প্রকৃত এবং অনুমানমূলক নোটিশের মধ্যে পার্থক্য দেখাও


প্রশ্নঃ প্রকৃত এবং অনুমানমূলক নোটিশের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। 

Distinguish between actual and constructive notice. 

উত্তরঃ 

অনুমানমূলক বা আনুমানিক নোটিশ (Constructive Notice): প্রাপ্ত-গণ্য নোটিশ বলতে সেই ধরনের নোটিশকে বুঝায় যা প্রাপক সরাসরি না পেলেও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পেয়েছেন বলে ধরা হয়। ইকুইটি হতে এর উৎপত্তি এবং অনুমানের উপর এটা নির্ভরশীল স্বাভাবিক অবস্থায় কোন ঘটনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জানা বলে অনুমান করা হলে তা তিনি অবহিত আছেন বলা যায়। নিম্নলিখিত অবস্থায় এরূপ নোটিশের উদ্ভব ঘটেঃ

(ক) অনুসন্ধান বা তদন্ত থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত থাকা; (খ) গুরুতর অবহেলা; (গ) প্রকৃত দখলে থাকা; (ঘ) প্রতিনিধির উপর নোটিশ জারি;

কোন অনুসন্ধানের সময় স্বাভাবিকভাবে যতটুকু অনুসন্ধান করা দরকার কেউ ততটুকু না করলে মনে করা হয় যে, তিনি অনুসন্ধান ও তদন্ত থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত থেকেছেন এবং এক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয় যে, তিনি নোটিশ পেয়েছেন।

গুরুতর অবহেলার কারণে যদি কেউ আদান-প্রদান সম্পর্কে কোন তথ্য না জেনে থাকেন তবে তার এ অবহেলার জন্য ধরে নেয়া হয় যে, তিনি নোটিশ পেয়েছেন। সম্পত্তি কারো দখলে থাকলে ক্রেতার পক্ষে তা খোঁজ-খবর নেয়া আবশ্যকীয়। এরূপ খোঁজ খবর নিতে ব্যর্থ হলে অবহেলার জন্য সে দায়ী হবে।

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগত পার্থক্য ছাড়াও প্রকৃত নোটিশ ও অনুমানমূলক নোটিশের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য বিদ্যমানঃ

প্রকৃত নোটিশের ক্ষেত্রে প্রাপককে প্রকৃতপক্ষে অবগত করা হয় বিধায় এটাকে কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু অনুমানমূলক নোটিশের ক্ষেত্রে প্রাপকের অবগতিতে কোন কিছু আনা হয় না বটে কিন্তু ঘটনাক্রমে তা প্রাপকের অবগতিতে রয়েছে বলে গণ্য করা হয়। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় এবং জটিলতার সৃষ্টি হয়।

অনুমানমূলক নোটিশের ক্ষেত্রে প্রাপকের অবহেলা বিবেচনা করা হয় এবং সাধারণ প্রচেষ্টা দ্বারা যা সম্ভব কিংবা একটি অনুসন্ধান করলে বা খোঁজ খবর নিলে যা সহজেই জানা যায় তা প্রাপক জানে বলে ধরে নেয়া হয়। প্ৰকৃত নোটিশের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন প্রশ্ন উঠে না।

৩নং ধারার ১নং ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন স্থাবর সম্পত্তির দলিল বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রি করার বিধান থাকে এবং তা যদি রেজিস্ট্রি করা হয় তাহলে রেজিস্ট্রেশনের তারিখ হতে পরবর্তী হস্তান্তর গ্রহীতার জন্য উক্ত দলিলের নোটিশ হিসেবে গণ্য করা হবে। উক্ত হস্তান্তর সম্পর্কে সে জানতো না বলে দাবী করলে তাকেই তা সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় ধরে নেয়া হবে যে, সেটা সে জানতো। ইহা হোচেনাছি শেখ বনাম ইসমাইল সিকদার [৯ ডি. এল. আর. (১৯৫৭) ১২৯৪] মামলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এই ধারার ২ নং ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন লোক যে কোন স্থাবর সম্পত্তির প্রকৃত দখলে থাকে এবং অন্য কোন ব্যক্তি যদি উক্ত সম্পত্তি লাভ করে বা উক্ত সম্পত্তিতে কোন অংশ বা স্বার্থ লাভ করে তবে এটা ধরে নেয়া হবে যে উক্ত দখলকারীর উক্ত সম্পত্তিতে কোন স্বত্ব থেকে থাকলে উক্ত স্বত্ব থাকা সম্পর্কে উক্ত অংশ বা স্বাৰ্থ লাভকারীর অবগতি আছে যা অনুমানমূলক নোটিশ।

৩নং ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন প্রতিনিধি মালিকের পক্ষে ব্যবসায়ে কার্যরত থাকে এবং উক্ত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ঐরূপ কার্যরূপ অবস্থায় ব্যবসায়ের সহিত সংশ্লিষ্ট কোন ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়, তবে এটা ধরে নেয়া হবে যে, উক্ত ঘটনা সম্পর্কে সেই মালিকের অবগতি নোটিশ ছিল। কাজেই ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কার্যরত অবস্থার কোন ঘটনা যদি প্রতিনিধিকে অবগত করানো হয় এবং তা যদি সে প্রতারণামূলকভাবে মালিকের নিকট গোপন না রাখে, তাহলে সেই অবগতি মালিকের অবগতি বলে ধরে নেয়া হবে।

এ ধরনের ব্যাখ্যা শুধু অনুমানমূলক নোটিশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধায় প্রকৃত নোটিশের ক্ষেত্রে কোনরূপ ব্যাখ্যা সন্নিবেশিত করা হয় নি৷

প্রকৃত ও অনুমানমূলক নোটিশের মধ্যে পার্থক্যঃ

প্রকৃত নোটিশ বা প্রকাশ্য নোটিশ বলতে এমন এক নোটিশকে বুঝায় যা প্রকাশ্যভাবে প্রাপককে প্রদত্ত হয়। প্রকাশ্য নোটিশ প্রদানের ব্যাপারে দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাপকের জন্য প্রাসঙ্গিক সকল বিষয়ের তথ্য এতে থাকতে হবে। তাই সম্পত্তি কেনা- বেচার আগে মূল্য আদান-প্রদানের আগেই সম্পত্তি সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিক্রেতা ক্রেতাকে জানাবেন।

৪র্থ পরিচ্ছেদের অধীনে নোটিশ জারীঃ

৪র্থ পরিচ্ছেদের ১০২ ও ১০৩ ধারায় যথাক্রমে প্রতিনিধির উপর এবং চুক্তি সম্পাদনে অযোগ্য ব্যক্তির উপর - নোটিশ জারী সম্পর্কে বিধান রয়েছে।

১০২ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তির উপর নোটিশ জারী করতে হবে বা যাকে কোন অর্থ অর্পণ করতে হবে সেই ব্যক্তি রেহেন সম্পত্তি বা এর অংশ যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলায় যদি বসবাস না করে তবে তার আমমোক্তার বা অন্যভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির উপর এরূপ নোটিশ জারী বা অর্থ অর্পণ করা হলে উক্ত জারী বা অর্পণ যথেষ্ট বলে গণ্য করা হবে।

এই ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তির উপর নোটিশ জারী করতে হবে তাকে বা তার প্রতিনিধিকে না পাওয়া গেলে বা সে নোটিশ জারীকারকের অপরিচিত হলে উক্ত নোটিশ জারীকরণ যে আদালতে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির রেহেনমুক্তির মামলা করা যেতে পারে সেই আদালতে দরখাস্ত দাখিল করতে হবে। অত:পর উক্ত আদালত উক্ত নোটিশ জারীর পন্থা সম্পর্কে নির্দেশ দিবেন। সে মোতাবেক নোটিশ জারী করা হলে তা যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে।

শর্ত থাকে যে, ৮৩ ধারা অনুসারে অর্থ জমা দেয়া সম্পর্কে নোটিশ দিতে হলে যে আদালতে উক্ত অর্থ জমা দেয়া হয়েছে, সেই আদালতে দরখাস্ত দাখিল করতে হবে।

যখন কোন ব্যক্তি অর্থ অর্পণ করতে ইচ্ছুক কিন্তু অর্থ গ্রহণকারী বা তার প্রতিনিধিকে খুঁজে পাওয়া যায় না বা অর্পণকারী তাকে চিনে না তখন সেই আদালতে সে অর্থ জমা দিবে যে আদালতে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির রেহেন মুক্তির জন্য মামলা করা যেতে পারে। এভাবে জমা দেয়া হলে তা যথাযথভাবে অর্পণ করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক