অথবা, বুদ্ধিভিত্তিক উন্নয়নের বা পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যে বৈশিষ্ট্যের কারণে আমরা একজনকে আরেকজন থেকে আলাদা করতে পারি। এ সকল বৈশিষ্ট্যই সাধারণত ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে থাকে। তাই বলা যায়, সামাজিক পরিবেশে সামঞ্জস্য স্থাপনকারী আচরণসমূহের সমস্যাকেই আমরা ব্যক্তিত্ব বলি। পক্ষান্তরে সাধারণ লোকের কাছে ব্যক্তিত্ব হলো একজন মানুষের চিত্ত আকর্ষণ করার মতো গুণ। এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির মনে যে সামগ্রিক ছাপ অঙ্কিত করে, তাই হলো সে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব।
ব্যক্তিত্ব পরিমাপের পদ্ধতিসমূহঃ নিম্নে উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ
(১) গভীরতা বিশ্লেষণ পদ্ধতিঃ ফ্রয়েড এবং তার অনুগামীগণ ব্যক্তিত্ব পরিমাপের জন্য বিশেষ ধরনের এক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যাকে বলা হয় গভীরতা অনুশীলন। এ মত অনুযায়ি ব্যক্তিত্বের মূলে আছে অর্ধচেতন মন। এ অবচেতন মনকে পরিমাপ করার জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির প্রবর্তন করেছেন। যেমনঃ (ক) বিশেষ ধরনের সাক্ষাৎকার, (খ) স্বপ্ন বিশ্লেষণ ইত্যাদি।
(২) সামাজিক পরিস্থিতির অনুশীলনঃ এ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের প্রত্যক্ষ পরিমাপ করা যায় না। শুধু যে পরিবেশের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ হচ্ছে তা-ই অনুশীলন করা যায়। মনোবিজ্ঞানীগণ মনে করেন, ব্যক্তিত্বের বিকাশ অনেকাংশে সামাজিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। সামাজিক পরিবেশ অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করা যায়।
(৩) দৈহিক বিবরণঃ অনেক মনোবিজ্ঞানী দৈহিক গঠন ও বিকাশ পর্যবেক্ষণ করে ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করার প্রয়াস পেয়েছেন। বিভিন্নভাবে এ দৈহিক বৈশিষ্ট্য অনুশীলনের ভিত্তিতে ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত করার রীতি প্রচলিত আছে। যেমনঃ (ক) ব্যক্তিত্ব বংশগতি বিশ্লেষণ, (খ) মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন, (গ) দৈহিক কাঠামোর অনুশীলন ইত্যাদি।
(৪) কৃতি অভীক্ষাঃ এ পদ্ধতি অনুসারে ব্যক্তিকে কোনো কার্য সম্পাদনের নির্দেশ দেয়া হয়। কাজের মধ্যে ব্যক্তিত্বের কোনো সংলক্ষণ কি পরিমাপে আছে তা নির্ণয় করা হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে সততা, চেষ্টা, সহযোগিতা, সহানুভূতি ইত্যাদি জ্ঞান সম্পর্কে সতর্ক হওয়া যায়।
(৫) সাক্ষাৎকারঃ সাক্ষাৎকার ব্যক্তিত্ব পরিমাপের একটি প্রাচীনতম পদ্ধতি। তবে বর্তমানেও এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পদ্ধতি অনুসারে ব্যক্তির সাথে প্রত্যক্ষভাবে দেখা করে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের দ্বারা তার ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করা হয়। ব্যক্তির উপস্থিত বুদ্ধি, ভাব প্রকাশের ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে এ পদ্ধতির মাধ্যমে সতর্ক হওয়া যায়।
(৬) প্রতিফলন অভীক্ষাঃ প্রতিফলন অভীক্ষায় ব্যক্তির সামনে কতকগুলো সমস্যা পরোক্ষভাবে উপস্থাপনা করা হয় এবং সেগুলোর প্রতি প্রতিক্রিয়া করতে বলা হয়। এর ফলে ব্যক্তির প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে তার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
(৭) ব্যক্তিত্ব প্রশ্নমালাঃ ব্যক্তিত্ব পরিমাপের একটি শক্তিশালী মাধ্যমে হলো ব্যক্তিত্ব প্রশ্নমালা। এ অভীক্ষার সাহায্যে ব্যক্তিত্বের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গুণাবলির মূল্যায়ন করা সম্ভবপর হয়। এসব প্রশ্নমালায় ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন থাকে। এ প্রশ্নগুলো বিশেষভাবে ব্যক্তিগত প্রকৃতির। ব্যক্তিকে এ ধরনের একটি ছাপানো প্রশ্নমালা দিয়ে তার উত্তর করতে বলা হয়। ফলে এ ধরনের অভীক্ষায় তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সে অনেক তথ্য নিঃসংকোচে প্রকাশ করতে পারে। ব্যক্তিত্ব প্রশ্নমালার মধ্যে মিনেসোটা বহুমুখী ব্যক্তিত্ব প্রশ্নমালা সাইকোলজিক্যাল ইনভেনটরি প্রশ্নমালা যোজলে ব্যক্তিত্ব প্রশ্নমালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
(৮) প্রক্ষেপণমূলক অভীক্ষাঃ এ অভীক্ষায় ব্যক্তির সামনে কতকগুলো অস্পষ্ট বা অসংগঠিত উদ্দীপক উপস্থাপনা করে তাকে এর প্রতি প্রতিক্রিয়া করতে বলা হয়। এ প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নিরূপণ করা হয়। প্রক্ষেপণমূলক অভীক্ষার দুটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, এটি ব্যক্তিত্বের সমগ্র বিষয়ের পরিমাপ করে থাকে। দ্বিতীয়ত এতে ব্যক্তিকে আত্মপ্রকাশের জন্য প্রণোদিত করা হয়।
(৯) রেটিং স্কেলঃ বর্তমানে ব্যক্তিত্ব পরিমাপের জন্য সংখ্যামান সংবলিত রেটিং স্কেল বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের স্কেলে কোনো বিশেষ সংলক্ষণকে পরিমাণগত দিক থেকে তিনটি অথবা পাঁচটি বিন্দুতে একই অবিচ্ছিন্ন মাপনীতে স্থাপন করা হয়। এ স্কেলে ব্যক্তি নিজে বা অপর কোনো পরীক্ষক তার বিশেষ একটি সংলক্ষণের পরিমাণ নির্দেশ করেন। স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসে রেটিং স্কেলের ব্যবহার দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের রেটিং স্কেল রয়েছে। যেমনঃ (ক) সংখ্যাভিত্তিক রেটিং স্কেল, (খ) রৈখিক রেটিং স্কেল, (গ) ক্রমিক রেটিং স্কেল ইত্যাদি।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, ওপরে বর্ণিত এসব অভীক্ষা বা পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে সার্থকতা লাভ করতে সমর্থ হয়নি। তবে ব্যক্তিত্ব পরিমাপের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তবে সাধারণত একটি পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করলে যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায়।
0 মন্তব্যসমূহ