প্রশ্নঃ 'মামলা খারিজ' ও ‘এক তরফা ডিক্রী' শব্দগুলির অর্থ ব্যাখ্যা কর এবং একতরফা ডিক্রীর আদেশ রদের পদ্ধতি বর্ণনা কর।
উত্তরঃ দেওয়ানী মামলা শুনানীর সময় উভয় পক্ষের উপস্থিতি প্রয়োজন কোন পক্ষ যদি উপস্থিত না থাকে তবে অর্ডার ৯. বিধি ৩ অনুযায়ী আদালত মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন। যদি বিবাদী হাজির হয়, কিন্তু বাদী অনুপস্থিত থাকে, তবে অর্ডার ৯, বিধি-৮ অনুযায়ী মামলাটি খারিজ হয়ে যেতে পারে। এই বিধিতে উল্লেখ আছে যে, মামলার শুনানীর জন্য ডাক পড়লে যদি বিবাদী হাজির হয়, কিন্তু বাদী গর হাজির হয় এবং বিবাদী বাদীর দাবী সম্পূর্ণ বা আংশিক মেনে না নেয় তাহলে আদালত মামলাটি খারিজের আদেশ দিবেন।
এক তরফা ডিক্রী হচ্ছে বিবাদীর অনুপস্থিতে প্রদত্ত ডিক্রী। দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ নম্বর আদেশের ৩ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে যে, মামলার শুনানির জন্য ডাক পড়লে যেক্ষেত্রে বাদী হাজির থাকে, কিন্তু বিবাদী অনুপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে আদালত মামলা এক তরফা বিচার করতে পারবেন। একেই বলে এক তরফা ডিক্রী।
এক তরফা ডিক্রী রদঃ যে সকল কারণে এক তরফা ডিক্রী রদ করা যায় তার বিবরণ দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ নম্বর আদেশের ১৩ নম্বর বিধিতে দেওয়া হয়েছে। এই বিধি অনুযায়ী যে আদালতে এক তরফা ডিক্রী দেয়া হয়েছে বিবাদী তা রদ করার জন্য উক্ত আদালতেই আবেদন জানাতে পারে।
এক্ষেত্রে বিবাদী যদি সন্তোষজনক ভাবে প্রমাণ করতে পারে যে, তার উপর যথারীতি সমন জারি করা হয়নি, অথবা, অপর কোন সঙ্গত কারণে মামলার শুনানীর দিনে আদালতে হাজির হতে পারেনি, তবে আদালত খরচ সম্পর্কে উপযুক্ত শর্ত সাপেক্ষে উক্ত ডিক্রী রদের আদেশ দান করবেন এবং মামলাটি বিচারের জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। বিবাদী মামলা সম্পর্কে জ্ঞাত আছে এই অজুহাত যথেষ্ট নয় বিবাদীর উপর যথারীতি সমন জারি করতে হবে। [35 DLR 162 (AD)]
ডিক্রী যদি এরূপ ধরনের হয় যে, তা কেবল আবেদনকারী বিবাদীর উপর হতে রদ করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে অন্যান্য সকল বা যে কোন বিবাদীর উপর হতেও তা রদ করা যাবে।
এ ধরণের ডিক্রী রদের আবেদন থাকলে সেক্ষেত্রে অপর পক্ষকে অবশ্যই সে বিষয়ে নোটিশ দিয়ে এবং তার বক্তব্য শ্রবণ করে আদালতে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করবেন। সমন জারি হয়ে থাকলে এই ধরনের আবেদন একতরফা ডিক্রীর তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে করতে হয়। কিন্তু বিবাদী মামলার সমন না পেলে এক তরফা ডিক্রীর বিষয় জানার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে ডিক্রী রদ করার জন্য আবেদন করতে পারে।
তবে বাদী সমন গোপন রেখে প্রতারণামূলক এক তরফা ডিক্রী অর্জন করলে এ বিষয়ে সর্বপ্রথম জানার তারিখ হতে ৩ বছরের মধ্যে এক তরফা ডিক্রী রদের মামলা করা যায়। দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ নম্বর আদেশের বিধান মোতাবেক এরূপ ডিক্রী রদের আবেদন ছাড়াও বিবাদী দেওয়ানী কার্যবিধির ৯৬ ধারা অনুযায়ী এক তরফা ডিক্রীর বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবে। এছাড়া ৪৭ নম্বর আদেশের বিধান অনুযায়ী রায়টি পুনর্বিচারের ( reviews) জন্য বিবাদী আবেদন জানাতে পারে।
১৯৮৩ সালের সংশোধনী দ্বারা ৯ আদেশের শেষে ১৫ নম্বর বিধি সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, 8 নম্বর অথবা ৯ নম্বর বিধি অনুযায়ী মামলা খারিজের রদ হলে অথবা ১৩ বিধি অনুযায়ী এক তরফা ডিক্রী রদ হলে মূল মোকদ্দমা পুনরুজ্জীবিত হবার পর যে পর্যায় হতে খারিজ বা এক তরফা ডিক্রী হয়েছিল সে পর্যায় হতে মামলা চলতে থাকবে। এভাবে উল্লিখিত বিধান সাপেক্ষে এক তরফা ডিক্রী রদ করা যায় এবং অন্যান্য প্রতিকার পাওয়া যায়।
0 মন্তব্যসমূহ