দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি কাকে বলে? কখন এবং কোন অবস্থায় দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি কার্যকর হয়? “আই এ্যাম এ্যালোন" মামলার উপর মন্তব্য কর


প্রশ্নঃ দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি কাকে বলে? কখন এবং কোন কোন অবস্থায় দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি কার্যকর হয়? এ প্রসঙ্গে “আই এ্যাম এ্যালোন" মামলার সিদ্ধান্তের উপর মন্তব্য কর। 

ভূমিকাঃ সমুদ্র আইন একটি আন্তর্জাতিক আইন। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে সমুদ্রের ব্যবহার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং সমুদ্রের নানামূখী ব্যবহারের ফলে এর গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্র সংক্রান্ত দু'টি কনভেনশন হলো ১৯৫৮ সালের জেনেভা কনভেনশন এবং ১৯৮২ সালের সমুদ্র সংক্রান্ত কনভেনশন। জ্যামাইকার মন্টিগো বে-তে ১৯৮২ সালের কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হয় ।

দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি (Hot pur suit) কাকে বলে : কোন দেশের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র অঞ্চলে অন্য কোন দেশের জাহাজ নিয়ম লংঘন করলে বা কোন অপরাধ করলে উক্ত জাহাজটিকে আটক করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হওয়াকে দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি (Hot pur suit) বলে।

সমুদ্র সংক্রান্ত দু'টি কনভেনশনেই দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতির বিধান উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের জেনেভা কনভেনশনের ২৩ অনুচ্ছেদে এবং ১৯৮২ সালের সমুদ্র সংক্রান্ত কনভেনশনের ১১১ অনুচ্ছেদে উক্ত নীতি উল্লেখিত হয়েছে।

কখন এবং কোন কোন অবস্থায় দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি কার্যকর হয় : সমুদ্র সংক্রান্ত দু'টি কনভেনশনেই দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতির বিধান উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের জেনেভা কনভেনশনের ২৩ অনুচ্ছেদে এবং ১৯৮২ সালের সমুদ্র সংক্রান্ত কনভেনশনের ১১১ অনুচ্ছেদে উক্ত নীতি উল্লেখিত হয়েছে।

উক্ত নীতি অনুযায়ী যখন দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি কার্যকর হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

(১) পশ্চাদ্ধাবন শুরু : কোন দেশের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র অঞ্চলে অন্য কোন দেশের জাহাজ নিয়ম লংঘন করলে বা কোন অপরাধ করলে উক্ত জাহাজটিকে আটক করার জন্য দ্রুত সে অগ্রসর হওয়াকে দ্রুত পশ্চাদ্ধাবন নীতি (Hot pur suit) বলে। আঞ্চলিক সমুদ্রের মধ্য থেকে পশ্চাদ্ধাবন আরম্ভ করতে হয়। পশ্চাদ্ধাবনের ধারাবাহিকতা ভঙ্গ না হলে আঞ্চলিক সমুদ্রের বাইরেও তা অব্যাহত রাখা যায়।

(২) পশ্চাদ্ধাবন শেষ : পশ্চাদ্ধাবন করার ফলে উক্ত জাহাজ যদি তার নিজের দেশের বা অন্য শুন কোন দেশের আঞ্চলিক সীমানায় পৌঁছে যায় তাহলে তাকে আর পশ্চাদ্ধাবন করা যায় না। 

(৩) পশ্চাদ্ধাবনের পদ্ধতি : প্রথমে বিদেশী জাহাজটিকে থামার সংকেত দিতে হবে। চোখে দেখা যায় এমন দুরত্ব থেকে সংকেত দিতে হবে। অতঃপর পশ্চাদ্ধাবন করতে হবে। 

(৪) পশ্চাদ্ধাবনের মাধ্যম : যুদ্ধ জাহাজ বা সামরিক বিমান দ্বারা পশ্চাদ্ধাবন করা যাবে। 

(৫) ক্ষতিপূরণ প্রদান : পশ্চাদ্বাবনের উপযুক্ত কারণ না থাকা সত্ত্বেও উন্মুক্ত সমুদ্রে কোন জাহাজ থামানো হলে বা গ্রেফতার করা হলে সেই জাহাজের যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে দায়ী জাহাজকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

“আই এ্যাম এ্যালোন” মামলার সিদ্ধান্তের উপর মন্তব্য কর : আই এ্যাম এ্যালোন (I am alone) নামক একটি জাহাজকে কেন্দ্র করে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। উক্ত জাহাজটির আইনত মালিক ছিলেন একজন কানাডিয়ান নাগরিক। আবার কার্যত মালিক ছিলেন একজন আমেরিকান নাগরিক। জাহাজটি আমেরিকার জলসীমায় মাদকদ্রব্য চোরাচালানে লিপ্ত থাকায় আমেরিকান নৌ-পুলিশ তাকে থামার জন্য সংকেত দেয়। কিন্তু জাহাজটি গভীর সমুদ্রে পালিয়ে যেতে থাকে। আমেরিকান নৌ-পুলিশ পশ্চাদ্ধাবন করে এবং আবারও থামার জন্য সংকেত দেয়। কিন্তু জাহাজটি না থামার কারণে আমেরিকান পুলিশ মর্টার নিক্ষেপ করে। যারফলে সকল মানুষসহ উক্ত জাহাজটি ডুবে যায় এবং ধ্বংস হয়ে যায়। 

মামলার রায় : এই মামলাটি প্রথমে শালিসী আদালতে উত্থাপন করা হয়। উক্ত আদালত কানাডার অনুকূলে ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় প্রদান করেন। আদালত বলেন জাহাজটিতে কিছু শূন্য ড্রাম ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই জাহাজ ধ্বংস করা ন্যায়সঙ্গত হয়নি। এটি যুক্তিযুক্ত পশ্চাদ্ধাবন নয়। সুতরাং আমেরিকান কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকবে।

উপসংহার : সমুদ্র আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আইন। সমুদ্রের উপকূলে যে সকল রাষ্ট্র অবস্থিত সেই সকল দেশ এই আইনের বিশেষ সুবিধা ভোগ করে। আঞ্চলিক সমুদ্র এলাকার মধ্যে অন্যান্য দেশ শুধু নির্দোষ ভাবে চলাচল করতে পারে। অন্য কোন সুবিধা ভোগ করতে পারে না। কিন্তু উন্মুক্ত সমুদ্রে সকল দেশ সমান অধিকার ভোগ করে থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক