ট্রেডমার্ক ও ট্রেডনামের মধ্যে পার্থক্য কী? ট্রেডমার্কের কার্যাবলি আলোচনা কর


প্রশ্নঃ ট্রেডমার্ক ও ট্রেডনামের মধ্যে পার্থক্য কী? ট্রেডমার্কের কার্যাবলি আলোচনা কর।

What are the differences between Trade Mark and Trade Name? Discuss the functions of a Trade Mark.

উত্তরঃ ট্রেডমার্ক ও ট্রেডনাম মূলত একই উদ্দেশ্য সাধন করে। কিন্তু এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। এগুলো নিম্নরূপ-

(১) ট্রেডমার্ক ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর দেওয়া হয় হেতু ৩টি পণ্যের উৎস চিহ্নিত করে; কিন্তু ট্রেডনাম কারবারের অস্তিত্বকে চিহ্নিত করে বিধায় এ নামে ব্যবসায়িক সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয়।

(২) ট্রেডমার্কের ক্ষেত্রে পণ্যের ভৌত অস্তিত্ব থাকতে হবে, কিন্তু ট্রেডনামের ক্ষেত্রে ভৌত অস্তিত্বের প্রয়োজন হয় না কারবার থাকলেই চলবে।

(৩) ট্রেডমার্ক ও ট্রেডনাম উভয়ই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হলেও ট্রেডমার্ক চোখ দিয়ে দেখা যায়, কিন্তু ট্রেডনাম কান দিয়ে শোনা যায়।

(৪) নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের মালিকের, অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং এটি সহজে লঙ্ঘন করা যায় না। অপরপক্ষে ট্রেডনাম ব্যবসায়িক সুনাম প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হয় এবং এটি সহজে লঙ্ঘন করা যায়।

ট্রেডমার্কের কার্যাবলিঃ আধুনিক ব্যবসায় পরিবেশে ট্রেডমার্ক মূলত ৪টি কাজ করে থাকে। প্রথমত, এটি পণ্য ও এর উৎসকে চিহ্নিত করে, দ্বিতীয়ত, পণ্যের অপরিবর্তিত গুণাগুণের নিশ্চয়তা দেয়, তৃতীয়ত, পণ্যের প্রচার করে এবং চতুর্থত, পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাসাধারণের মধ্যে একটা ইমেজ বা ধারণার সৃষ্টি করে।

১. উৎস জ্ঞাপনঃ একটা বিশেষ পণ্য বা সেবার উৎস কি তা জনগণকে জানানোই ট্রেডমার্কের মূল কাজ বলে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। উৎস বলতে কোন দেশের বা কোন অঞ্চলের তা বুঝায় না, এর উপাদনকারী বা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বুঝায়। যে পূর্ব ধারণা নিয়ে একজন ভোক্তা পণ্য ক্রয় করতে আসে এবং তার সেই ধারণায় ট্রেডমার্ক যদি পণ্যে দেখতে পায় তাহলে নিঃসন্দেহে সেই পণ্য তার ইপ্সিত, কেননা একই ট্রেডমার্ক সংবলিত পণ্য বিভিন্ন উৎস হতে আসতে পারে না। একই রকমের কিংবা প্রায় একই রকমের ট্রেডমার্ক বাজারে থাকতে পারে না। এ রকম বিভ্রান্তিমূলক বা অনুরূপ ট্রেডমার্ক থাকলে রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

২. অপরিবর্তিত গুণাগুণঃ একই ট্রেডমার্কের পণ্য যেখানেই পাওয়া যায় সর্বত্রই সে পণ্যের গুণাগুণ একই থাকবে। বাংলাদেশে টয়োটা গাড়ির মান এবং ভারতে টয়োটা গাড়ির মানের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না কিংবা রাজশাহীর হাঁসমার্কা নারকেল তেল, সিলেটের হাঁস মার্কা নারকেল তেল হতে পৃথক হবে না। ট্রেডমার্ক দ্বারা উন্নতমানের পণ্য বুঝায় না। এ সম্পর্কে ভোক্তা সাধারণের যদি কোন পূর্ব ধারণা থাকে তাহলে এ ট্রেডমার্ক সংবলিত পণ্যের মান সর্বত্র এবং সকল সময় একই থাকবে তা বুঝানো হয়।

৩. বিজ্ঞাপনী প্রচারঃ একই জাতীয় পণ্যের উৎপাদনকারী বা ব্যবসায়ী অনেক হতে পারে। একইভাবে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান অনেক হতে পারে। প্রত্যেকটার জন্য স্বতন্ত্র এবং বিভ্রান্তিকর সাদৃশ্যপূর্ণ নয় এমন মার্ক থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য তা সুবিধাজনক। ক্রেতারা যদি কোন বিশেষ পণ্য কিনতে আগ্রহী হয় তাহলে সে মার্ক সংবলিত পণ্য কেনার কথা প্রকাশ করবে। সেই ক্রেতারা অন্যদের উক্ত মার্কযুক্ত পণ্য কিনতে উদ্বুদ্ধ করবে। এভাবে ট্রেডমার্ক দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা তাদের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। কোন পণ্যের মান ভালো হলে সেই পণ্যের ট্রেডমার্ক দিয়ে ক্রেতা পণ্য কেনার অর্ডার দেয়। এভাবে ট্রেডমার্ক পণ্যের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪. ইমেজ বা ধারণার সৃষ্টি করেঃ যেহেতু একই জাতীয় পণ্যের বা সেবাপ্রদানকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা উৎপাদনকারী অনেক হতে পারে সেহেতু সে পণ্যের ওপর স্বতন্ত্র চিহ্ন দিয়ে তাদের পৃথক সত্তা জ্ঞাপন করে। বিভিন্ন মার্কের পণ্য বা সেবা গ্রহণ করে ক্রেতা বা ভোক্তাসাধারণের মধ্যে কোন মার্কের পণ্য বা সেবা কেমন সে সম্পর্কে একটা ইমেজের সৃষ্টি করে। এ ইমেজ যদি ইতিবাচক হয় তাহলে ঐ পণ্যের একটা ব্যবসায়িক সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর একটা ব্যবসায়িক সাফল্য আনে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক