অথবা, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে বিশ্বতাত্ত্বিক যুক্তি সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
ভূমিকাঃ ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণবিষয়ক বিশ্বতাত্ত্বিক বা কার্যকারণ যুক্তিটি খুবই প্রাচীন। প্লেটো প্ৰথম এ যুক্তির অবতারণা করেন। তারপর এরিস্টটল এ যুক্তিকে প্রমাণ সহকারে উপস্থাপন করেন। তারপর মধ্যযুগীয় দার্শনিক টমাস একুইনাসের হাতে এ যুক্তিটি পরম পরিণতি লাভ করে। আধুনিক যুগে ডেকার্ট, লাইবনিজ, ফ্রিন্ট, মার্টিনিউ প্রমুখ দার্শনিক এ যুক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে যে যুক্তিটি জগৎকে একটি প্রদত্ত বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে, জগতের ব্যাখ্যার জন্য জগতের প্রকৃতি থেকেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করে তাকেই বিশ্বতাত্ত্বিক বা কারণবিষয়ক যুক্তি বলে। নিচে আমরা বিভিন্ন দার্শনিকের দেয়া যুক্তি আলোচনা করব।
একুইনাসের ব্যাখ্যাঃ মধ্যযুগের দার্শনিক টমাস একুইনাসের মতে, ঈশ্বর যদি অস্তিত্বশীল না হতেন তাহলে জগৎও অস্তিত্বশীল হত না। চোখ খুললেই আমরা যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জগৎ দেখতে পাই তা-ই প্রমাণ করে ঈশ্বর অস্তিত্বশীল। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে তার পাঁচটি যুক্তি রয়েছে। তিনি গতি থেকে গতির আদি চালক, আদি কারণ, সম্ভাব্য থেকে অসম্ভাব্য সত্তা, মূল্যের ক্রম থেকে পরমমূল্য এবং বিশ্বের পরিকল্পনাকারী হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।
ডেকার্টের ব্যাখ্যাঃ আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক ডেকার্টের মতে, সকল ঘটনাই কার্যকারণ শৃঙ্খলে বাঁধা। স্বয়ম্ভু, অসীম, পূর্ণাঙ্গ সত্তারূপী ঈশ্বরের ধারণারও কোন না কোন কারণ রয়েছে। সৃষ্টজগৎ ও আমরা সসীম বলে তার কারণ সৃষ্টজগৎ বা আমরা হতে পারি না। ঈশ্বরই হচ্ছেন ঈশ্বরের ধারণার কারণ। তাই ঈশ্বর অবশ্যই অস্তিত্বশীল।
লাইবনিজের ব্যাখ্যাঃ দার্শনিক লাইবনিজ কার্যকারণ যুক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণে আগ্রহী। তার মতে, সমস্ত নিখিল ভুবনই একটি অনিয়ত প্রকৃতি। কিন্তু এই অনিয়তপ্রকৃতি অলীক নয়। বাস্তবে এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি। এ অস্তিত্বের কারণে আমাদের মতো অনিয়ত প্রাণী বা বস্তু নয়- এর কারণ অবশ্যই এমন কিছু যা নিয়ত অনপেক্ষ ও স্বয়ম্ভু। আর তা হচ্ছে ঈশ্বর।
পরিশেষঃ পরিশেষে মার্টিনিউর মতে, জগৎ ঈশ্বরের ইচ্ছার ফল। এই ঐশ্বরিক ইচ্ছা হচ্ছে একধরনের পরমশক্তি যা ভৌতিক জগতে পূর্ণাঙ্গভাবে ক্রিয়াশীল এবং জগতের প্রতিটি ঘটনার নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাই জগৎ ও আমাদের আদি কারণ হিসেবে ঈশ্বর অস্তিত্বশীল।
0 মন্তব্যসমূহ