প্ৰশ্নঃ বিশেষজ্ঞ কারা? কখন একজন বিশেষজ্ঞের মতামত প্রাসঙ্গিক? তার মতামত কি আদালত মানতে বাধ্য? আদালত কি নিজেই একটি বিতর্কিত হস্তলেখা পরীক্ষা করতে এবং সে অনুযায়ী একটি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে? কেন বলা হয়ে থাকে যে, আদালতে দেয়া একজন বিশেষজ্ঞের মতামতের জবানবন্ধি সাক্ষ্য হিসাবে গণ্য করা হয়, তার পূর্বে জমা দেয়া রিপোর্ট নয়? [What persons are called experts? When is the opinion of an expert relevant? Is his opinion binding upon the court? Can the court itself examine disputed handwriting and decide a case accordingly? Why is it said that the depositions of the opinion of the expert in the court are treated as evidence, not the reports he submitted earlier?]
উত্তরঃ বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রাসঙ্গিতাঃ সাধারণতঃ বিশেষজ্ঞ বলতে কোন বিশেষ বিষয়ে দক্ষ এবং বিশেষভাবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে বুঝায়। কিন্তু সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী বিদেশী আইন অথবা বিজ্ঞান অথবা চারুকলার প্রশ্নে অথবা হস্তাক্ষর বা টিপসহির সনাক্তের ব্যাপারে যে সকল ব্যক্তিবর্গ বিশেষ পারদর্শী তাদেরকে বিশেষজ্ঞ বলা হয়।
বিদেশী আইন অথবা বিজ্ঞান অথবা চারুকলার প্রশ্নে অথবা হস্তাক্ষর বা টিপসহির সনাক্তকরণ প্রশ্নে যে সকল ব্যক্তিবর্গ বিশেষ পারদর্শী তাদের অভিমত অনুরূপ প্রশ্নে ৪৫ ধারা মতে প্রাসঙ্গিক।
বিশেষজ্ঞের মতামত আদালত মানতে বাধ্য কিনাঃ অন্যান্য সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত না হলে বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য আদালত অগ্রাহ্য করতে পারেন। অন্যান্য সাক্ষীর সাক্ষ্যের ন্যায় বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্যও পরীক্ষা করে দেখতে হয়। কারণ বিশেষজ্ঞও ভুল করতে পারেন। যেখানে একই বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞদের মতামত ভিন্ন হয় সেখানে যেই মতামতটি প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত সেটাই আদালতকে গ্রহণ করতে হয়। বিশেষজ্ঞ যে অভিমত দেন তার সুদৃঢ় ভিত্তি থাকতে হবে এবং এই ভিত্তির দৃঢ়তার উপর নির্ভর করে অভিমতের গুণাগুণ।
বিতর্কিত হস্তলেখা আদালত নিজে পরীক্ষা করে নিষ্পন্ন করতে পারে কিনাঃ বিতর্কিত হস্তলেখা সম্পর্কে তিনটি উপায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। প্রথমত, বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে (৪৫ ধারা)। দ্বিতীয়ত, বিতর্কিত হস্তাক্ষরের সাথে যিনি পরিচিত তাঁর সাক্ষ্য নিয়ে (৪৭ ধারা)। তৃতীয়ত, আদালতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হস্তাক্ষর গ্রহণ করে বা তার হস্তাক্ষরযুক্ত স্বীকৃত দলিল নিয়ে বিতর্কিত হস্তাক্ষরের সাথে মিলায়ে দেখা (৭৩ ধারা)।
তৃতীয় পদ্ধতিতে আদালত সন্তুষ্ট হলে সে মর্মে নিষ্পত্তি করতে পারেন। তবে কোন আসামীকে কিছু লেখার আদেশ দিতে হলে নিম্ন বর্ণিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।
(ক) হস্তান্তর নিয়ে আদালতে বিতর্ক থাকতে হবে; (খ) যাকে আদেশ দেয়া হবে তিনি আদালতের সম্মুখস্থ মামলার পক্ষ বা সাক্ষী থাকবেন; (গ) তিনি আদালতে উপস্থিত থাকবেন; (ঘ) বিতর্কিত হস্তাক্ষরের বিষয়টি বিচারের জন্য প্রয়োজনীয়।
আদালত আদেশ করলেই কোন আসামী হস্তাক্ষর দিতে বাধ্য থাকেন না। তবে তার এই অস্বীকৃতি আদালত অন্যান্য ঘটনার সহিত বিবেচনায় নিতে পারেন।
একজন বিশেষজ্ঞের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা হয় কিন্তু তার পূর্বে জমা রিপোর্ট নয়।
একজন বিশেষজ্ঞের মতামত প্রদান যথেষ্ট নয়। সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হতে হলে এই মতামতের ভিত্তি কি জানার জন্য আদালতে এসে তাঁকে জবানবন্দি দিতে হবে। পূর্বে তিনি যদি রিপোর্ট দিয়ে থাকেন তাহলে তা একটি দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে এবং একটি দলিল যেভাবে আদালতে প্রমাণ করা হয় সেভাবে করতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ