প্রশ্নঃ নাস্তিকতাবাদের বিভিন্নরূপ আলোচনা কর ।
অথবা, ঈশ্বর অস্তিত্বের বিপক্ষের বিভিন্নরূপ লিখ।
ভূমিকাঃ প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রকৃতির রহস্যকে জানার দুর্বার আগ্রহ নিয়ে সামনে অগ্রসর হয়েছে। আদিকালে মানুষ ঈশ্বররের অস্তিত্ব সম্পর্কে অপক্ক, অস্পষ্ট ও দুর্বল ধারণা পোষণ করতো। কিন্তু মানুষের অদম্য স্পৃহা মানুষকে ইন্দ্ৰিয় জগত থেকে অতীন্দ্রিয় জগতে নিয়ে গিয়েছে। মানুষ যেহেতু পূর্ণময়, তাই সে পূর্ণতাকে খুঁজে বেড়ায়। "মানুষের এ অপূর্ণতা থেকেই ধারণা আসে এক অতিপ্রাকৃত শক্তির। আর এই অতিপ্রাকৃত শক্তিই হলো ঈশ্বর। কিন্তু ঈশ্বরের সাথে জগতের সম্পর্ক নির্ণয়ের ব্যাপারে দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। মূলত মতদ্বন্দ্বের সূচনা হয় ঈশ্বরের অবস্থানের বিষয়টিকে ঘিরে। কারো মতে, ঈশ্বর জগতের ভেতরে অবস্থান করেন, আবার কারো মতে, ঈশ্বর জগতের বাইরে অবস্থান করেন। ঈশ্বরের অবস্থান সম্পর্কিত মতবাদতগুলোর মধ্যে অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ একটি অন্যতম মতবাদ।
নাস্তিকতাবাদের রূপঃ নাস্তিকতাবাদের বিভিন্ন রূপ নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
(১) বিচার-বিশ্লেষণ বহির্ভূত নাস্তিকতাবাদঃ এ মতবাদ অনুসারে ঈশ্বর বা খোদার কোনো অস্তিত্ব নেই। জড় বা গতি বিশ্বজগতের মূল ভূত উপাদান। জড় ও গতি থেকে জগতের বিভিন্ন বস্তু ও জীবন সৃষ্টি হয়েছে এবং কালের প্রেক্ষাপটে বিবর্তনের ধারায় বর্তমান রূপ লাভ করেছে । তাই বিশ্বজগতের মূলে কোনো বুদ্ধিশক্তি / খোদা / ঈশ্বর নেই / অর্থাৎ এ মতবাদ ঈশ্বরের পক্ষে কোনো যুক্তি বিচার না করে চরমভাবে নাস্তিকতার ওপর ঝুঁকে পড়েছে।
(২) সন্দেহবাদী নাস্তিকতাবাদঃ এ মতবাদ অনুসারে ঈশ্বর বা খোদার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না, আবার স্বীকার করাও যায় না। কেননা, ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের কোনো প্রামাণ্য নথি আমাদের নেই। কারণ তাকে জানার ক্ষমতাও মানুষের নেই। অন্যদিকে এই বিশ্বের নিয়ম-শৃঙ্খলা ও বিশাল সৃষ্টি প্রতিনিয়ত সৃষ্টিকর্তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। তাই এ মতাবলম্বীয়া ঈশ্বর আছেন কী নেই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না । তাদের মতে মানুষ কিছুই জানে না।
(৩) বিচারমূলক নাস্তিকতাবাদঃ এ মতবাদ অনুসারে খোদার অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না কিংবা মানুষের পক্ষে খোদার অস্তিত্বকে জানার ক্ষমতাকেও অস্বীকার করা হয় না। শুধু বলা হয় যে, খোদার বা ঈশ্বরের সপক্ষে কোনো জৈব প্ৰমাণ দেয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ এটি নরমপন্থী নাস্তিকতাবাদ। এরা সরাসরি ঈশ্বরের বিরোধীতা না করলেও তার অস্তিত্বের ওপর বিশ্বাস রাখে না।
(৪) ব্যবহারিক নাস্তিকতাবাদঃ এ মতবাদ অনুসারে আমাদের ব্যবহারিক জীবনে খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের কোনো আন্তরিক সম্পর্ক নেই। কেননা, ঈশ্বর একটি অতীন্দ্রিয় সত্তা। তিনি আমাদের বাস্তব জগত জীবনের বাইরের ধারণা। তাই ঈশ্বরের প্রতি আমাদের অবিশ্বাস থাকলেও জীবন সুন্দরভাবে নির্বাহিত হতে পারে। তেমনি ঈশ্বরের বিশ্বাস নিয়ে অনেকে বিপদ-আপদে পড়তে পারে। তাই এটি ব্যবহারিক জীবন থেকে বিছিন্ন।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নাস্তিকতাবাদ যেহেতু জড়বাদেরই একটা রূপমাত্র। যেহেতু জড়বাদের মত এ মতবাদ ও বিভিন্নভাবে ত্রুটিপূর্ণ। নাস্তিকতাবাদ একটি সন্তোষজনক মতবাদ নয়। কেননা এটি সাধারণত মানুষের মনের মধ্যে সংশয়, দ্বিধা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। একই সাথে নাস্তিক ব্যক্তি মানসিক অশান্তি বা অতৃপ্তিতে ভোগে।
0 মন্তব্যসমূহ