প্রশ্নঃ ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধিকে কেন ধারা, আদেশ ও বিধিতে বিভক্ত করা হয়েছে? এদের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধিতে সন্নিবেশিত ধারা, আদেশ ও বিধির মধ্যে পার্থক্যঃ দেওয়ানী কার্যবিধি মূলতঃ একটি পদ্ধতিগত আইন। কিন্তু সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এটা শুধুমাত্র পদ্ধতিগত আইন নয় বরং মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সংমিশ্রণ বলা যায়। ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি প্রচলনের পূর্বে ১৮৮২ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি প্রচলিত ছিল। অবশ্য এ সম্পর্কিত প্রথম কোড হচ্ছে ১৮৫৯ সালের এ্যাক্ট ৮। এগুলিতে অনেক ধারা ছিল এবং এর বিন্যস্ত ও বিজ্ঞানসম্মত ছিল না। এই আইনকে সুসংহত ও পরিমার্জিত করার উদ্দেশ্যে ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনটি প্রণীত হয়েছে।
জুডিকেচার এ্যাক্টের চেতনায় এ কার্যবিধির বিন্যাস করা হয়। এই কার্যবিধির দু'টি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে ১৫৫ টি ধারা এবং দ্বিতীয় অংশে ৫০টি অর্ডার বা আদেশ ও তৎসহ অনেক বিধি ও উপবিধি রয়েছে। ধারাগুলিকে এই কার্যবিধির দেহ বলা হয়। এতে মৌল বিষয়গুলি নির্দেশিত থাকে। কাজেই এগুলিকে মূল আইন বলা হয়। এ ই আইনগুলি কিভাবে প্রয়োগ করা হবে তার বিধান রয়েছে অর্ডার বা আদেশের অন্তর্ভুক্ত বিধি ও উপবিধিগুলিতে। ধারাগুলি সংসদ কর্তৃক প্রণীত বিধায় এগুলি সংসদ ব্যতীত সংশোধন করা যায় না। ১৮৬৫ সালের চার্টারে হাইকোর্টকে আদেশ ও বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়। সেই ধারাকে অব্যাহত রেখে ১২২ ধারায় বিধান রাখা হয়েছে। সে মোতাবেক আদেশ ও বিধিসমূহের সংশোধনের ক্ষমতা সুপ্রীম কোর্টের উপর ন্যস্ত রয়েছে।
এই আইনের ১২৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, অত্র আইনের কোন বিধান লংঘন না করেও হাইকোর্ট তার মূল দেওয়ানী এখতিয়ার প্রয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করতে পারেন। মনি বনাম রামচরণ [(১৯১৬) ৪৩ কলকাতা ১৪৮] মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ধারাগুলি সাধারণ মূলনীতি নির্দেশ করে। অপরদিকে, এগুলি কিভাবে প্রয়োগ করা যায় বিধিগুলি তার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু ধারার সহিত বিধির কোন অসঙ্গতি পরলক্ষিত হলে ধারাটি প্রযোজ্য হবে।
0 মন্তব্যসমূহ