ওয়াইপো কী? ওয়াইপোর কার্যাবলি আলোচনা কর


প্রশ্নঃ ওয়াইপো কী? ওয়াইপোর কার্যাবলি আলোচনা কর। 

What is WIPO? Discuss the Functions of WIPO

ওয়াইপোঃ ওয়াইপো (World Intellectual Property Organization) হচ্ছে জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। তবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার অনেক পূর্বেই BIRP1 নামে একটি সংঠন ছিল যার উত্তরসুরি হচ্ছে ওয়াইপো। United International Bureau for Protection of Intellectual Property নামে ফরাসি ভাষায় সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে BIRPI.

১৮৮৩ সালের প্যারিস কনভেনশন এবং ১৮৮৬ সালের বার্ন কনভেনশন সাহিত্য ও শিল্পকর্মকে সংরক্ষণের জন্য প্রথম সম্মিলিত পদক্ষেপ। প্রথমদিকে কনভেনশন দুটিকে কার্যকর করার জন্য দুটি কার্যালয় ছিল– একটি শিল্প সম্পত্তির জন্য অপরটি কপিরাইটের জন্য। ১৮৯৩ সালে দুটি কার্যালয় একীভূত হয়। ১৯৬০ সালে এর সদর দপ্তর বার্ন থেকে জেনেভায় স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৬৭ সালের ১৪ জুলাই স্টকহোমসে একটি কনভেনশন হয় যেখানে ওয়াইপো প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কনভেনশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, সৃজনশীল কর্মকে উৎসাহিত করা, বিশ্বব্যাপী মেধাভিত্তিক সম্পদকে রক্ষা করা, শিল্পজাত সম্পত্তি এবং সাহিত্য ও শিল্পকর্ম সম্পর্কিত প্রশাসনকে আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যেই চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রগণ ঐকমত্যে উপনীত হন। ১৯৭৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে ওয়াইপো জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থায় রূপান্তরিত হয়। এভাবে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্যভুক্ত। অবশ্য অন্যান্য বিশেষায়িত সংস্থার ন্যায় এ সংগঠন স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং জাতিসংঘের সদস্য নির্বিশেষে যেকোনো রাষ্ট্র এ সংগঠনের সদস্য হতে পারে। যেমন, সুইজারল্যান্ড জাতিসংঘের সদস্য না হয়েও ওয়াইপোর সদস্য। সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে মাত্র ৭ জন কর্মচারী নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে এর কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৬৫০ জন এবং বিশ্বের ৯০ শতাংশ রাষ্ট্র এর সদস্য। সমগ্র বিশ্বের মেধাভিত্তিক সম্পদ রক্ষা ব্যবস্থা দেখভাল করা, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া এবং প্রশিক্ষণ দেওয়াই ওয়াইপোর মূল কাজ।

ওয়াইপোর কার্যাবলিঃ ওয়াইপোর কার্যাবলি মূলত তিন ধরনের। প্রথমত, নিবন্ধন কার্যাবলি; দ্বিতীয়ত, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি বৃদ্ধি করা ও তৃতীয়ত, মূল কর্মসূচি সম্পর্কিত কার্যাবলি। ওয়াইপোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে— সৃজনশীল কার্যাবলি উৎসাহিত করা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরে সহযোগিতা করা ও সাহিত্য ও শিল্পকর্মকে বিস্তৃত করার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে শিল্পজাত ও সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়তা প্রদান করা। ওয়াইপোর উপরিউক্ত কার্যাবলির মাধ্যমে এ সকল লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখে।

নিবন্ধন কার্যাবলির মাধ্যমে শিল্প সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে আবেদনকারী বা মালিকদেরকে প্রত্যক্ষভাবে সেবা দিয়ে থাকে। এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে প্যাটেন্ট কো-অপারেশন ট্রিটির অধীনে আন্তর্জাতিক আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়া করণ অথবা ট্রেডমার্কের আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধন বা শিল্প নকশা জমা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত কার্যাবলি। এরূপ আবেদনকারী ফিস দ্বারা ব্যয় নির্বাহ করা হয়– যা ওয়াইপোর বাজেটের প্রায় অর্ধেক।

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তঃসরকার ব্যবস্থার অধীনে প্যাটেন্ট ডকুমেন্ট সংগ্রহের ব্যবস্থা যা গবেষণা ও রেফারেন্সের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এগুলোতে যে সকল তথ্য সংগৃহীত থাকে তাতে প্রবেশ করা সহজতর করা অন্যতম। আন্তর্জাতিক শ্রেণিব্যবস্থা বিশেষের ব্যবস্থাপনা ও এগুলোকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা, অধিকতর বাস্তব পরিসংখ্যানের বিষয়গুলোকে একত্রীকরণ, শিল্পজাত সম্পত্তি ও কপিরাইট আইন প্রশাসনের আঞ্চলিক জরিপ পরিচালনাও উল্লেখযোগ্য।

ওয়াইপোর মূল কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তিগুলোর পর্যালোচনা ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে গুলোর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা এবং নতুন নতুন চুক্তি প্রণয়নের মাধ্যমে ওয়াইপোর কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক