Accounting Cycle
উত্তরঃ দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক একটি ধারাবাহিক ও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় হিসাববিজ্ঞান কার্যাদি সম্পন্ন করতে হয়। লেনদেন সনাক্তকরণের মাধ্যমে হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়া শুরু হয় যা লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণিবদ্ধকরণ, সংক্ষিপ্তকরণ, আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ ও এদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা শেষ হয়। প্রতিটি হিসাবকালে এ কার্যক্রমগুলো চক্রাকারে সম্পন্ন হয়ে থাকে। হিসাববিজ্ঞান কার্যাবলির এধরনের ক্রমানুগতিক ঘূর্ণায়মান বা চক্রাকার আবর্তনকে বলা হয় হিসাবচক্র।
হিসাবচক্রের বিভিন্ন ধাপ বা পর্যায়সমূহঃ হিসাবচক্র হলো মূলত একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ কার্যাবলির পর্যায়ক্রমিক প্রকাশ। বিভিন্ন হিসাববিজ্ঞানী হিসাবচক্রকে বিভিন্ন ধাপে ব্যাখ্যা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত হিসাববিজ্ঞানী Kieso & Weygandt-তাদের Accounting Principles বইতে হিসাবচক্রের দশটি ধাপ ব্যাখ্যা করেছেন। নিম্নে একটি চিত্রের সাহায্যে হিসাবচক্রের ধাপগুলো উপস্থাপন করা হলো-
চিত্রঃ হিসাবচক্র |
১. লেনদেন চিহ্নিতকরণ (Identification of Transaction): হিসাবচক্রের সর্বপ্রথম ধাপ হলো লেনদেন চিহ্নিতকরণ। যেসব ঘটনা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় তাকে আর্থিক ঘটনা বা লেনেদেন বলে। এ কারবার প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ঘটনা থেকে আর্থিক ঘটনাগুলো সনাক্ত করা হিসাব চক্রের প্রথম ধাপ।
২. জাবেদাভুক্তকরণ (Journalization): হিসাবচক্রের দ্বিতীয় ধাপ হলো জাবেদাভুক্তকরণ। এ পর্যায়ে প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করে তারিখের ক্রমানুসারে ব্যাখ্যাসহ হিসাবের প্রাথমিক বইতে লিপিবদ্ধ করাকে জাবেদা বলে।
৩. খতিয়ানভুক্তকরণ (Posting to Ledger): এটি হিসাবচক্রের তৃতীয় ধাপ। জাবেদাভুক্ত করার পর একটি নির্দিষ্ট হিসাব বইতে সমজাতীয় লেনদেনগুলো নির্দিষ্ট শিরোনামে পৃথক পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করা হলে তাকে খতিয়ানভুক্তকরণ বলে।
৪. রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ (Preparation of Trial Balance): হিসাবচক্রের চতুর্থ ধাপ হলো রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ। এ পর্যায়ে খতিয়ানভুক্ত হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট উদ্বৃত্ত নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হলে তাকে রেওয়ামিল বলে। খতিয়ান হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই-এর লক্ষ্যে এবং আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন সহজতর করার জন্য রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়।
৫. সমন্বয় দাখিলা (Adjusted Entries): রেওয়ামিল প্রস্তুতের পর একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের সঠিক নিট লাভ নির্ণয় করার জন্য বকেয়া ও অগ্রিম আয়-ব্যয়গুলো সমন্বয় করতে যে জাবেদা দাখিলা প্রদান করা হয় তাকে সমন্বয় জাবেদা বলে।
কার্যপত্র (Work Sheet)- ঐচ্ছিক: সমন্বয় দাখিলার পর অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যপত্র প্রস্তুত করে থাকে। কার্যপত্র হলো একটি বড় বিবরণী যে বিবরণীতে রেওয়ামিল, সমন্বয়, সমন্বিত রেওয়ামিল, আয় বিবরণী ও উদ্বর্তপত্র থাকে। আর্থিক বিবরণী সহজ ও নির্ভুলভাবে প্রস্তুতের জন্য এটি প্রস্তুত করে থাকে। আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের লক্ষ্যে যে খসড়া বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাকে কার্যপত্র বলে।
৬. সমন্বিত রেওয়ামিল (Adjusted Trial Balance): সমন্বয় জাবেদার পর উক্ত জাবেদাগুলো আবার খতিয়ানের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করা হলে হিসাবগুলোর নতুন যে জের পাওয়া যাবে তা নিয়ে আবার রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হলে তাকে সমন্বিত রেওয়ামিল বলে।
৭. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ (Preparation of Financial position): হিসাবচক্রের সপ্তম ধাপ হলো আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ। একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের আর্থিক ফলাফল ও হিসাবকাল শেষে আর্থিক অবস্থা প্রদর্শনের জন্য আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
৮. সমাপনী দাখিলা (Closing Entries): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সমস্ত হিসাবগুলোকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা: আয়-ব্যয় সংক্রান্ত হিসাব এবং সম্পত্তি ও দায় সংক্রান্ত হিসাব। আয়-ব্যয় ও উত্তোলনের হিসাবগুলোর উপযোগিতা সংশ্লিষ্ট হিসাবকালের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বিধায় এগুলোকে পরবর্তী হিসাবকালে স্থানান্তরের প্রয়োজন হয় না। তাই আয়, ব্যয় ও উত্তোলন সংক্রান্ত হিসাবগুলো বন্ধ করার জন্য যে জাবেদা দাখিলা প্রদান করা হয় তাকে সমাপনী জাবেদা বলে।
৯. সমাপনী উত্তর রেওয়ামিল (Post Closing Trail Balance): হিসাবচক্রের নবম ধাপ হলো সমাপনীউত্তর রেওয়ামিল। সমাপনী দাখিলা প্রদানের পর তা আবার খতিয়ানস্থ হিসাবসমূহে স্থানান্তর করলে আয়-ব্যয় ও উত্তোলনগুলোর জের শূন্য হয়। আর অবশিষ্ট থাকে সম্পত্তি, দায় ও মূলধনের জের। এগুলোর জের নিয়ে নতুন করে আবার রেওয়ামিল প্রস্তুত করলে তাকে সমাপনী উত্তর রেওয়ামিল বলে।
১০. বিপরীত দাখিলা (Reversing Entries): এটা হিসাবচক্রের শেষ ধাপ। বকেয়া আয়-ব্যয়ের সমন্বয় জাবেদাগুলো পরবর্তী হিসাবকালের শুরুতে উল্টিয়ে জাবেদা প্রদান করাকে বিপরীত জাবেদা বলে। আয় ও ব্যয়কে দুবার গণনা থেকে রেহাই পাওয়ায় জন্য ও কার্যকরভাবে লেনদেন লিপিবদ্ধ করার জন্য এ জাবেদা দাখিলা প্রদান করে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ