পুনঃবিবেচনা কি? কি কি কারণে একটি ডিক্রি বা আদেশ পুনঃবিবেচনা করা যেতে পারে? এর বিরুদ্ধে আপীল চলে কি?


প্রশ্নঃ
পুন: বিবেচনা কি? কি কি কারণে একটি ডিক্রি বা আদেশ পুনঃবিবেচনা করা যেতে পারে? পুনঃবিবেচনা মঞ্জুর বা অগ্রাহ্য হলে এর বিরুদ্ধে আপীল চলে কি?

পুন: বিবেচনা (Review): কোন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত সংক্ষুব্ধ পক্ষের আবেদনক্রমে সেই আদালত কর্তৃক পুনরায় বিবেচনা করাকে রিভিউ বলে। দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৪ ধারা এবং ৪৭ আদেশে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান রয়েছে। সকল রায় বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ করা যায় না। (ক) যে ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল চলে কিন্তু আপীল করা হয় নি, (খ) যে ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল চলে না, এবং (গ) স্বল্প এখতিয়ার আদালতের রেফারেন্স অনুযায়ী গৃহীত সিদ্ধান্ত এর বিরুদ্ধে রিভিউ এর আবেদন করা যায়।

যে সকল কারণে কোন মোকদ্দমার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ এর আবেদন করা যায় তা হলো নিম্নরূপঃ

১. কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উদ্ঘাটনঃ আবেদনকারী যদি এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্‌ঘাটন করতে পারে, যা মামলার রায়ের পূর্বে সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও তার গোচরীভূত হয় নি, অথবা যা তিনি আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন নি, তবে তিনি রিভিউ এর আবেদন করতে পারেন।

২. নতুন সাক্ষ্যের উদ্‌ঘাটনঃ রিভিউ এর জন্য আবেদনকারী পক্ষ যদি আদালতের সন্তুষ্টি সাধনে এই মর্মে বক্তব্য পেশ করতে পারেন যে, তিনি এমন কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যের উদঘাটন করেছেন, যা রায় প্রদানের পূর্বে তার জানা ছিল না এবং সে সাক্ষ্য বিবেচনা করলে হয়ত রায় পরিবর্তিত হতে পারতো তবে তার রিভিউ এর আবেদন গ্রহণ করা যায়।

৩. নথিপত্রে দৃশ্যত ভুলঃ আদালতের নথিপত্রে কোনরূপ ভুল বা ভ্রান্তি দৃশ্যমান হলে এবং এর ভিত্তিতে কোন রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদান করা হলে সংশ্লিষ্ট ক্ষুব্ধ ব্যক্তি রায়টি রিভিউ করার জন্য আদালতে আবেদন পেশ করতে পারে। এটা অবশ্য কোন তথ্যের ভুলের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নয়, তা আইনের ও হতে পারে। এটা অবশ্যই এমন ভুল হতে হবে যা শুধু রেকর্ডটি পর্যালোচনা করলেই পরিলক্ষিত হতে পারে।

৪. অন্য কোন পর্যাপ্ত কারণঃ পর্যাপ্ত কারণ বলতে কোন নির্দিষ্ট অজুহাতের সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ ও সম্পর্কযুক্ত পর্যাপ্ত বা যথেষ্ট কারণকে বুঝায়। আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, রিভিউ করার মত পর্যাপ্ত কারণ নেই, তবে আদালত রিভিউ এর আবেদন সরাসরি নাকচ করে দিতে পারেন। আপীলের বিধান থাকলে আপীল দায়ের করার পূর্বেই রিভিউ এর আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রায়, ডিক্রি বা আদেশের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে রিভিউ করার জন্য আবেদন পেশ করতে হবে। রিভিউ এর আবেদন পেশ করার পর আপীল দায়ের করা যেতে পারে, কিন্তু একবার আপীলের শুনানি রিভিউ আর অগ্রসর হতে পারে না। আবার রিভিউ এর আবেদন গৃহীত হলে এবং একটি নতুন ডিক্রি দেয়া হলে আপীলের আর শুনানি চলবে-না, কেননা যে ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল করা হয়েছে তা নতুন ডিক্রি দ্বারা রদ্ করা হয়েছে।

পুনঃবিবেচনা মঞ্জুর বা অগ্রাহ্য হলে এর বিরুদ্ধে আপীল চলে কি নাঃ ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ৪৭ এবং বিধি ৭য়ে বলা হয়েছে যে, পুনঃবিবেচনা অগ্রাহ্য হলে আপীল করা যাবে না, কিন্তু আবেদন মঞ্জুর করা হলে এর বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে।

নিম্নোক্ত কারণে আপীল করা যায়ঃ

১। (ক) আবেদনটি বিধি ২ এর পরিপন্থী হলে অর্থাৎ হাইকোর্ট বিভাগ ব্যতীত ডিক্রিদানকারী আদালত ছাড়া; (খ) আবেদনটি বিধি ৪ এর পরিপন্থী হলে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট পক্ষকে যথাযথভাবে সমন জ্ঞাতকরণ করা না হলে; (গ) যথার্থ কারণ ব্যতীত নির্দিষ্ট সময়ের পরে আবেদন করা হলে,

২। আবেদনকারীর গরহাজিরার দরুন আবেদনটি অগ্রাহ্য হয়ে থাকলে, অবশ্য গরহাজিরার যথার্থ কারণ থাকতে হবে।

৩। বিপরীত পক্ষকে আবেদন সম্পর্কে কোন নোটিশ দেয়া না হলে ২ উপ-বিধি অনুসারে কোন আদেশ দেয়া যাবে না।

পুনঃবিবেচনায় যদি নতুন ডিক্রি দেয়া হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা যেতে পারে। (৩৬ সি এস না জে 488)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক