দস্যুতা ও ডাকাতির মধ্যে পার্থক্য কি?


প্রশ্নঃ সংজ্ঞা দাও ও পার্থক্য নির্ণয় করঃ দস্যুতা ও ডাকাতি। 

দস্যুতা ও ডাকাতির মধ্যে পার্থক্যঃ দণ্ডবিধির ৩৯০ ধারায় দস্যুতার সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, সকল প্রকার দস্যুতায় হয় চুরি কিংবা বলপূর্বক গ্রহণ জড়িত আছে।

যদি চুরি করার উদ্দেশ্যে বা চুরি করার ফলে কিংবা চুরির সাহায্যে প্রাপ্ত সম্পত্তি বহন বা বহনের উদ্যোগকালে অপরাধকারী তদুদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায় বা তাকে আঘাত করে বা তাকে অবৈধভাবে আটক করে বা করার উদ্যোগ নেয় কিংবা তাকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু বা তাৎক্ষণিক আঘাত বা তাৎক্ষণিক অবৈধ আটকের ভীতি প্রদর্শন করে বা করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে উক্ত চুরি দস্যুতা বলে গণ্য হবে।

যদি বলপূর্বক গ্রহণকালে অপরাধকারী ভীতি প্রদর্শিত ব্যক্তির সম্মুখে উপস্থিত থাকে এবং ঐ ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু বা তাৎক্ষণিক আঘাত বা তাৎক্ষণিক অবৈধ অবরোধের ভীতি প্রদর্শন করে বলপূর্বক গৃহীত বস্তু সমপর্ণ করতে বাধ্য করে তাহলে বলপূর্বক গ্রহণ দস্যুতা বলে গণ্য হবে।

এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, অপরাধকারী অপর ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু বা তাৎক্ষণিক আঘাত বা তাৎক্ষণিক অবৈধ অবরোধের জন্য যথেষ্ট নিকটবর্তী হলে সে উপস্থিত রয়েছে বলে গণ্য হবে।

উদাহরণঃ 
১. ক, খ এর হাত ধরে এবং সঙ্গোপনে তার পকেট হতে টাকার ব্যাগটি খ এর সম্মতি ব্যতিরেকে উঠায়ে নেয়। এক্ষেত্রে ক চুরির অপরাধ করে এবং সেই অপরাধ করতে গিয়ে যেহেতু স্বেচ্ছায় তার হাত ধরে আটকিয়ে রাখে সেহেতু এর সাথে দস্যুতাও করে।

২. ক, খ কে রাস্তায় দেখে তার সামনে পিস্তল উচায়ে টাকা দাবী করে। খ এতে ভীত হয়ে তার টাকার ব্যাগটি ক এর হাতে তুলে দেয়। এক্ষেত্রে ক খ এর নিকট হতে তাৎক্ষণিক আঘাতের ভয় দেখায়ে বলপূর্বক টাকার ব্যাগটি নিয়েছে, এই অপরাধের সাথে সে দস্যুতাও করেছে।

ডাকাতিঃ দণ্ডবিধির ৩৯১ ধারায় ডাকাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি মিলিতভাবে কোন দস্যুতা সংঘটিত করে বা করার উদ্যোগ নেয় কিংবা যেক্ষেত্রে মিলিতভাবে দস্যুতাকারী বা দস্যুতার উদ্যোগকারী ব্যক্তিগণের এবং উপস্থিত ও অনুরূপ দস্যুতা অনুষ্ঠানে বা এর উদ্যোগে সাহায্যকারী ব্যক্তিগণের মোট সংখ্যা পাঁচ বা ততোধিক হয় সেক্ষেত্রে অনুরূপ অনুষ্ঠানকারী, উদ্যোগকারী বা সাহায্যকারী প্রত্যেক ব্যক্তি ডাকাতি করে বলে গণ্য হবে।

দস্যুতা ও ডাকাতির মধ্যে পার্থক্যঃ দস্যুতা ও ডাকাতির মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য বিদ্যমান-

১. সংখ্যাগতঃ দস্যুতার ক্ষেত্রে অপরাধীর সংখ্যা পাঁচ জনের কম থাকে। একজন থাকলেও তা যথেষ্ট। ডাকাতির ক্ষেত্রে অপরাধীর সংখ্যা পাঁচ বা ততোধিক থাকে৷

২. উপাদানগতঃ চুরির সাথে দস্যুতার ক্ষেত্রে (ক) সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিটি অস্থাবর ছিল, (খ) ঐ সম্পত্তিটি বাদীর দখলে ছিল, (গ) অপরাধকারী অসৎ অভিপ্রায়ে এ সম্পত্তিটি অপসারণ করেছিল, (ঘ) বাদীর অনুমতি ব্যতিরেকেই এরূপ অপসারণ করেছিল, ঙ. অবৈধভাবে লাভ করার জন্যই অপরাধী তা করেছিল।

বলপ্রয়োগের সাথে দস্যুতার ক্ষেত্রেঃ (ক) অভিযুক্ত ব্যক্তি তাৎক্ষনিকভাবে বাদীকে আঘাতের ভয় বা মৃত্যুর ভয় দেখায়ে বা অবৈধ আটকের ভয় দেখায়েছিল। (খ) অভিযুক্ত ব্যক্তি তখন বাদীর সম্মুখে ছিল। (গ) অপরাধকারী স্বেচ্ছাকৃতভাবে বাদীর উপর বলপ্রয়োগ করেছিল, (ঘ) আসামী বাদীকে অসাধুভাবে সম্পত্তিটি প্রদানে বাধ্য করেছিল।

ডাকাতির ক্ষেত্রেঃ (ক) পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি যৌথভাবে অপরাধটি সংঘটিত করেছিল, (খ) উক্ত দলের এক বা একাধিক ব্যক্তি দস্যুতা করেছিল বা করার চেষ্টা করেছিল। (গ) ডাকাতদলের সদস্যরা উপস্থিত ছিল এবং এ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছিল।

৩. দণ্ডগতঃ দস্যুতার ক্ষেত্রে ডাকাতির চেয়ে শাস্তি তুলনামূলক লঘু হয়। দণ্ডবিধির ৩৯২ ধারা মতে দস্যুতার ক্ষেত্রে আসামীর ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড সহ অর্থদণ্ড হতে পারে। অপরদিকে ৩৯৫ ধারা অনুসারে অর্থদণ্ডসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু ডাকাতিকালে কারো মৃত্যু ঘটালে ৩৯৬ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক