কোন কোন ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করা হয় এবং প্যাটেন্ট প্রত্যাহার করা হয়?


প্রশ্নঃ কোন কোন ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করা হয় এবং প্যাটেন্ট প্রত্যাহার করা হয়? 

Compulsory license is granted and patant is revoked?

উত্তরঃ প্রায় সকল দেশেই অনেক প্যাটেন্টগ্রহীতা তার প্যাটেন্ট অধিকারের অপব্যবহার করে। হয়তো তিনি বিনা কারণে তার আবিষ্কারটি ব্যবহার করছেন না কিংবা বিদেশ হতে আমদানি করে অধিক মুনাফা নিয়ে তা দেশে বিক্রয় করছে কিংবা তার আবিষ্কারটি ব্যবহারের জন্য অন্য কাউকে লাইসেন্স প্রদান করছেন না কিংবা তার মৃত্যুতে তার আইনানুগ প্রতিনিধি সেটি ব্যবহার করছেন না। এতে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয় এবং জনগণ এ আবিষ্কারের সুফল হতে বঞ্চিত হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্যাটেন্ট প্রত্যাহার বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদানের বিধান করা হয়।

বাংলাদেশে প্রযোজ্য প্যাটেন্ট আইনের ২২, ২৩ এবং ২৫ ধারায় বিধান করা হয়েছে। ২২ ধারায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্যাটেন্টকৃত পণ্যের চাহিদা পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং যৌক্তিক শর্তে পূরণ হচ্ছে না এই মর্মে যেকোনো আগ্রহী ব্যক্তি সরকারের নিকট অভিযোগ করে সেই প্যাটেন্ট প্রত্যাহার করে তাকে লাইসেন্স প্রদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সরকার সঠিক মনে করলে তা আমলে নিবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্যাটেন্টগ্রহীতা যৌক্তিক শর্তে আবেদনকারীর লাইসেন্স প্রদান বা স্বত্বনিয়োগে রাজি না হলে স্ববিবেচনায় তা নিষ্পত্তি করবেন কিংবা সিদ্ধান্তের জন্য হাইকোর্টে রেফারেন্স হিসেবে পাঠাবেন। হাইকোর্ট বিভাগও যদি সন্তুষ্ট হন যে, প্যাটেন্টকৃত পণ্যের চাহিদা পর্যাপ্ত পরিমাণে পূরণ হচ্ছে না। কিংবা যৌক্তিক শর্তে লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে না। তাহলে হাইকোর্ট স্ববিবেচনায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিবেন। কিন্তু এরূপ বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান দ্বারা চাহিদা পর্যাপ্তভাবে পূরণ করা যাবে না বলে প্রতীয়মান হয় তবে সরকার বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ আদেশের মাধ্যমে প্যাটেন্ট প্রত্যাহার করতে পারবেন।

প্যাটেন্ট প্রদানের ৪ বছর অতিক্রান্ত হবার পর বাধ্যতামূলক লাইসেন্স ও প্যাটেন্ট প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে এবং প্যাটেন্টগ্রহীতা যদি তার অক্ষমতার কোনো সন্তোষজনক কারণ দেখাতে পারে তাহলে প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া যাবে না৷

২২ ধারার (৫) উপধারা মতে প্যাটেন্টকৃত পণ্যের চাহিদা পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং যৌক্তিক শর্তে পূরণ করা হয় নি বলে গণ্য করা হবে যদি-

(ক) প্যাটেন্টগ্রহীতার কারণে প্যাটেন্টকৃত পণ্যের প্রয়োজনীয় ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন না করলে এবং যৌক্তিক শর্তে সরবরাহ না করা হলে বা যৌক্তিক শর্তে লাইসেন্স প্রদান না করা হলে এবং এর ফলে বাংলাদেশে বিদ্যমান বা নতুন শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; কিংবা,

(খ) প্যাটেন্টকৃত পণ্য ক্রয়, ভাড়া বা ব্যবহার বা প্যাটেন্টকৃত প্রক্রিয়া ব্যবহার বা কার্যকর করতে প্যাটেন্টগ্রহীতা কর্তৃক আরোপিত শর্তের কারণে বাংলাদেশে কোনো ব্যবসায় বা শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

একইভাবে প্যাটেন্ট প্রত্যাহার ও বাধ্যতামূলক লাইসেন্স দেওয়া যায় যদি কোনো ব্যক্তির অভিযোগের পর তদন্তে প্রমাণিত হয় যে প্যাটেন্টগ্রহীতা প্যাটেন্ট অর্জনের পর হতে ক্রমাগতভাবে কমপক্ষে ৪ বছর প্যাটেন্টকৃত পণ্য বা প্ৰক্ৰিয়া বাংলাদেশের বাইরে উৎপাদন করা হয়েছে বা চালানো হয়েছে (-ধারা ২৩)। তবে সরকার প্যাটেন্টগ্রহীতার আবেদনক্রমে অনূর্ধ ২ বছরের মধ্যে প্যাটেন্টগ্রহীতা পর্যাপ্ত কারণ দেখায় বা বাংলাদেশে উৎপাদন বা প্রক্রিয়ায় শুরু করে, প্রত্যাহারের আদেশটি প্রত্যাহার করতে পারে।

প্যাটেন্টগ্রহীতাও ইচ্ছা করলে প্যাটেন্ট সমর্পণ করতে পারে এবং রেজিস্টার সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য শোনার পর রেজিস্টার প্যাটেন্ট প্রত্যাহারের আদেশ দিতে পারেন (- ধারা ২৪)।

যদি কোনো প্যাটেন্ট বা পদ্ধতি প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর বা সাধারণভাবে জনগণের জন্য অনিষ্টকর প্রতীয়মান হয় তাহলে সরকার সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে প্যাটেন্টটি প্রত্যাহার করতে পারেন (ধারা ২৫)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক