প্রশ্নঃ ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ৫ ধারার বিধানের বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা কর এবং ইহা প্রয়োগের ক্ষেত্র বা পরিধি নির্দেশ কর।
Discuss critically the provision of Section 5 of the Limitation Act, 1908, and indicate the Scope of its application.
অথবা, বিলম্ব মওকুফ বলতে কি বুঝ? কোন্ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মোকদ্দমায়, আপীলে ও দরখাস্তে তামাদি আইনের ৫ ধারা প্রয়োগ করা যায়?
What do you understand by the term condition of delay? Under What circumstances Section 5 of the Limitation Act can be applied in a Suit. appeal and application?
উত্তরঃ ১৯০৮ সালের তামাদি আইনে নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে মোকদ্দমা বা আপীল দায়ের কিংবা দরখাস্ত দাখিল করতে হবে। এই সময়-সীমা অতিক্রান্ত হলে তামাদির কারণে বারিত বিধায় তা আর আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না। এর কিছু ব্যতিক্রম করা হয়েছে, এই আইনের ৫ ধারায় যেথায় এই বিলম্ব মওকুফ করে সময় সীমা বর্ধিত করা যায়। তাই তামাদির জন নির্ধারিত সময় সীমা অতিক্রান্ত হবার পরও কোন মামলা, আপীল বা দরখাস্ত পেশ করা হলে ৫ ধারার বিধান মতে উপযুক্ত কারণ সাপেক্ষে তা গ্রহণ করাকে বিলম্ব মওকুফ বলে।
৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোন আপীল বা রিভিশনের দরখাস্ত বা আপীল করার অনুমতি প্রার্থনার দরখাস্ত বা অন্য কোন দরখাস্তের ক্ষেত্রে যদি এই ধারা প্রযোজ্য হয় তবে সেই ধারা অনুসারে অথবা বর্তমানে বলবৎযোগ্য অন্য কোন আইন অনুসারে নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পর দায়েরকৃত আপীল বা দরখাস্ত গৃহীত হবে, যদি আপীলকারী বা দরখাস্তকারী এই মর্মে আদালতের সন্তুষ্টি সাধন করে যে, নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আপীল বা দরখাস্ত দাখিল না করার যথার্থ কারণ ছিল।
এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, তামাদির নির্ধারিত সময় গণনার ব্যাপারে আপীলকারী বা দরখাস্তকারী যদি হাইকোর্টের কোন আদেশ কার্য প্রণালীর বা রায়ের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়, তবে এই ধারার অর্থ অনুসারে তা যথেষ্ট কারণ বলে গণ্য করা হবে।
পরিধিঃ ৫ ধারার বিধানটি শুধুমাত্র আপীল এবং রিভিশনসহ উল্লেখিত অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। মুল মামলার ক্ষেত্রে এই ধারাটি প্রযোজ্য হবে না। ক্ষেত্র বিশেষে মামলা দায়ের করার সময় সীমা রয়েছে ৬ মাস হতে ১২ বছর কিন্তু আপীলের ক্ষেত্রে সময়সীমা ৭ দিন হতে ৬ মাস পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আপীলের ক্ষেত্রে যেহেতু সময় সীমা কম সেহেতু যুক্তিসঙ্গত কারণে আপীল দায়ের করতে বা রিভিশনসহ অন্যান্য দরখাস্ত দাখিল করতে বিলম্ব হলে আদালত স্বীয় বিবেচনাধীনে এই ধারা মতে সেই বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন। প্রতিটি মামলা বিশেষ পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকে আদালত স্বীয় বিবেচনা ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। কোন কারণগুলি যথার্থ বা যথেষ্ট বিবেচিত হবে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন বিধি বিধান নেই। তবে বিভিন্ন মামলার সিদ্ধান্ত হতে দেখা যায় যে, অসুস্থতা, কারারুদ্ধ থাকা, রায়ের বা ডিক্রীর নকল তৈরীতে আদালতের কর্মচারী ভুল, কৌশলীর ভুল, সরল বিশ্বাসে ভুল, আদালতে মামলা দায়ের ইত্যাদিকে যথেষ্ট কারণ হিসেবে গন্য করা হয়েছে। তথ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা বা ভুল যথেষ্ট কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে আইন সম্পর্কে ভুল গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আইন সম্পর্কিত ভুলটি যদি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং আদালতের সন্তষ্টিচিত্রে তা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় তবে তা যথেষ্ট কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ‘যথেষ্ট কারণ’ প্রশ্নই নিজেই একটা তথ্যের প্রশ্ন আইনের প্রশ্ন নয়। কাজেই ঘটনার আলোকেই এটা সাব্যস্ত করতে হবে। যুক্তিসঙ্গত যত্ন ও মনোযোগ সহকারে কাজ করলে বিলম্বটি এড়ানো সম্ভব হতো এরূপ বুঝতে পারলে আদালত সেটাকে যথেষ্ট কারণ হিসেবে গ্রহণ না করতে পারেন। এ ছাড়া ৫ ধারা অনুসারে বিলম্ব মওকুফের জন্য আবেদন করলে বিলম্বের প্রত্যেক দিনের জন্য ব্যাখ্যা বা কৈফিয়ত দিতে হবে।
এভাবে আপীল, রিভিশন ও অন্যান্য দরখাস্ত সমূহের ক্ষেত্রে যা তামাদি আইনে নির্ধারিত সময় সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে ৫ ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে।
0 মন্তব্যসমূহ