উত্তরঃ হিসাববিজ্ঞান একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান। সঠিকভাবে হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে উপকৃত হয় এবং বহুবিধ সুবিধা ভোগ করে থাকে। নিম্নে হিসাববিজ্ঞানের সুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো। কোনো নির্দিষ্ট সময় পরে ব্যবসায়ী হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে তার কারবারের লাভ-ক্ষতি হিসাব প্রস্তুত করে ব্যবসায়ের লাভ অথবা ক্ষতি নির্ণয় করতে পারে। কারবারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আদালতে মামলা দায়ের করা হলে এ মামলায় একমাত্র সুষ্ঠুভাবে রক্ষিত হিসাবের খাতাপত্রই বিচারকের নিকট প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বা যেকোনো সময় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সর্বাঙ্গীণ আর্থিক অবস্থা অর্থাৎ মোট মূলধন, মোট দেনা, মোট পাওনা, মোট সম্পত্তি ও হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ইত্যাদি জানা যায়।
হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়ার সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহের সম্পূর্ণ ও স্থায়ী দলিল হিসেবে বইতে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়। এতে করে ভবিষ্যতে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রয়োজনে হিসাবের বই দেখে লেনদেন সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক তথ্য জানা যায়। বাজেটীয় নিয়ন্ত্রণ ও মান ব্যয় হিসাবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হিসাববিজ্ঞান সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। কারবার প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পত্তি বিক্রয়ের প্রশ্ন উঠলে সঠিকভাবে রাখা হিসাব বইয়ের ভিত্তিতে উপযুক্ত বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যথাযথ নিয়মে হিসাব রাখলে রেওয়ামিল ক্সতরির মাধ্যমে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায় এবং বিভিন্ন রকম চুরি ও জালিয়াতি প্রতিরোধ করা যায়। সঠিক ও সুশৃঙ্খলভাবে হিসাব রাখলে বর্তমান হিসাবকালের লাভ বা ক্ষতি এবং সম্পত্তি ও দায়-দেনার সাথে পূর্ববর্তী বছরের অনুরূপ বিষয়ের তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করা যায়, যা ভবিষ্যৎ নীতি-নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবসায়ীকে সাহায্য করে থাকে। সুষ্ঠু ও দায়িত্বপূর্ণ হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সঠিক বিক্রয় কর, আবগারি শুল্ক ও আয়কর নির্ধারণে হিসাববিজ্ঞান সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
সঠিকভাবে হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে কারবারের আয়-ব্যয় নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজ হয়। লাভজনক ও অলাভজনক আয়-ব্যয় চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। সঠিক নিয়মে হিসাব রাখলে ঋণ গ্রহণের সুবিধা হয়। ঋণদাতা হিসাব সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করে থাকে। সঠিক পদ্ধতিতে হিসাব রাখলে আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্যতার মাধ্যমে কারবার প্রতিষ্ঠানের সার্বিক-উন্নতি করা সম্ভব হয়। কারবার প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে। কারবারের লেনদেনগুলোর সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠু হিসাব থাকলে এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস পায়।
হিসাববিজ্ঞান ভ্যাট সংক্রান্ত লেনদেনগুলোর সুষ্ঠু হিসাবরক্ষণ ও ভ্যাট নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে। সুষ্ঠুভাবে হিসাব সংরক্ষণ করলে সম্পত্তি ও দায়-দেনার সঠিক অবস্থা জানা যায়। ফলে ব্যবসায়ী সম্পত্তি ও দায়-দেনা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। হিসাবের মাধ্যমে বকেয়া দেনা-পাওনার বিবরণী প্রস্তুত করে যথাসময়ে দেনা পরিশোধ ও পাওনা আদায় করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। হিসাব প্রতিবেদন, বাজেট, আয়-ব্যয় বিবরণী ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদানে হিসাববিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হিসাববিজ্ঞানের উপর্যুক্ত সুবিধাগুলোর জন্য বর্তমানে ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানে হিসাব রাখা একটি অপরিহার্য কাজ হিসেবে পরিগণিত।
0 মন্তব্যসমূহ