কপিরাইট লঙ্ঘন বলতে কী বুঝ? কপিরাইট লঙ্ঘনের প্রতিকার কী?


প্রশ্নঃ কপিরাইট লঙ্ঘন বলতে কী বুঝ? কপিরাইট লঙ্ঘনের কী কী প্রতিকার আছে তা আলোচনা কর। 

What do you mean by infringement of copyright? Discuss the remedies available for copyright infringement.

কপিরাইট লঙ্ঘনঃ কপিরাইটের মালিকের সংশ্লিষ্ট কর্মটির ওপর একগুচ্ছ অধিকার রয়েছে। যে কর্মটি পুনঃপ্রকাশ বা পুনরুৎপাদন হতে পারে কিংবা হস্তান্তর করতে পারে কিংবা অন্যকে তার ব্যবহার করার অনুমতি দিতে পারে। তার প্রাধিকার ছাড়া বোর্ড কর্তৃক বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রাপ্ত না হয়ে যদি অন্য কেউ সে অধিকার ভোগ করে তাহলে সে কপিরাইট লঙ্ঘন করেছে বলা যায়।

কোন কপিরাইট আইনে ৭১ ধারায় কপিরাইট লঙ্ঘনের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যেকোনো কর্মের কপিরাইট লঙ্ঘিত হয়েছে বলে গণ্য হবে-

(ক) যখন কোন ব্যক্তি এ আইনের অধীন কপিরাইটের মালিক বা রেজিস্টার কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতীত বা অনুরূপভাবে প্রদত্ত লাইসেন্সের শর্ত বা এ আইনের অধীন কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত কোন শর্ত লঙ্ঘনপূর্বক- (i) এমন কিছু কারণ যা করার একচেটিয়া অধিকার এ আইন দ্বারা কপিরাইটের মালিককে দেওয়া হয়েছে; অথবা (ii) অবগত না থাকার এবং সন্দেহের কোন যুক্তিসংগত কারণের অনুপস্থিত, মুনাফার উদ্দেশ্যে জনসাধারণ্যে এমন কোন কর্ম সম্পাদনের জন্য কোন স্থান ব্যবহারের অনুমতি দেন যাতে কর্মটির কপিরাইট লঙ্ঘন করে, যদি না এটি প্রমাণ করা যায় যে, বিষয়টি সম্বন্ধে তিনি অবগত ছিলেন না বা অনুরূপ সম্পাদন কপিরাইটের লঙ্ঘন হবে মর্মে বিশ্বাস করার কোন সুক্তিসংগত কারণ ছিল না; অথবা,

(খ) যখন কোন ব্যক্তি-  (i) কর্মটির অধিকার লঙ্ঘনকারী অনুলিপি বিক্রয় বা ভাড়া করেন বা বিক্রয় বা ভাড়া করান বা বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শন করেন বা বিক্রয়ের কিংবা ভাড়া, প্রস্তাব করেন; কিংবা (ii) বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অথবা কপিরাইটের মালিকের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় এরূপ পরিসীমায় বিতরণ করেন; কিংবা (iii) বাণিজ্যিকভাবে জনসাধারণ্যে প্রদর্শন করেন; কিংবা (iv) কোন কর্মের অধিকার লঙ্ঘিত অনুলিপি বাংলাদেশে আমদানি করেন।

কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্রতিকারঃ কপিরাইট লঙ ঘনের ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় প্রকার প্রতিকারের বিধান রয়েছে ৭৬ ধারায় এবং ৮২ হতে ৮৭ ধারায় ফৌজদারি প্রতিকারের বিধান রয়েছে।

দেওয়ানি প্রতিকারঃ ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে কোন কর্মের কপিরাইট অথবা এ আইনের অধীন অর্থীত অন্যকোনো অধিকার লঙ্ঘন করা হয়, সেক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারী নিষেধাজ্ঞা ক্ষতিপূরণ, হিসাব এবং আইনে প্রদত্ত অন্যান্য প্রতিকার পেতে পারেন।

তবে বিবাদী যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, লঙ্ঘনের তারিখে সংশ্লিষ্ট কর্মে কপিরাইট বিদ্যমান ছিল তা তিনি জানতেন না এবং ঐ কর্মের কপিরাইট ছিল না মর্মে তার বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ ছিল, তাহলে বাদী নিষেধাজ্ঞা এবং স্বত্ব লঙ্ঘনের মাধ্যমে বিবাদী কর্তৃক অর্জিত মুনাফার ব্যাপারে কোন আয়েশ ছাড়াই প্রতিকার পেতে পারেন। ৮১ ধারার বিধান অনুযায়ী একমাত্র জেলা জজ আদালতে মামলাটির বিচার করা যাবে।

ফৌজদারি প্রতিকারঃ ৮২ ধারা মতে, যে ব্যক্তি চলচ্চিত্র ব্যতীত অন্যকোনো কর্মের কপিরাইট ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তিনি ৫০ হাজার হতে ২ লক্ষ টাকার অর্থদণ্ড এবং ৬ মাস হতে ৪ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ধারায় মুনাফার উদ্দেশ্যে কপিরাইট লঙ্ঘন করেন নি তাহলে আদালত এ দণ্ড হ্রাস করতে পারেন।

চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে কপিরাইট লঙ্ঘন করলে বা করতে সহায়তা করলে ১ বছর হতে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১ লক্ষ টাকা হতে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

৮৩ ধারার বিধানমতে এরূপ অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে পরবর্তী প্রত্যেকটি অপরাধের জন্য ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দণ্ডনীয় হবেন।

তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারে যে ব্যবসায়িক মুনাফার উদ্দেশ্যে এটা সংঘটিত হয় নি তাহলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের পরিমাণ আদালত হ্রাস করতে পারেন।

যদি কোন ব্যক্তি কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামের লঙ্ঘিত কপি অনুলিপি করে প্রকাশ ও বিতরণ করেন তাহলে তিনি ৬ মাস থেকে ৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে এবং ১ লক্ষ হতে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। (ধারা ৮৪)

কম্পিউটারে কোন লঙ্ঘিত কপি কেউ ব্যবহার করলে ৬ মাস থেকে ৩ বছর কারাদণ্ড অথবা ১ লক্ষ হতে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। (ধারা – ৮৪)

তবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এটা না হলে থাকলে অন্যূন ৩ মাস কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে।

৮৫ ধারায় বিধান রয়েছে যে, কোন ব্যক্তি কপিরাইট বিদ্যমান রয়েছে এমন কোন কর্মের অধিকার ইচ্ছাকৃতভাবে কপিরাইট লঙ্ঘনকারী অনুলিপি তৈরি করার উদ্দেশ্যে কোন প্লট তৈরি করেন তা দখলে রাখেন বা কপিরাইটের মালিকের সম্মতি ব্যতিরেকে ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ব্যক্তিগত মুনাফার উদ্দেশ্যে ঐরূপ কোন কর্মের জনসাধারণ্যে সম্পাদনের কারণ ঘটান, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ২ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্থ হোক বা না হোক, আদালতের নিকট যদি এরূপ প্রতীয়মান হয় যে তার দখলে থাকা প্লেট অধিকার লঙ্ঘনকারী অনুলিপি তৈরি করার উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত তাহলে সকল অনুলিপি বা প্লেট ধ্বংস করার বা মালিকের নিকট অর্পণ করা বা যেরূপ উপযুক্ত মনে করে আদালত সেরূপ নির্দেশ দিতে পারবেন। (ধারা-৮৬)

কপিরাইট রেজিস্টারে কোন মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশ করলে বা মিথ্যা সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হলে ৮৭ ধারার বিধান অনুসারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনূর্ধ্ব ২ বছর কারাদণ্ডে বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ড হতে পারে।

প্রশাসনিক প্রতিকারঃ আদালতের মাধ্যমে উপরিউক্ত প্রতিকার ছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে কপিরাইট বোর্ডের মাধ্যমে ও প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। কপিরাইট লঙ্ঘনকারী কোন কর্ম আমদানি বন্ধ করার জন্য কপিরাইট বোর্ডের রেজিস্টারের নিকট আবেদন করা যায়। ধারা ১২ (৫) এ বলা হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৮০ ও ৪৮২ ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কপিরাইট বোর্ড একটি দেওয়ানি আদালতরূপে গণ্য হবেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বোর্ডের নিকট উপস্থাপিত সকল বিষয় দণ্ডবিধির ১৯৩ ও ২২৮ ধারার অর্থে বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম হিসেবে গণ্য হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক