প্রশ্নঃ মানবাধিকার আইনের বিকাশ মূল্যায়ন কর। বাংলাদেশ সংবিধানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের নীতিগুলির কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে?
ভূমিকাঃ মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের সাথে অন্য কোন সৃষ্টির তুলনা হয় না। সকল ধর্মগ্রন্থেই মানুষকে সকল সৃষ্টির সেরা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সেই মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সমাজে বা রাষ্ট্রে যেমন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তেমনি দেশের বাইরে অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷
মানবাধিকার আইনের বিকাশ মূল্যায়নঃ মানুষ যে অধিকারগুলি প্রাকৃতিকভাবে লাভ করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে যা স্বীকৃত তাকে মানবাধিকার বলে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকার বিষয়ক সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয় ১৯৪৮ সালে।এই ঘোষণাপত্রটি আইনগতভাবে বাধ্যকর কোন দলিল নয়। তবে মানবাধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মানবাধিকার ঘোষণায় মানুষের বিভিন্ন সুবিধার বিষয় উল্লেখিত হয়েছে। যেমনঃ মতপ্রকাশ, ধর্মবিশ্বাস, সম্পত্তি অর্জন, চলাফেরা, ন্যায়বিচার, বিবাহ, জাতীয়তা, সরকারি বিভিন্ন সুবিধা, বাসস্থান, রাজনৈতিক আশ্রয় ইত্যাদি।
উক্ত ঘোষণায় মানবাধিকারের একটি আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণ করা হয়েছে। উক্ত মান অনুযায়ী মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রসমূহকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
এই ঘোষণার কার্যকরী শক্তি কম হলেও গুরুত্ব অনেক। এটি সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচার লাভ করেছে। যার ফলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী জনমত গঠন হয়েছে।
১৯৫৬ সালে ৪৩ সদস্য বিশিষ্ট মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে। এই কমিশন মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করে এবং প্রয়োজনীয় খসড়া তৈরি করে।
বাংলাদেশ সংবিধানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের নীতিগুলির কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছেঃ
বাংলাদেশের সংবিধানে দেশের নাগরিকদের জন্য যেমন বিভিন্ন অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের নাগরিক নয় এমন ব্যক্তিদের জন্যও বিভিন্ন অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ থেকে ৪৪ পর্যন্ত মোট ১৮টি মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে- বেশ কিছু বিধান মানবাধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমনঃ
আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান : আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই সমানভাবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। [অনুচ্ছেদ-২৭]
ধর্ম, বর্ণের কারণে বৈষম্যহীনতা : ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ বা জন্মস্থানের কারণে রাষ্ট্র কারো প্রতি বৈষম্য আচরণ করবে না। নারী-পুরুষে সমান অধিকার লাভ করবে। [অনুচ্ছেদ- ২৮]
জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা : আইন অনুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। [অনুচ্ছেদ- ৩২]
গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ : কেউ গ্রেফতার হলে যথাশীঘ্র তাকে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে এবং তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। [অনুচ্ছেদ- ৩৩]
বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ : অপরাধের দায়যুক্ত কোন কাজ না করলে কাউকে দোষী করা যাবে না। একই অপরাধের জন্য একাধিকবার বিচার করা যাবে না। কাউকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। কাউকে নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর শাস্তি দেওয়া যাবে না । [অনুচ্ছেদ- ৩৫]
উপরোক্ত বিধানগুলি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত।
উহসংহারঃ জন্মগতভাবে মানুষ অনেকগুলি অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ মানুষ পৃথিবীতে আসার আগেই অধিকার তৈরি থাকে। আবার জন্মের পরও অনেকগুলি অধিকার লাভ করে। এগুলি আইন দ্বারা সমর্থিত। এগুলিকে হরণ করা যায় না। কেউ এসে হস্তক্ষেপ করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
0 মন্তব্যসমূহ