প্যাটেন্ট কী? প্যাটেন্ট আইনের উদ্দেশ্য কী? প্যাটেন্ট আইনের ঐতিহাসিক পটভূমি আলোচনা কর


প্রশ্নঃ প্যাটেন্ট কী? প্যাটেন্ট আইনের উদ্দেশ্য কী? প্যাটেন্ট আইনের ঐতিহাসিক পটভূমি আলোচনা কর। 

What is Patent? What are the objects of Patent law? Trace the Historical background of the Patent law.

প্যাটেন্টঃ ১৯১১ সালের প্যাটেন্ট ও ডিজাইন এ্যাক্টের ২ (১১) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘প্যাটেন্ট’ অর্থ অত্র আইনের বিধানাবলীল অধীন প্রদত্ত কোনো প্যাটেন্ট এবং যে ব্যক্তির নামে প্যাটেন্ট মঞ্জুর করা হয় তাকে Patentee বা প্যাটেন্টগ্রহীতা বলে।

কোনো ব্যক্তি একটি নতুন ও প্রয়োজনীয় বস্তু আবিষ্কার করলে কিংবা বিদ্যমান কোনো বস্তু বা প্রক্রিয়ার উন্নয়ন করলে তার স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার সেই ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি সনদ প্রদান করে যাকে প্যাটেন্ট বলে। সেই অর্থে প্যাটেন্ট হচ্ছে একটা ডকুমেন্ট বা দলিল যার বলে প্যাটেন্টগ্রহীতা একটা নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য উদ্ভাবিত বস্তু বা প্রক্রিয়ার ওপর একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করে। এ অর্থে প্যাটেন্ট হচ্ছে কোনো বস্তু বা প্রক্রিয়ার ওপর একচ্ছত্র অধিকার। এটি সংবিধিবদ্ধ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বিধায় এর প্রয়োগ অঞ্চলভিত্তিক। তাই এক দেশে মঞ্জুরকৃত প্যাটেন্ট অন্য কোনো দেশে প্রয়োগ করা যাবে না। অবশ্য যেদেশে আবার নতুন করে প্যাটেন্ট নিতে হবে তাহলে সেখানে তা বলবৎ করা যাবে।

প্যাটেন্ট আইনের উদ্দেশ্যঃ নতুন আবিষ্কারে একচেটিয়া অধিকার প্রদানের উদ্দেশ্যে আইনী সুরক্ষা প্রদানের নিমিত্তে প্যাটেন্ট আইন করা হয়। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই প্যাটেন্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এরূপ আইনী সুরক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্য মোটামুটি নিম্নরূপ-

১. এটি গবেষণা ও আবিষ্কারের উৎসাহ প্রদান করে; 
২. ব্যবসায়িক গোপনীয় বিষয় হিসেবে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অর্থের বিনিময়ে আবিষ্কারককে আবিষ্কারের তথ্য অন্যের নিকট প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে; 
৩. আবিষ্কারটি বাণিজিক্যভাবে বাজারজাত করার নিমিত্তে বিনিয়োগকৃত অর্থ উদ্ধার করার সুযোগ প্রদান করে; 
৪. বিত্তবানদের অর্থ নতুন নতুন আবিষ্কারে বিনিয়োগ করতে প্রেরণা যোগায়। 
৫. নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে সমাজে উন্নয়ন সাধিত হয়। তাই এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার প্রয়োজন। প্রতিযোগীদের এক্ষেত্রে প্রেরণা যোগাবে ভবিষ্যৎ আর্থিক লাভের সম্ভাবনার ওপর। অর্থ বিনিয়োগকারীর এ সম্ভাবনা আকৃষ্ট করবে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তে যখন প্যাটেন্টকৃত বস্তুটি জনগণের সম্পদে পরিণত হবে তখন এ সকল বিনিয়োগকারীগণ সর্বচেয়ে বেশি লাভবান হবে।

প্যাটেন্ট আইনের ঐতিহাসিক পটভূমিঃ প্যাটেন্টের ধারণা বেশ প্রাচীনকালের এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে এর বিকাশ লাভ করে। রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় প্যাটেন্ট পদ্ধতির সূচনা ঘটে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি এদেশে ব্যাপক হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক মেলা বসত এবং নতুন নতুন যন্ত্রের উদ্ভাবন এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার উন্নত প্রযুক্তি এ সকল মেলায় প্রদর্শিত হতো। কোনো নতুন ও আকর্ষণীয় বস্তুর বেশ কেনাবেচা হতো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই এগুলো নকল করে বাজারজাত করা হতো। ফলে প্রথম উদ্ভাবক বা আবিষ্কারের কৃতিত্ব ম্লান হয়ে যেত এবং অনেক ক্ষেত্রেই তাকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে চতুর্দশ শতকে ইংল্যান্ডের রাজা কর্তৃক বিশেষ সংরক্ষণ অধিকার প্রদান করা হতো যার ওপর ভিত্তি করে আবিষ্কারকগণ তাদের উদ্ভাবিত বা আমদানিকৃত নতুন প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে শিল্পকারখানা স্থাপন করত। এ অধিকারের ফলে তারা তাদের প্রযুক্তি একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারত এবং অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে পারত। উদ্ভাবক বা আবিষ্কারকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ অধিকার দেওয়া হতো। পরবর্তীতে এরই ধারাবাহিকতায় "The Statute of Monopolie" প্রণীত হয় এবং ক্রমে ক্রমে আধুনিক প্যাটেন্ট পদ্ধতির প্রচলন হয়। ১৮৮৩ সালে The Statute of Monopolies, Patents, Design and Trade Marks Act এবং ১৯০৭ সালে Patents and Designs Act প্রণীত হয়। এ সকল আইনের নীতিগুলোর ভিত্তি করে ভারতীয় উপমহাদেশে Patents and Designs Act 1911 প্রণীত হয়। সেই আইনটি পাকিস্তানি আমলে প্রচলিত ছিল এবং বর্তমানে বাংলাদেশেও প্রচলিত আছে। ২০০১ সালে এ আইনটিকে আরও উন্নত ও যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারণ তা আজও বাস্তবায়িত হয় নি৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক