প্রশ্নঃ অপরাধ প্রমাণে সাক্ষ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তরঃ বিচারপতি বেস্টের মতে, দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতে সাক্ষ্যের নিয়মাবলী মোটামুটি অভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে উভয়ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হচ্ছে নালিশী ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করা এবং নিরূপিত ঘটনার উপর আইন প্রয়োগ করা। সাক্ষ্য আইনের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করা হয় । বিচারপতি বেস্টের মতে, যদি সাক্ষ্যের নিয়মাবলী সত্য উদঘাটনের পন্থা নির্দেশ করে তবে তা সকল দেশে ও সকল ক্ষেত্রে একই হবে এবং প্রকৃতপক্ষে তা একই রয়েছে।
দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মামলায়ই সাক্ষ্য আইনের বিধানসমূহ একইভাবে প্রযোজ্য হয় । তবে সাক্ষ্য আইনের কিছু বিধান রয়েছে যেগুলি শুধু ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিছু শুধু দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অন্যান্যগুলি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ২৪ হতে ৩০ ধারা স্বীকারোক্তি, ৫৩ ও ৫৪ ধারায় চরিত্র সম্পর্কিত, ১৫৫(৪) ধারায় শ্লীলতাহানির অভিযোগকারিণীর পূর্ব চরিত্র সম্পর্কিত বিধানসমূহ শুধু ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অপরদিকে স্বীকৃতি সম্পর্কিত ১৮ হতে ২০ ধারা, প্রতিবন্ধ সম্পর্কিত ১১৫ হতে ১১৭ ধারার বিধান শুধু দেওয়ানী মামলায় প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
প্রমাণের মাত্রা সম্পর্কে লর্ড ডেনিং মন্তব্য করেন যে, আমাদের দেশে ফৌজদারী মামলায় প্রমাণের মাত্রা দেওয়ানী মামলার চেয়ে অধিক প্রয়োজন হয় যদিও কোন ক্ষেত্রে এই মাত্রার কোন চূড়ান্ত মাপকাঠি নেই। ফৌজদারী মামলায় সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। দেওয়ানী মামলায় সম্ভাবনার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়।
সাক্ষ্যের ফলাফলও উভয় ক্ষেত্রে এক নয়। সম্ভাব্যতার উপর গুরুত্ব দিয়ে দেওয়ানী মামলার রায় দেয়া যায় কিন্তু ফৌজদারী মামলায় তা হয় না। বিপরীত প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিরপরাধ ধরে নেয়া হয় যা দেওয়ানী মামলায় করা হয় না। সন্দেহাতীত-ভাবে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে সন্দেহের অবকাশে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাস দেয়া হয়, কিন্তু সন্দেহের অবকাশে বিবাদীকে দেওয়ানী মামলায় অব্যাহতি দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
তাই দেখা যায় যে, সন্দেহতীতভাবে কোনো অপরাধ প্রমাণিত না হলে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। কেননা এটা স্বীকৃত নীতি যে, একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার চেয়ে দশজন অপরাধীকে ছেড়ে দেওয়া শ্রেয়। সাক্ষ্যের মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণিত হয় বিধায় সাক্ষ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
0 মন্তব্যসমূহ