ইন্টারপ্লিডার মামলা কি? এ জাতীয় মামলা কে দায়ের করতে পারে? রেসজুডিকাটা কীভাবে কাজ করে?


প্রশ্নঃ (ক) ইন্টারপ্লিডার মামলা কি? এ জাতীয় মামলা কে দায়ের করতে পারে? ইন্টারপ্লিডার মামলার সহ-বিবাদীদের দাবির ভিত্তিতে দত্ত রায় কি ঐ বিবাদীদের মধ্যে রেসজুডিকাটা হিসেবে কাজ করে?

(খ) "মিঃ ফাহাদ”-এর হাতে ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা রহিয়াছে। যাহা “ফারাহ” এবং “মাশ্রী” উভয়ই নিজ নিজ প্রাপ্য বলিয়া দাবী করে। “মিঃ ফাহাদ” এই বিষয়ে “ফারাহ” এবং “মাশ্রী-এর বিরুদ্ধে একটি ইন্টারপীডার মোকদ্দমা দায়ের করে। এই মোকদ্দমার শুনানীর সময় জানা যায় যে, মোকদ্দমা দায়ের করার পূর্বেই “ফারাহ” উক্ত মোকদ্দমায় জয়ী হইলে “মিঃ ফাহাদ”- এর নিকট হইতে ১৫,০০০ (পনের হাজার) টাকা গ্রহণ করিয়া তাহার পূর্ণ দারী মিটিয়া গিয়াছে বলিয়া স্বীকার করিবে, এই মর্মে "মিঃ ফাহাদ” এবং “ফারাহ”-এর মধ্যে চুক্তি হইয়াছে। এক্ষেত্রে “মিঃ ফারাহ” কর্তৃক দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি কি রক্ষণযোগ্য? যুক্তি প্রদর্শন করিয়া আলোচনা কর।

(গ) নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে তুমি তোমার মক্কেলকে কি উপদেশ দিবে?

(i) ''ক-এর দখলে ১০,০০০ টাকা মূল্যের অলংকার রয়েছে এবং সে তা দাবি করছে না। 'খ' ও ‘গ', 'ক'-এর কাছ থেকে তা দাবি করছে, তাদের দাবি পরস্পর বিরোধী। 

(ii) 'ক' তোমার শহরের একজন গণ্যমান্য ব্যবসায়ী। তাকে পুলিশের একজন সাব- ইন্সপেক্টর বিদ্বেষপ্রসূতভাবে এবং ডাকাতির ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেফতার করল। তিন দিন আটক রাখার পর তাকে মুক্তি দেয়া হল। 'ক' সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চায়৷

উত্তরঃ (ক) ইন্টারপ্লিডার মামলাঃ প্রকৃত অর্থে ইন্টারপ্লিডার মামলা কোন দাবী আদায়ের মামলা নয় বরং প্রকৃত দাবীদার সাব্যস্ত করার জন্য মামলা। যখন একাধিক ব্যক্তি কোন অর্থ বা সম্পত্তি বাদীর নিকট দাবী করে এবং বাদীও তা প্রদান করতে প্রস্তুত থাকে। কিন্তু প্রকৃত দাবিদার সাব্যস্ত করা যায় না বিধায় বাদী তাদের বিরুদ্ধে এরূপ মামলা করে। এক্ষেত্রে বিবাদ সম্পর্কে বাদীর কোন আগ্রহ থাকে না। বিবাদীরা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে প্লিড করে এবং আদালত যাকে প্রকৃত দাবিদার সাব্যস্ত করেন বাদী তার নিকট সে অর্থ বা সম্পত্তি অর্পন করে।

দেওয়ানী কার্যবিধির ৮৮ ধারায় এ সম্পর্কে বিধান রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যদি দুই বা ততোধিক ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির নিকট একই পাওনা টাকা বা কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দাবী করে এবং যার নিকট দাবী করা হয় তার যদি উক্ত সম্পত্তির উপর খরচের দাবী ব্যতীত অন্য কোন দাবী দাওয়া না থাকে এবং সে যদি প্রকৃত মালিকের নিকট উক্ত সম্পত্তি বা অর্থ অর্পণ করতে প্রস্তুত থাকে তবে সেই সম্পত্তি বা অর্থ কার নিকট অর্পণ করতে হবে সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এবং নিজের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য উক্ত রূপ দাবীদারগণের সকলের বিরুদ্ধে ইন্টারপ্লিডার মামলা দায়ের করতে পারবে।

তবে উক্ত দাবীদারগণের অধিকার যদ্বারা নির্ধারিত হবে এমন কোন মামলা যদি বিচারাধীন থেকে থাকে সেক্ষেত্রে এরূপ ইন্টারপ্লিডার মামলা দায়ের করা যাবে না।

ইন্টাপ্লিডার মামলায় আরজি সম্পর্কে বিধানঃ ইন্টারপ্লিডার মামলার ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত থাকতে হবে তা দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৫ নম্বর আদেশে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই আদেশের ১ নম্বর বিধি অনুযায়ী অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে নিম্নোক্তগুলি আরজিতে উল্লেখ করতে হবেঃ-

ক. মামলাটির বিষয়বস্তুতে বাদীর খরচের দাবী ছাড়া অন্য কোন স্বার্থ নিহিত নেই।

খ. বিবাদীগণ (দুই বা ততোধিক) পৃথকভাবে তাদের দাবী উত্থাপন করেছে এবং এ দাবীগুলি পরস্পর বিরোধী বলে গণ্য হয়৷

গ. বাদী ও বিবাদীগণের মধ্যে কোন যোগসাজস নেই। 

ঘ. বাদীর নিকট পাওনা অর্থ বা সম্পত্তি আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট বিবাদীর নিকট প্রদান করার ইচ্ছা থাকতে হবে।

ইন্টারপ্লিডার মামলার বিচার সম্পর্কিত বিধানঃ দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৫ নম্বর আদেশের ৩ হতে ৫ নম্বর বিধিতে এ মামলার বিচার সম্পর্কিত বিধান রয়েছে। ৩ নম্বর বিধি মোতাবেক যেক্ষেত্রে ইন্টারপ্লিডার মামলার অন্যতম বিবাদী মামলার বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সেক্ষেত্রে ইন্টারপ্লিডার মামলার বিচারকারী আদালত অপর মামলার বিচারকারী আদালতকে বিষয়টি অবগত করলে উক্ত অপর মামলার বিচারকারী আদালত এর বিচার স্থগিত রাখবেন। স্থগিত মামলায় তার যে খরচ হয়েছে ইন্টারপ্লিডার মামলায় এ সম্পর্কে উপযুক্ত বিধান দেয়া হবে। এরূপ বিধান দেয়া না হলে উক্ত খরচ ইন্টার প্লিডার মামলার খরচের সাথে যোগ করা হবে।

এই আদেশের ৪ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে যে, প্রথম শুনানিতে আদালত এই মর্মে আদেশ দিতে পারেন যে, মামলার বিষয় বস্তু সম্পর্কে বিবাদীদের প্রতি সকল দায় হতে বাদীকে মুক্তি দেয়া হলো। এরূপ ক্ষেত্রে বাদীর অনুকূলে খরচের ডিক্রী দিয়ে বাদীকে মামলার পক্ষ হতে খারিজ করা হবে।

অথবা, আদালত যদি ন্যায় বিচার ও কার্যের সুবিধার্থে প্রয়োজন মনে করেন, তবে মামলাটির চূড়ান্ত নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সকলকেই পক্ষ হিসেবে ধরতে পারেন। পক্ষগণের স্বীকারোক্তির ফলে আদালতের পক্ষে উপরিউক্ত রূপ সিদ্ধান্ত প্রদান সম্ভব না হলে আদালত নিম্নরূপ আদেশ দিতে পারবেন- 

(ক) পক্ষগণের মধ্যে এক বা একাধিক বিচার্য বিষয় প্রণয়ন করা হোক এবং এর বিচার করা হোক; এবং

(খ) মূল বাদীর পরিবর্তে বা তদুপরি অন্য কোন দাবীদারকে বাদী পক্ষে শামিল করা হোক এবং অতঃপর আদালত সাধারণ পদ্ধতিতে মামলাটির বিচার কার্য চালায়ে যাবেন৷

এই আদেশের ৫ বিধি অনুযায়ী কোন এজেন্ট তার প্রধানের বিরুদ্ধে বা কোন প্রজা তার ভূ-স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে উক্ত প্রধানের বা ভূ-স্বামীকে তাদের স্বত্বাধীনে দাবীদার কোন ব্যক্তি ব্যতীত অপর কারো সাথে ইন্টারপ্লিডার মামলায় লিপ্ত হতে বাধ্য করতে পারবে না। যেমন ক তার এজেন্টরূপে খ এর নিকট এক বাক্স মনিমুক্তা জমা রাখে। গ দাবী করে যে ক তার নিকট হতে অন্যায়ভাবে মনিমুক্তাগুলি নিয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে খ, অতঃপর ক ও গ এর বিরুদ্ধে ইন্টারপ্লিডার মামলা দায়ের করতে পারবেন না। ইন্টারপ্লিডার মামলার সহ-বিবাদীদের দাবির ভিত্তিতে প্রদত্ত রায় ঐ বিবাদীদের মধ্যে রেস জুড়িকাটা হিসেবে কাজ করে।

(খ) বাদী এবং বিবাদীর মধ্যে ষড়যন্ত্র থাকার কারণে মোকদ্দমাটি রক্ষণ যোগ্য নয়। দেওয়ানি কার্যবিধির ৩৫ আদেশের (১) বিধির (গ) দফায় বলা হলো যে, বাদী বা কোন বিবাদীর মধ্যে যোগসাজোশ থাকবে না। এই ক্ষেত্রে ফারাহ ও ফাহাদ এর মধ্যে আর্থিক সুবিধার যোগসাজশ থাকায় মোকদ্দমাটি রক্ষণযোগ্য নয়।

(গ) (i) 'ক' এর দখলে ১০ হাজার টাকা মূল্যের অলংকার রয়েছে। এটা তার নিজের বলে দাবি করে না। 'খ' ও 'গ' এ অলংকার দাবি করছে। ‘খ' বলে এটা তার আবার ‘গ' বলে এটা তার। এ অবস্থায় ‘খ’ বা ‘গ' কে প্রকৃত দাবিদার এবং কার নিকট 'ক' এ অলংকার হস্তান্তর করবে তা স্থির করার জন্য 'ক' ‘খ’ ও ‘গ' এর বিরুদ্ধে একটি ইন্টারপ্লিডার মামলা করবে এবং রায়ের ভিত্তিতে ক অগ্রসর হবে।

(ii) 'ক' শহরের একজন গণ্যমান্য ব্যবসায়ী। একজন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর বিদ্বেষপ্রসূতভাবে এবং ডাকাতির ভিত্তিহীন অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে। ৩ দিন আটক করার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ‘ক' ঐ পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়।

এক্ষেত্রে দেওয়ানী আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য টর্টের মামলা করা যায়। পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর যদি আইনের আওতায় গ্রেফতার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত ফৌজদারী মামলা বা Malicious prosecution নামে টর্টের মামলা করা যায়। আইনের আওতায় না নিয়ে পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর স্ব-উদ্যোগে ও নিজ দায়িত্বে 'ক' কে গ্রেফতার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে False Imprisonment বা মিথ্যা অবরুদ্ধকরণ নামে টর্টের মামলা করা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক