সর্বেশ্বরবাদ ও সর্ব-ধরেশ্বরবাদের পার্থক্য কী?


প্রশ্নঃ সর্বেশ্বরবাদ ও সর্ব-ধরেশ্বরবাদের পার্থক্য কী?

অথবা, সর্বেশ্বরবাদ সর্ব-ধরেশ্বরবাদের পার্থক্য নির্ণয় কর।

ভূমিকাঃ ঈশ্বরের সাথে জগৎ ও জীবের সম্পর্ক নিরূপণ একেশ্বরবাদী দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এ প্রশ্নটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, যার সমাধানে আজ পর্যন্ত সকল দার্শনিক একক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। প্রশ্নটিকে কেন্দ্ৰ করে দর্শনের ইতিহাসে প্রধানত চারটি মতবাদের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- (১) ঈশ্বরবাদ, (২) অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ, (৩) সর্বেশ্বরবাদ এবং (৪) সর্বধরেশ্বরবাদ। নিম্নে সর্বেশ্বরবাদ এবং সর্বধরেশ্বরবাদ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

সর্বেশ্বরবাদ ও সর্বধরেশ্বরবাদের পার্থক্যঃ এতক্ষণ আমরা সর্বেশ্বরবাদ ও সর্বধরেশ্বরবাদ আলোচনা করলাম। এখন আমরা এদের পার্থক্য আলোচনা করব।

(১) সর্বধরেশ্বরবাদ জীবের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে স্বীকার করে। কিন্তু সর্বেশ্বরবাদ শুধুমাত্র ঈশ্বরের সত্তাকে স্বীকার করে। জীব ও জগতের স্বতন্ত্র সত্তাকে স্বীকার করে না।

(২) সর্বধরেশ্বরবাদ অনুযায়ী ঈশ্বর একই সাথে জগৎ ও জীবের মধ্যে অতিবর্তী ও অন্তর্বর্তী। অপরপক্ষে সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী ঈশ্বর শুধুমাত্র জগতের মধ্যে অন্তর্বর্তী।

(৩) সর্বধরেশ্বরবাদ জগৎ ও ঈশ্বরের মধ্যে একটি আঙ্গিক সম্পর্ক স্বীকার করে জীব ও জগৎকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। অপরদিকে সর্বেশ্বরবাদ এ জগৎকে মিথ্যা মনে করে। তাদের মতে, ঈশ্বর ব্যতীত জগতের কোন অস্তিত্ব নেই।

(৪) সর্বধরেশ্বরবাদ জীবের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে স্বীকার করায় আত্মচেতনা, ধর্ম ও নৈতিকতার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে, কিন্তু সর্বেশ্বরবাদ মানুষের এসব অনিবার্য বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

(৫) সর্বধরেশ্বরবাদ ঈশ্বরকে জগতের অঙ্গ এবং জগৎকে ঈশ্বরের অঙ্গ মনে করে। কিন্তু সর্বেশ্বরবাদ এ জগৎকে ঈশ্বর এবং সবকিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্বের কথা বলে৷

পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, যদিও সর্বেশ্বরবাদ ও সর্বধরেশ্বরবাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য বিদ্যমান তবুও এদের মধ্যে একটা বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে— উভয়ই জগতের সাথে ঈশ্বরের একটা সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। সুতরাং উভয় মতবাদেরই একটা স্থায়ী গুরুত্ব আমাদের স্বীকার করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক