প্রশ্নঃ সমন কি? কখন কার উপর সমন ইস্যু করা হয়? সমন জারীর বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি আলোচনা কর।
উত্তরঃ সমন (Summons): সমনের আভিধানিক অর্থ হলো তলব করা বা ডাকা। কাহারও বিরুদ্ধে কেহ মোকদ্দমা দায়ের করলে লিখিতভাবে যে কাগজের দ্বারা তাকে তলব করা হয় বা ডাকা হয় তাকে সমন বলে। একইভাবে কোন সাক্ষীকে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য লিখিতভাবে যে কাগজের মাধ্যমে হাজির হতে বলা হয় বা ডাকা হয় তাকে সমন (Sammons) বলে।
যাকে এবং যখন সমন ইস্যু করা যায় (When and to whom summons can be issued): বিবাদীর প্রতি এবং সাক্ষীর প্রতি সমন ইস্যু করা হয়। আর্জি দাখিলের সময় বাদীকে সমনের কপি এর আর্জির কপি দাখিল করতে হয় এবং এইরূপ দাখিল করা হলে মোকদ্দমা দায়েরের পরই সমন ইস্যু করা হয়। বিবাদী হাজির হয়ে লিখিত জবাব দাখিল করলে মামলার যখন চূড়ান্ত শুনানীর তারিখ নির্ধারিত হয় তখন সাক্ষীদের প্রতি সমন ইস্যু করা হয়।
সমন জারির পদ্ধতি (Modes of service of Summons): সমন জারি সংক্রান্ত নিয়মাবলী ৫নং আদেশের ৯নং বিধি হতে ৩০ নং বিধিতে বিবৃত রয়েছে। বিবাদীর উপর প্রধানত তিন ভাবে সমন জারি করা যায়-
১. বিবাদীর উপর ব্যক্তিগতভাবে সমন জারি;
২. বিবাদীর অনুপস্থিতিতে প্রতিকল্পরূপে সমন জারি; এবং
৩. ডাকযোগে পত্র প্রেরণের মাধ্যমে সমন জারি।
১. বিবাদীর উপর ব্যক্তিগতভাবে সমন জারিঃ আদেশ ৫ এর ৯ হতে ১৯ পর্যন্ত বিধিতে এ সম্পর্কে বিধান রয়েছে। এ বিধিগুলির সারমর্ম হচ্ছে এই যে, যে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে, বিবাদী যদি সেই আদালতের এখতিয়ারভূক্ত এলাকার মধ্যে বসবাস করে, অথবা বিবাদীর পক্ষ হতে সমন গ্রহণ করার কেউ থাকে, তবে আদালতের কর্মচারী দ্বারা বাদীর খরচে তার উপর সমন জারি করা হবে। বিবাদীর সংখ্যা একাধিক হলে প্রত্যেকের উপর সমন জারি করতে হবে। বিবাদীকে না পাওয়া গেলে কিংবা তার পক্ষে সমন গ্রহণ করার কোন প্রতিনিধি না থাকলে, বিবাদীর সহিত বসবাসকারী পরিবারের কোন সাবালক পুরুষ সদস্যের উপর বিবাদীর পক্ষে জারি করা যাবে। তবে গৃহভৃত্য পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হবে না।
সমন জারি করার এরূপ কাউকে না পাওয়া গেলে বিবাদী সাধারণত যে গৃহে বসবাস করে বা ব্যবসা করে জারিকারক কর্মচারী সেই গৃহের দরজায় বা কোন প্রকাশ্য স্থানে সমন লটকায়ে জারি করা যাবে। এ ব্যাপারে গৃহ সনাক্তকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীর নাম ঠিকানা এবং সম্ভব হলে তার স্বাক্ষর মূল সমনের পৃষ্ঠায় নিয়ে জারিকারক একটি এফিডেভিট সম্বলিত বিবৃতি আদালতে জমা দিবে। একে বলা হয় সার্ভিস রিটার্ণ। ১৯৮৩ সালের সংশোধনী অনুযায়ী এই বিবৃতি আদালতে প্রমাণ রূপে ব্যবহার করা যাবে।
২. বিবাদীর অনুপস্থিতিতে প্রতিকল্পরূপ সমন জারি (Substituted service): ৫ আদেশের ২০ বিধিতে বলা হয়েছে যে, আদালত যেক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত কারণে বিশ্বাস করেন যে, বিবাদী সমন এড়ানোর জন্য আত্মগোপন করে থাকছে, অথবা অন্য কোন কারণে সমন জারি করা যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে আদালত বিবাদীর গৃহের বা যে গৃহে বিবাদী সর্বশেষ বসবাস করেছে অথবা ব্যবসা করেছে সেই গৃহের প্রকাশ্য অংশে সমনের একটি নকল লটকায়ে জারি করার জন্য আদালত নির্দেশ দিবেন। সাধারণত বাদীর খরচে বিবাদীর শেষ বাসস্থানে ঢাক-ঢোল পিটায়ে সমন জারি ঘোষণা করা হয়। আদালত ইচ্ছা করলে এভাবে প্রতিকল্প সমনজারির আদেশ না দিয়ে বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে।
৩. ডাকযোগে পত্র প্রেরণের মাধ্যমে সমন জারিঃ দেওয়ানী কার্যবিধির ৫ আদেশের ২১ থেকে ৩০ বিধি অনুযায়ী আদালত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিবাদীর বাসস্থানের আঞ্চলিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের নিকট কোন কর্মকর্তার মাধ্যমে অথবা ডাকযোগে বা কুরিয়ারের মাধ্যমে সমন জারি করতে পারেন। প্রাপক আদালত সমন জারির কাজ সম্পন্ন করে কার্যক্রম সম্পর্কিত দলিলপত্র সমাধানকারী আদালতের নিকট ফেরত পাঠাবেন। বিবাদী কারাগারে আটক থাকলে সেই কারাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট আদালত ডাকযোগে বা কুরিয়ারের মাধ্যমে সমন জারির আদেশ দিতে পারেন। বিবাদী যদি বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করে এবং বাংলাদেশে তার কোন ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি না থাকে তাহলে বিদেশের ঠিকানায় ডাকযোগে বা কুরিয়ারের মাধ্যমে সমন প্রেরণ করা যায়। এক্ষেত্রে বাদীর আবেদনে তার নিজ খরচে ফ্যাক্স অথবা ই-মেইল এর মাধ্যমে আদালত সমন জারির আদেশ দিতে পারেন। বিবাদী যদি সরকারি কর্মকর্তা হন বা রেল কর্মচারী হন বা স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কর্মচারী হন তাহলে আদালত উক্ত ব্যক্তির অফিসের প্রধান কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ আদেশ দিতে পারেন। বিবাদী যদি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত হন তাহলে নকল সহ সংশ্লিষ্ট আদেশ প্রদানকরী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবেন। সমন জারির জন্য কোন ব্যক্তির নিকট প্রেরন করা হলে উক্ত ব্যক্তি তা জারি করে সমন জারী কারক আদালতে ফেরত পাঠাতে বাধ্য থাকবেন।
0 মন্তব্যসমূহ