প্রশ্নঃ বৈষ্ণব পদাবলী বলতে কোন সাহিত্যকে বোঝায়?
উত্তরঃ বৈষ্ণব সাহিত্য (পদাবলী) বাঙালির প্রাণের সাহিত্য। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের মোড়কে এদেশের মানব-মানবীর চিরন্তন প্রেমগীতি, মিলন-বিরহ এবং হৃদয়ের সুকুমার অনুভূতিসমূহের বিচিত্র চিত্রকে বৈষ্ণব সাহিত্যিকরা তুলে ধরেছেন। মানব হৃদয়ের তৃষ্ণা ও আর্তি, তৃপ্তি ও প্রশান্তি এ সাহিত্যে পাশাপাশি দীপ্তিমান। বৈষ্ণব সাহিত্যের অনুকরণে আমরা হৃদয়ের আর্তি প্রকাশ করি। মধ্যযুগে বিভিন্ন কবির হাতে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের আড়ালে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনলীলাকে প্রাধান্য দিয়েই রচিত হয়েছে বৈষ্ণব সাহিত্য। এ সাহিত্য বিষয় ও শিল্পগুণে সমুন্নত বলেই মধ্যযুগের সীমানা পেরিয়ে আধুনিক যুগে বাংলা ভাষাভাষী এমনকি বিশ্ব সাহিত্যের দরবারেও নন্দিত। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের ইতিহাসে যে গতানুগতিকতার ধূলিধূসর পথ ছেড়ে প্রেম, সৌন্দর্য ও অধ্যাত্মলোকের আলোকতীর্থে যাত্রা করেছে, তার প্রধান কারণ বৈষ্ণব সাহিত্য। বৈষ্ণব সাহিত্য কেবল সাহিত্যের একটি শাখা নয়, এটি একটি যুগও বটে। বৈষ্ণব সাহিত্যের ধন ও ধ্বনির প্রভাব মধুসূদন-রবীন্দ্রনাথকে পর্যন্ত প্রভাবিত করেছিল। এ সাহিত্য রোমান্টিক ও ভক্তি সাধনার সমন্বয়ে গঠিত। বৈষ্ণব সাহিত্যে শত শত কবি থাকলেও বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাস এ সাহিত্যের প্রধান উল্লেখযোগ্য কবি।
0 মন্তব্যসমূহ