নির্যাতনের আশংকা করে তাহলে তিনি অন্য দেশে আশ্রয়লাভের আবেদন করতে পারেন। আবার কোন ব্যক্তি গুরুতর অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে থাকবে তাও আইনের পরিপন্থি কারণ সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা তার পরিবার বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। এজন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রত্যার্পণ বা বহিঃসমার্পণ চুক্তি হয়ে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ