প্রশ্নঃ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কিভাবে গঠিত হয়? রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য এটি কি কৌশল অবলম্বন করে?
ভূমিকাঃ মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের সাথে অন্য কোন সৃষ্টির তুলনা হয় না। সকল ধর্মগ্রন্থেই মানুষকে সকল সৃষ্টির সেরা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সেই মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সমাজে বা রাষ্ট্রে যেমন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তেমনি দেশের বাইরে অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এ.আই) কিভাবে গঠিত হয় : এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠা হয় মূলত: খবরের কাগজে বৃটিশ এক আইনজীবীর লিখিত প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে। উক্ত আইনজীবীর নাম পিটার বেনেনসন এবং এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে৷
পিটার বেনেনসন সকলকে আহ্বান জানান নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে তারা যেন বিবেকবন্দীদের মুক্তির জন্য কাজ করে। এক মাসের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পাঠান।
বর্তমানে এটি সারা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। ১৫০টির ও বেশি দেশে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১১ লক্ষের বেশি। এছাড়া আন্তর্জাতিক সচিবালয় নিবন্ধিত ৪,৩৪৯টি এ.আই গ্রুপ রয়েছে। বিভিন্ন মহাদেশের ৮০টি বেশি দেশে কয়েক হাজার স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, পেশাজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত দল রয়েছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য এই দলগুলি নিজের দেশ নয় বরং অন্য দেশে মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে প্রচারকার্য পরিচালনা করে। সদস্যদের আর্থিক সহায়তা ও অনুদানের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়। এই সংস্থা কোন সরকারের তহবিল গ্রহণ করে না।
আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এ.আই) এর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। যেমনঃ দি কাউন্সিল অব ইউরোপ, ইউনাইটেড ন্যাশন্স ইকোনোমিক এণ্ড সোশ্যাল কাউন্সিল, দি অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেট, দি অর্গানাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটি, দি ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন, ইউনাইটেড ন্যাশন্স এডুকেশন সাইন্টিফিক এণ্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন ইত্যাদি।
রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য এটি কি কৌশল অবলম্বন করেঃ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এ.আই) কৌশল অবলম্বন করে কিনা তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
মানবাধিকার ঘোষণায় মানুষের বিভিন্ন সুবিধার বিষয় উল্লেখিত হয়েছে। এই সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে বা অন্যায়ভাবে কোন নেতা বা কর্মীকে গ্রেফতার করলে বা হয়রানি করলে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এ.আই) তার মুক্তির জন্য কাজ করে। এক্ষেত্রে প্রথমে উক্ত ব্যক্তির মুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এই ধরনের অন্যায় কাজের জন্য সরকারের সমালোচনা করা হয় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রভাব খাটানো হয়।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এ.আই) প্রতিবছর বাৎসরিক রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে মূলত: সমাজের অবনতিশীল মানবাধিকার স্থান পায়। এছাড়া রাজনৈতিক মুক্তির জন্য এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (এ.আই) বিভিন্ন ক্যাম্পেইন বা বিষয়ভিত্তিক কর্মসূচি পালন করে।
উহসংহারঃ জন্মগতভাবে মানুষ অনেকগুলি অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ মানুষ পৃথিবীতে আসার আগেই অধিকার তৈরি থাকে। আবার জন্মের পরও অনেকগুলি অধিকার লাভ করে। এগুলি আইন দ্বারা সমর্থিত। এগুলিকে হরণ করা যায় না। কেউ এসে হস্তক্ষেপ করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
0 মন্তব্যসমূহ