প্রশ্নঃ একতরফা ডিক্রী কি? মামলার শুনানির দিন উভয় পক্ষের কিংবা যে-কোন এক পক্ষের অনুপস্থিত থাকার ফলাফল কি? যে বিবাদীর বিরুদ্ধে একতরফা ডিক্রী দেওয়া হয়েছে কিংবা অনুপস্থিত থাকার কারণে যে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হয়েছে তারা কি কি প্রতিকার লাভ করতে পারে? একটি পক্ষের অনুপস্থিতির জন্য সাধারণত কি কি কারণে উপযুক্ত কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়?
অথবা, (ক) “মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন বাদী এবং বিবাদী অনুপস্থিত”- এ পরিস্থিতিতে আদালত কি করবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের নিকট কি প্রতিকার আছে?
(খ) “মামলার চূড়ান্ত শুনানীর দিন বাদী উপস্থিত কিন্তু বিবাদী অনুপস্থিত”- মামলার ফলাফল কি হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের নিকট কি কি প্রতিকার খোলা আছে?
What is an ex-parte decree? What are the consequences of the non-appearance of both parties or either party on the day of the hearing of the suit? What remedies are available to a defendant, against whom an ex-parte decree has been passed, or to the plaintiff when the suit is dismissed for his non-appearance? What grounds are usually considered to the sufficient cause for the absence of a party?
Or, (a) "On the date of peremptory hearing both the plaintiff and the defendant are absent"-What shall the Court do in this situation? What remedy is available to an aggrieved party?
(b) "On the date of peremptory hearing plaintiff appears but the defendant is absent"-What will happen to the suit and what are the remedies open to the aggrieved party?
এক তরফা ডিক্রিঃ এক তরফা ডিক্রী হচ্ছে বিবাদীর অনুপস্থিতিতে প্রদত্ত ডিক্রী। দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ নম্বর আদেশের ৩ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে যে, মামলার শুনানির জন্য ডাক পড়লে যেক্ষেত্রে বাদী হাজির থাকে, কিন্তু বিবাদী অনুপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে আদালত মামলা এক তরফা বিচার করতে পারবেন।
শুনানির সময় উভয় পক্ষ অনুপস্থিত থাকলেঃ দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ নম্বর আদশের ১ নম্বর বিধি অনুযায়ী মামলার শুনানির দিনে পক্ষগণ স্বয়ং বা তাদের প্রতিনিধি আদালতে হাজির থাকবেন। কিন্তু শুনানির সময় কোন পক্ষই হাজির না থাকলে উক্ত আদেশের ৩ নম্বর বিধি অনুযায়ী আদালত মামলাটি ডিসমিস বা খারিজ করে দিতে পারেন। বাদী যদি আদালতের সন্তুষ্টিমত নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির না হবার উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেন তাহলে আদালত খারিজ রদের আদেশ দান করবেন এবং মামলার বিচারের জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। অন্যথায় বাদীকে নতুন ভাবে মামলা দায়ের করতে হবে। তবে তামাদি আইনের বিধান অনুযায়ী দাবিটি বাতিল হয়ে গেলে নতুন ভাবে মামলা দায়ের করা যাবে না।
শুনানির সময় বাদী উপস্থিত, কিন্তু বিবাদী অনুপস্থিত থাকলেঃ দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ আদেশের বিধান মতে যেক্ষেত্রে মামলার শুনানির সময় বাদী হাজির থাকে কিন্তু বিবাদী অনুপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে
(ক) যদি দেখা যায় যে, সমন যথারীতি জারি করা হয়েছে তবে আদালত এক তরফা নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
(খ) যদি দেখা যায় যে, সমন যথারীতি জারি হয় নি তবে আদালত বিবাদীর উপর পুনরায় সমন জারি করার নির্দেশে দিবেন।
(গ) যদি দেখা যায় যে, সমন যথারীতি জারি হয়েছে কিন্ত সময় এত কম দেয়া হয়েছে যে, নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার জন্য তা যথেষ্ট নয়, তবে আদালত পরবর্তী কোন নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত মামলার শুনানি স্থগিত রাখবেন এবং বিবাদীকে সে ভাবে জ্ঞাত করার জন্য নিদের্শ দিবেন।
যদি দেখা যায় যে, বাদীর ত্রুটির দরুন সমন যথারীতি জারি হয় নি অথবা যথেষ্ঠ সময় দেয়া হয় নি, তবে আদালত মামলার শুনানি স্থগিত রাখার দরুন যে খরচ হবে, তা বাদীকে বহন করার আদেশ দিতে পারে।
যদি আদালত মামলার এক তরফা বিচার মুলতবী রাখেন এবং পরবর্তী শুনানির সময় হাজির হয়ে তার পূর্ববর্তী অনুপস্থিতির কারণ দর্শায় তবে খরচ সম্পর্কে আদালত যে শর্ত আরোপ করবেন তসাপেক্ষে বিবাদী মামলার জবাব দিতে পারবে।
শুনানির সময় বিবাদী উপস্থিত, কিন্তু বাদী অনুপস্থিত থাকলেঃ মামলার শুনানির দিনে যদি বিবাদী হাজির হয় কিন্তু বাদী অনুপস্থিত থাকে, তবে দেওয়ানী কার্যবিধির ৯নম্বর আদেশের ৮ নম্বর বিধির বিধান সাপেক্ষে মামলাটি খারিজ হয়ে যেতে পারে। এই বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মামলার শুনানির জন্য ডাক পড়লে যদি বিবাদী হাজির হয়, কিন্তু বাদী হাজির না হয় এবং বিবাদী বাদীর দাবী বা এর অংশ মেনে না নেয় তাহলে আদালত মামলাটি খারিজের আদেশ দিবেন। কিন্তু বিবাদী যদি বাদীর দাবী সম্পূর্ণ বা আংশিক মেনে নেয় তবে সে অনুপাতে আদালত বিবাদীর বিরুদ্ধে ডিক্রী দান করবেন এবং দাবীর অবশিষ্ট অংশ সম্পর্কে মামলা খারিজের আদেশ দিবেন।
৮ বিধি অনুযায়ী যেক্ষেত্রে কোন মামলা আংশিক বা সামগ্রিকভাবে খারিজ হয় সেক্ষেত্রে একই কারণে বাদী নতুন মামলা দায়ের করতে পারবে না, কিন্তু খারিজের আদেশ রদ করার জন্য আবেদন করতে পারবে।
এক তরফা ডিক্রী রদঃ যে সকল কারণে এক তরফা ডিক্রী রদ করা যায় তার বিবরণ দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ নম্বর আদেশের ১৩ নম্বর বিধিতে দেয়া হয়েছে। এই বিধি অনুযায়ী যে আদালতে এক তরফা ডিক্রী দেয়া হয়েছে বিবাদী তা রদ করার জন্য উক্ত আদালতেই আবেদন জানাতে পারে।
এক্ষেত্রে বিবাদী যদি সন্তোষজনক ভাবে প্রমাণ করতে পারে যে, তার উপর যথারীতি সমন জারি করা হয নি, অথবা অপর কোন সঙ্গত কারণে মামলার শুনানির দিনে আদালতে হাজির হতে পারে নি, তবে আদালত খরচ সম্পর্কে উপযুক্ত শর্ত সাপেক্ষে উক্ত ডিক্রী রদের আদেশ দান করবেন এবং মামলাটি বিচারের জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। বিবাদী মামলা সম্পর্কে জ্ঞাত আছে এই অজুহাত যথেষ্ট নয় বিবাদীর উপর যথারীতি সমন জারি করতে হবে। [35 DLR 162 (AD)]
ডিক্রী যদি এরূপ ধরণের হয় যে, তা কেবল আবেদনকারী বিবাদীর উপর হতে রদ করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে অন্যান্য সকল বা যে কোন বিবাদীর উপর হতেও তা রদ করা যাবে।
এ ধরণের ডিক্রী রদের আবেদন থাকলে সেক্ষেত্রে অপর পক্ষকে অবশ্যই সে বিষয়ে নোটিশ দিয়ে এবং তার বক্তব্য শ্রবণ করে আদালত প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করবেন। সমন জারি হয়ে থাকলে এই ধরণের আবেদন একতরফা ডিক্রীর তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে করতে হয়। কিন্তু বিবাদী মামলার সমন না পেলে এক তরফা ডিক্রীর বিষয় জানার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে ডিক্রী রদ করার জন্য আবেদন করতে পারে।
তবে বাদী সমন গোপন রেখে প্রতারনামূলে এক তরফা ডিক্রী অর্জন করলে এ বিষয়ে সর্বপ্রথম জানার তারিখ হতে ৩ বছরের মধ্যে এক তরফা ডিক্রী রদের মামলা করা যায়। দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ নম্বর আদেশের বিধান মোতাবেক এরূপ ডিক্রী রদের আবেদন ছাড়াও বিবাদী দেওয়ানী কার্যবিধির ৯৬ ধারা অনুযায়ী এক তরফা ডিক্রীর বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবে। এছাড়া ৪৭ নম্বর আদেশের বিধান অনুযায়ী রায়টি পুনর্বিচারের (reviews) জন্য বিবাদী আবেদন জানাতে পারে।
১৯৮৩ সালের সংশোধনী দ্বারা ৯ আদেশের শেষে ১৫ নম্বর বিধি সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, ৪ নম্বর অথবা ৯ নম্বর বিধি অনুযায়ী মামলা খারিজের রদ হলে অথবা ১৩ বিধি অনুযায়ী এক তরফা ডিক্রী রদ হলে মূল মোকদ্দমা পুনরুজীবিত হবার পর যে পর্যায় হতে খারিজ বা এক তরফা ডিক্রী হয়েছিল সে পর্যায় হতে মামলা চলতে থাকবে। এভাবে উল্লিখিত বিধান সাপেক্ষে এক তরফা ডিক্রী রদ করা যায় এবং অন্যান্য প্রতিকার পাওয়া যায়।
0 মন্তব্যসমূহ