দেওয়ানী আদালত কী? যে সকল এখতিয়ার দেওয়ানী আদালত কর্তৃক প্রয়োগ করা হয় তার বিশদ আলোচনা কর


প্রশ্নঃ কিভাবে দেওয়ানী আদালতের সংজ্ঞা দিবে? যে সকল এখতিয়ার দেওয়ানী আদালত কর্তৃক প্রয়োগ করা হয় তার বিশদ আলোচনা কর।

দেওয়ানী আদালতঃ দেওয়ানী আদালতের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া নেই। তবে দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে নিষেধ না থাকলে দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী মামলার বিচার করবে। এতে এরূপ ইঙ্গিত বহন করে যে, যে সকল আদালত দেওয়ানী মামলার বিচার করে সেগুলো হচ্ছে দেওয়ানী আদালত। দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী নাগরিক বিবাদ বিচার করার এখতিয়ার এবং সম্পত্তি ও শরীরের অধিকার নির্ণয় করার এখতিয়ার যে আদালতের রয়েছে সে আদালত হচ্ছে দেওয়ানী আদালত। 

অর্থাৎ ফৌজদারী আদালত ও সামরিক আদালত ব্যতীত যে সকল আদালত মুলতঃ নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত মামলার বিচার করে থাকে সেগুলোই হচ্ছে দেওয়ানী আদালত। নাগরিক অধিকারটি বেশ ব্যাপক ও বিস্তৃত বিষয়। যেখানে একজন নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্বের প্রশ্ন জড়িত থাকে সেখানে এর লংঘনের ক্ষেত্রে দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার উদ্ভব হয়।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতগুলি নিম্নরূপঃ
(১) সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ;
(২) জেলা জজ আদালত;
(৩) সাবজজ্‌ আদালত; ও 
(৪) সহকারী জজ্ আদালত।

আদালতের এখতিয়ারঃ আদালতের এখতিয়ার বলতে আদালতের বিচার করার আইনগত ক্ষমতাকে বুঝায়। আদালতের এখতিয়ার সম্পর্কে দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ হতে ২০ ধারায় বিধি-বিধান রয়েছে। ১৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকটি দেওয়ানী মোকদ্দমা এর বিচার করার ক্ষমতাসম্পন্ন সর্ব নিম্ন আদালতে দায়ের করতে হবে।

এই ধারাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, যে কোন মোকদ্দমা একটি আদালতে দায়ের করার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে, উক্ত আদালতের তা বিচার করার আইনগত ক্ষমতা রয়েছে অর্থাৎ তার এখতিয়ার রয়েছে। দেওয়ানী আদালতের এখতিয়ারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- (ক) বিষয় বস্তুর উপর এখতিয়ার (খ) আর্থিক এখতিয়ার (গ) আঞ্চলিক এখতিয়ার।

(ক) বিষয়বস্তুর উপর এখতিয়ারঃ দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, নিষেধ না থাকলে আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী মামলার বিচার করবেন। কাজেই যে বিষয়টি দেওয়ানী প্রকৃতির নয় বা যে বিষয়টি দেওয়ানী প্রকৃতির হলেও আইনে নিষেধ করা হয়েছে এরূপ বিষয়ের বিচার করার এখতিয়ার দেওয়ানী আদালতের নেই, অতএব বিরোধীয় বিচার্য বিষয়ের উপর আদালতের এখতিয়ার আছে কি না অত্র আইনের ৯ ধারার আলোকে তা সাব্যস্থ করতে হবে।

একটি বিচার্য বিষয়ের উপর অনেক আদালতের এখতিয়ার থাকতে পারে। তারমধ্যে ১৫ ধারার বিধান মতে, সর্ব নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। সর্ব নিম্ন আদালত বলতে সহকারী জজ বা মুন্সেফ আদালত বুঝায় না। যেমন Guardian and ward act এর অধীনে কোন মামলা গ্রহণ ও বিচার করার এখতিয়ার জেলা জজ আদালতের৷ তাই এক্ষেত্রে সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না।

(খ) আর্থিক এখতিয়ারঃ মামলার দাবী কত টাকার সেটার উপরও আদালতের এখতিয়ার নির্ভরশীল। Suit i Valuation Act অনুযায়ী ৪০০,০০০ (চার লক্ষ) অধিক হলে সেটার বিচার করবেন যুগ্ম জজ আদালত। এর নিচের অঙ্কের দাবী হলে সহকারী জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে করতে হবে।

১৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, মোকদ্দমার বিষয়বস্তু যে- আঞ্চলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত এবং আর্থিক এখতিয়ার সম্পন্ন সে আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। আদালতের আর্থিক এখতিয়ার পরিবর্তনশীল। বর্তমানে প্রচলিত এখতিয়ার নিম্নরূপঃ

ক. সহকারী জজ আদালত-২০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা।

খ. সিনিয়ার সহকারী জজ আদালত ৪০০,০০০ (চার লক্ষ) টাকা।

গ. যুগ্ম জেলা জজ আদালত- যে কোন মূল্যমান। 

ঘ. জেলা জজ আদালত- শুধু আপীল গ্রহণ করবেন ৫০০,০০০(পাঁচ লক্ষ) হাজার টাকা মূল্যমান পর্যন্ত।

ঙ. পারিবারিক অধ্যাদেশের আওতায় পারিবারিক আদালত যে কোন মূল্যমান।

(গ) আঞ্চলিক এখতিয়ারঃ অন্যান্য এখতিয়ার সাপেক্ষে মোকদ্দমার বিষয়বস্তু যে আদালতের আঞ্চলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত সে আদালতে নিম্নোক্ত মোকদ্দমাগুলি দায়ের করতে ১৬ ধারা হবে।

(ক) স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, ভাড়া বা মুনাফা সহ বা ব্যাতিরেকে; 

(খ) স্থাবর সম্পত্তির বাঁটায়ারা; 

(গ) স্থাবর সম্পত্তির বন্ধক সম্পর্কিত পাওনা আদায়ের; মোকদ্দমা, নিলাম বিক্রি ও রেহেন খালাস মোকদ্দমা; 

(ঘ) স্থাবর সম্পত্তিতে অন্য কোন অধিকার বা স্বার্থ উদ্ধারের মোকদ্দমা; 

(ঙ) স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কিত ক্ষতিপূরণের মোকদ্দমা; 

(চ) দেনার দায়ে ক্রোক করা অস্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের মোকদ্দমা ৷

কোন স্থাবর সম্পত্তি দুই কিংবা ততোধিক আদালতের হলে এবং সেক্ষেত্রে এখতিয়ার নির্ধারণের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে, এগুলির যে কোন আদালত ইচ্ছা করলে এরূপ অনিশ্চয়তার বিষয় নথীতে উল্লেখ করে- মোকদ্দমা গ্রহণ ও বিচার করতে পারবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক